কুরবানী মুসলমানদের বিশেষ ইবাদত। সারা বিশ্বে প্রতিবছর মুসলমানগন এই ইবাদাত উৎসবের সঙ্গে পালন করে। মুসলমানদের প্রতিটি ইবাদত এর পিছনে রয়েছে বিশেষ শিক্ষা ও লক্ষ্য, তাই আমরা প্রত্যেকটা ইবাদতের আধ্যাত্বিক মহত্ব গুরুত্ব অনুধাবন করে পালন করব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তা'আলা বলেন, আপনার পালনকর্তার জন্য নামাজ পড়–ন এবং কুরবানী করুন (সূরা কাওসার) এ আয়াতের মধ্যে ছল্লি শব্দটি আমর এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। রাসূল সাঃ বলেন কুরবানীর সামর্থ্য থাকা সত্তে¦ও যে কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (বাদায়া ৫৬২) এ ধরনের ধমক একমাত্র ওয়াজিবের জন্য ব্যবহার হয়। তাই হানাফী মাযহাবের সহি-শুদ্ধ ফতোয়া হল শর্ত পাওয়া গেলে কুরবানী করা ওয়াজিব।
কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত গুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
(১) স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ গোলাম না হওয়া (২) মুসলমান হওয়া (৩) মুকিম হওয়া অর্থাৎ স্থানীয় অধিবাসী হওয়া কারণ মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয় না (৪) বালেগ হওয়া (৫) ধনী হওয়া অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ তথা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা কিংবা এর সমমূল্য কোন মালের মালিক হওয়া। এবং তাও হাজাতে আসলিয়া বাদ দিয়ে এই পরিমাণ মালের মালিক থাকলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। আর উল্লেখিত শর্ত সমূহের মধ্যে থেকে যদি কোন একটি শর্ত পাওয়া না যায় তাহলে কুরবানী ওয়াজিব হবে না। (হেদায়া ৪/৪২৭)
কোরবানির দিন সমূহ:
জিলহজের ১০ তারিখ তথা ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময়ে কোরবানি করা যায়। তবে ১০ তারিখে কুরবানী করা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩ ১৬ ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/২ ৯৫)
কুরবানীর পশুর বর্ণনা:
মাসালাঃ- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্য কোন পশু যেমন হরিণ বন্য গরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। (কাজী খান ৩/৩ ৪৮ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)
মাসালাঃ -যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয তার নর মাদা সবই কুরবানী করা যায়। (ফতোয়ায়ে কাজী খান ৩/৩ ৪৮)
মাসালাঃ- কুরবানীর পশুর বয়স উট কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু মহিষ কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। ছাগল ভেড়া দুম্বা কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এক বছরের কিছু কম হয়, অথচ এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে দেখতে এক বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়স হতে হবে। ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে কোন অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ হবে না। (ফতোয়ায়ে কাজী খান ৩/৩ ৪৮ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)
শরিকানা কুরবানি:
মাসালাঃ- বকরি, ভেড়া, দুম্বা তে একভাগে এবং ওর গরু-মহিষে সর্বোচ্চ সাত ভাগে। এবং সাতের কমে যে কোন সংখ্যায় কুরবানী করা জায়েয। (সহিমুসলিম ১৩১৮ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)
মাসালাঃ- যার সমস্ত উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম, তাকে শরিক করে কুরবানী করলে অন্য সকল শরিকদের কুরবানী শুদ্ধ হবে না। (কেফায়াতুল মুফতি ৮/১৯০)
মাসালাঃ- কুরবানীর পশুতে আকিকার নিয়ত শরিক হওয়া বৈধ। আকিকার গোশত কুরবানীর গোশত নাই সকলে খেতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬)
কুরবানীর মাংশ সংক্রান্ত মাসায়েল:
মাসআলাঃ- কুরবানীদাতার জন্য নিজ কোরবানির পশুর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। (মুসনাদে আহমদ হাদিস ৯০৭৮ ইলাউস সুনান ১৭/২৬৭) মাসালাঃ- কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব। একভাগ নিজের জন্য এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের জন্য আরেক ভাগ গরিবদের জন্য। কোন ব্যক্তি প্রয়োজনে পণ্য গোশত নিজের জন্য রেখে দিলেও তাতে কোন অসুবিধা নেই। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩০০ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২ ২৪)
মাসালাঃ- মান্নতের কুরবানীর গোশত মান্নতকারীও ধনী ব্যক্তিদের জন্য খাওয়া নাজায়েজ। খেয়ে ফেললে যে পরিমান খাওয়া হয়েছে তার মূল্য সাদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার ৬৩২৭ ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/২৯৫)
মাসালাঃ- কুরবানীর গোশত ও চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা নাজায়েয, এবং কুরবানীর ক্ষেত্রে সহায়তাকারীদের কেউ তা বিনিময় হিসেবে প্রদান করা নাজায়েজ। (দুররুল মুখতার ৬৩২৮ কাজী খান ৩/৩৫৪)
মাসালাঃ- কুরবানীর গোশত অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকেউ দেওয়া জায়েজ। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩০১ বিশেষ)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
-মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদ, খতিব, রিয়াজুল জান্নাহ জামে মসজিদ উত্তরা, ঢাকা।