তালা অফিস থেকে নজরুল ইসলামঃ তালা উপজেলা সদরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন ব্রিটিশ হটাও আন্দোলনের সাক্ষী ঐতিহাসিক “দরবার স্তম্ভ” টি মাথা উঁচিয়ে জানান দিচ্ছে ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে ,স্তম্ভটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ব্রিটিশ হটাও আন্দোলনের সাক্ষী “দরবার স্তম্ভ” প্রাচীন এ স্তম্ভটির নিচের দিকে ২ দশমিক ৮ মিটার বেড়, ক্রমশ সরু হয়ে ওপরের দিকে উঠেছে ৩ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতায়। এটি পুরোপুরি ইটের তৈরি গোল স্তম্ভটির মাথার ওপর একটি বড় কলসের আকৃতি, তার ওপর আরেকটি ছোট কলসের আকৃতির চিহ্ন অনুমান করা যায়। ব্রিটিশ হটাও আন্দোলনের সময়কার বয়ে যাওয়া স্মৃতি নিয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দরবার স্তম্ভটি। উপজেলার বিভিন্ন সংগঠন ১৯৯৫ সালের পর থেকে এই স্তম্ভটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।আর তার ফলশ্রুতিতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন গ্রন্থ ও ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশ যখন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ঠিক সে সময় ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা বাংলাকে ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত করে, যা বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। ১৯১১ সাল পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে বাংলার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করা হয়। আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর এই ঘোষণার আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়নের জন্য সম্রাট জর্জ দিল্লিতে বৈঠকে বসেন। সম্রাটের এই আগমন উপলক্ষ্যে ও ঐতিহাসিক এই বিজয় উদযাপন করতে তালা উপজেলায় দরবার স্তম্ভটি তৈরি করেন তৎকালীন রাজনীতিবিদ রাজকুমার বসু। সেই আন্দোলনের সাক্ষী “দরবার স্তম্ভ” মাথা উঁচিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে তার অতীত ইতিহাস। স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আন্দোলন-সংগ্রামের অজস্র গল্প।
কবি সিকান্দার আবু জাফর সড়কের পাশে নির্মিত দরবার স্তয়টি এক সময় ঢেকে পড়েছিল অবৈধ স্থাপনায়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় বেরিয়ে আসে স্তম্ভের মাথা। এরপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। তবে দরবার স্তম্ভের সেই লাল ইটের চিহ্ন আজ অনেকটাই বিলিনের পথে। এছাড়া স্তম্ভের আশপাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট।
স্থানীয় বাসিন্দা কয়েক জন ব্যবসায়ীরা বলেন,আমরা এখানে এসেছি ১৯৮৪ সালের দিকে। তখন থেকে দেখছি গায়ে লেখা আছে দরবার স্তম্ভ। তারা পূর্বপুরুষের কাজ থেকে শুনেছেন, ইংরেজ আমলে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনের সময় এখান থেকে আলোচনা ও পরিকল্পনা করা হতো কীভাবে ইংরেজ হটানো যায়। এই স্তম্ভের পাশে একসময় দরবার মেলা বসতো বলে অনেকেই জানান। অনেকেই আবার বলেন, রাজারা এখানে দাঁড়িয়ে খাজনা আদায় করতেন। এদিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্তম্ভটি সংরক্ষণ করে এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন বলে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে।