প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ২৪, ২০২৫, ৫:৩২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারি ৪, ২০২০, ৩:১০ অপরাহ্ণ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কমছে তামাক চাষ : বাড়ছে কৃষি উদ্যোক্তা
এস. এম. সরোয়ার পারভেজ : ১৭৮ বর্গমাইল আয়তনের মধ্যবিত্ত জনপদে বসবাস প্রায় ১০ লাখ লোকের। নদী মাতৃক উপজেলায় চর-ডাঙ্গা মিলে নদী আর কৃষির সাথে জীবিকা জাড়িয়ে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। নাসির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান-কারখানা সহ কুষ্টিয়ার এই দৌলতপুর উপজেলায় আছে বায়েজিদ অটো রাইস মিল, রকেট ম্যাচ,টু স্টার ম্যাচ সহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা। আছে বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর তামাক ক্রয়ের অফিসও,কেননা সারাদেশের যে ৮০% তামাক বৃহত্তর কুষ্টিয়ার ফসলের ক্ষেতগুলোতে চাষ হয় তার অন্যতম অংশ চাষ হয় সীমান্তের এই উপজেলা দৌলতপুরে। আয়তন পার্শ্ববর্তী জেলা মেহেরপুরের তুলনাতেও বড় হওয়ায়, দৌলতপুর উপজেলা ভূ-অর্থনৈতিক দিক থেকে বৈচিত্র্যময়। তামাক চাষের লাভ-ক্ষতি নিয়ে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার সামাজিক ও আইনি কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও এ অঞ্চলের কৃষকেরা পিছিয়ে আছে তামাক মুক্ত হতে।
কুষ্টিয়ার এই উপজেলা দৌলতপুরে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট তামাক উৎপাদিত হয়েছে ৯ হাজার ৩শ' হেক্টর জমিতে। পরের বছর নেমে আসে ৫ হাজার ৯শ' ৫০ হেক্টরে। গতবছর দৌলতপুরে সাড়ে চার হাজার হেক্টরের মতো হলেও এবছর কৃষকেরা কম চাষ করছেন ৬শ' হেক্টর কম জমিতে। কারন বিকল্প হিসাবে কৃষকেরা সাহস করেছেন তরমুজ,সূর্যমুখী, অসময়ের বিশেষ তরমুজ এবং ফলজ চাষ করতে তামাকের বিকল্প হিসাবে। প্রায় পৌনে দুই শ' বিঘা তামাকের জমিতে বিকল্প ফসল হিসাবে কৃষি উদ্যোক্তারা এবছর বিকল্প এসব চাষ শুরু করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসের যোগানো সাহস, উৎসাহ আর সহযোগিতায়। কৃষকেরা পাচ্ছেন সার এবং উন্নত,কৃষি উপযোগী বীজ সহযোগিতা।
উপজেলার আদাবাড়িয়া, হোগলবাড়িয়া,পিয়ারপুর,আড়িয়া, ফিলিপনগর, মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলী জমিতে হারের পাশাপাশি দৌলতপুরের বিভিন্ন ফসলের মাঠে তামাক চাষ চলতি মৌসুম শীতের এক নিয়মিত অনুষঙ্গ। এবছর প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে তামাকের বিকল্প তরমুজ চাষ হয়েছে এবছর। এই মৌসুমেই এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। মথুরাপুর,দৌলতপুর, ফিলিপনগর, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসল ক্ষেতে প্রায় ৪০ বিঘা সূর্যমুখী চাষ হয়েছে এবছর। যদিও একসময় এ অঞ্চলে সূর্যমুখী চাষ ছিলো ব্যাপক ভাবে। ভালো বীজ সঙ্কটে চাষ বন্ধ হয়ে আসে প্রায়। তামাকের চাষ মৌসুমে বিকল্প হিসাবে জমিকে দুই ফসলে ব্যবহার করার সুযোগ হিসাবে প্রথমে আলু,তারপর তরমুজ ও শশা চাষে নেয়া কৃষি অফিসের উদ্যোগে এবছর সাড়া দিয়েছে ৫০ বিঘার চাষি।
বৃহত্তর কুষ্টিয়া যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় থাকা ৩১ উপজেলার দৌলতপুর একটি, একথা জানিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুজ্জামান বলেন-- আমি বছর দেড়েক কাজ করছি এই উপজেলায়, তামাকের বিকল্প হিসাবে অন্য ফসল চাষ এবং সেই চাষ থেকে অন্তত দ্বিগুণ আয় করার বিষয়ে আমি খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে ৫-৬ বছরে এই উপজেলায় তামাক চাষ সন্তোষজনক ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব।
তবে তামাকের বিকল্প ও লাভ জনক ফসল তরমুজ চাষে এখানকার কৃষি উদ্যোক্তাদের যদি আমরা আরও বেশি প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে পারি তাহলে কৃষি উন্নয়ন আরও বেগবান হবে বলেও জানান কামরুজ্জামান। প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে আরওা গুরুত্বের বিষয়ে আগ্রহ জানান তিনি।
যদিও বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড সংশ্লিষ্ট সমীক্ষা বলছে এবছর প্রায় ৪০ ভাগ কমেছে তামাক চাষ। তবে কৃষি অফিসের তথ্যে কমে আসার হার অতটা না , গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে অল্প সময়েই দৌলতপুরের ফসলের মাঠ হবে আরও অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ এবং তামাকের যন্ত্রণা মুক্ত।
১৪টি ইউনিয়নের ৪টি চরাঞ্চল কে বিশেষ সম্ভাবনাময় বলে জানাচ্ছে দৌলতপুর কৃষি অফিস।
Copyright © 2025 দৈনিক সাতনদী. All rights reserved.