মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম থেকে: নতুন বাঁধার সম্মুখিন হয়েছে কালুরঘাট নতুন সেতু নির্মাণ প্রকল্প। সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিআইডবিøউটি। রেলওয়ের প‚র্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন ভাষ্যমতে বিআইডব্লিউটিএ নেভিগেশন চ্যানেল ১২.২ মিটার ক্লিয়ার চাচ্ছে। কিন্তু কালুরঘাটে বর্তমান সেতুর উচ্চতা ৪.২ মিটার। তা যদি আরো ৮ মিটার উচু করা হয় তাহলে নতুন সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে না!
মেরামতে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মসহ ইজারাদার সমস্যা ভুগতে থাকা সেতুটি বেশ কয়েকদিন যাবৎ ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে তোড়জোড় চলছে রেলওয়ে পূর্বঞ্চলে। সেতুটি নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত দ্যা ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফাÐ (ইডিসিএফ) এর সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয় রেলওয়ের। অর্থসংস্থান থেকে প্রায় সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে। তবে এরমধ্যে সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিআইডব্লিউটিএ। নেভিগেশন চ্যানেল ঠিক রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ সেতুর যে উচ্চতা রাখার কথা বলছে, তাতে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বিআইডব্লিউটিএ সেতুর উচ্চতা নিয়ে অহেতুক জটিলতা করছে। নদীর ওই অংশটিতে তেমন কোনো জাহাজ চলাচল নেই। নেভিগেশন চ্যানেল রক্ষার নামে এই ধরনের জটিলতা তৈরি পুরো প্রকল্পটিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। কমিটি সরজমিনে বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। আমরা বিআইডব্লিউটিএর সাথে বৈঠক করেছি। আলাপ আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু উনারা নেভিগেশন চ্যানেল ১২.২ মিটার ক্লিয়ার চাচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আরো বৈঠক করব। আলাপ আলোচনা করব। একটি সুষ্ঠু এবং সুন্দর সমাধানে আসতে পারব। সেতুর উচ্চতা একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে সেতুর উচ্চতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজে কোনো অগ্রগতি হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা করব। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বহু ঝড় হয়েছে। কিন্তু কালুরঘাট ব্রিজ পার হয়ে কোনো জাহাজ অবস্থান নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। ভবিষ্যতেও কোনো জাহাজকে সেতু পার হয়ে যেতে হবে কিনা তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছুই উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা বলেন, অচিরেই আমরা সুন্দর একটি সমাধানে পৌঁছতে পারব।
প্রসঙ্গত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সেনা চলাচলের জন্য কর্ণফুলী নদীর উপর সেতু নির্মাণের তীব্র প্রয়োজন দেখা দেয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০ সালে ব্রুনিক এন্ড কোম্পানির ব্রিজ কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স–হাওড়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করে। শুধুমাত্র ট্রেন চলাচলের জন্য ৬৩৮ দশমিক ৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এই সেতু নির্মাণে নদীতে ছয়টি ব্রিক পিলার, ১২টি স্টিল পিলার, দুটি এ্যাবটমেন্ট ও ১৯টি স্প্যান দেয়া হয়। ১৯৩০ সালের ৪ জুন সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। এটি ম‚লত রেলসেতু হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্যদের ব্যবহৃত মোটরযান ও যুদ্ধযান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে এসে সেতুটিতে সব ধরনের যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের ব্যবহারের পর ২০০১ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটিকে ঝুঁকিপ‚র্ণ ঘোষণা করে। তারপরেও একাধিকবার সংস্কারের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে গত ১৯ বছর ধরে সেতুটিতে ট্রেন ও যান চলাচল করছে। এছাড়া একমুখী যান চলাচল করায় সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন। রেল কাম সড়কসেতু হওয়া রেল চলাচলের সময়ও সেতুটি পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়। এতে বোয়ালখালী শহরের কাছের উপজেলা হলেও এখানকার মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিগন্যালে আটকা পড়ে থাকতে হয়।