হাফিজুর রহমান :- পারিবারিক কলহের জের ধরে পৃথক দুটি ঘটনায় রেখা পারভীন নামে অষ্টম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রীর বিষপানে ও আঞ্জুয়ারা নামে এক নববধু গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিয়ে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য, অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার রাত ১১টার সময় এবং রবিবার বেলা ১০টার সময় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে। প্রথম ঘটনায় নিহত স্কুল ছাত্রী উপজেলা বসন্তপুর গ্রামের জুলফিকার আলী মোল্যা ওরফে ভুট্টোর কন্যা। উক্ত ঘটনায় নিহতের বাবা জুলফিকার আলী শ্যাম্পু খেয়ে আত্মহত্যার সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সকাল ১০টার সময় থানার উপ-পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম তার বাড়ী হতে কন্যার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। এ ব্যাপারে থানায় শনিবার একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-২৯। নিহত স্কুল ছাত্রীর বাবা জুলফিকার আলী জানান, তার কন্যা কিছুদিন যাবৎ মানসিক সমস্যায় ভুগছিলো। গত ২৭ জুন সে আত্মহত্যার জন্য শ্যাম্পু পান করে। সেই থেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে আমরা স্থানীয় ভাবে প্রথমে গ্রাম্য ডাক্তারদ্বারা চিকিৎসা করিয়ে অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে নলতা নামক স্থানে রাত ১১টার সময় মৃত্যুবরণ করে। সেখান থেকে লাশ বাড়ীতে নিয়ে আসলে পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে বসন্তপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল সালাম ও এলাকাবাসী আকবর আলী, রফিকুল ইসলাম, শাহিনুর সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, নিহত স্কুল ছাত্রীর বাবা জুলফিকার আলী ওরফে ভুট্টোর তিনটি বিয়ে। বড় বউকে নিয়ে বর্তমান ঘর সংসার করছে। নিহত স্কুল ছাত্রী রেখা তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। বছর দুয়েক আগে রেখার মা পরকীয়ায় জড়িয়ে অন্য জনের সাথে বিয়ে করে বর্তমান সৌদি প্রবাস জীবন যাপন করছে। রেখা বাবা এবং সৎ মার সঙ্গে থেকে অষ্টম শ্রেনীতে লেখাপড়া করা অবস্থায় প্রেমজ সম্পর্কে জড়িয়ে দেবহাটা থানার নাংলা গ্রামের শান্ত নামক এক বখাটের সঙ্গে বিয়ে করে। বাবা মেনে না নেওয়ায় মাস খানেক আগে ছাড়াছাড়ির হওয়ার পর থেকে রেখা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। এ নিয়ে রেখার সঙ্গে বাবা এবং সৎ মায়ের কলোহের জের ধরে ২৭ জুন বাড়ীতে রাখা কীটনাশক পান করে রেখা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। প্রথমে গ্রাম্য ডাক্তার দেখিয়ে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার নাম করে দেবহাটা এক কবিরাজের বাড়ীতে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে রাতে লাশ বাড়ীতে এনে তড়িঘড়ি করে দাফনের খবর পেয়ে থানা হতে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। অন্য পৃথক ঘটনার ঘটনাটি পারিবারিক কলহের জের ধরে রবিবার ১০টার সময় বসন্তপুর গ্রামের সাইদুল ইসলামের সদ্য নব-বিবাহিত স্ত্রী আঞ্জুয়ারা (১৮) ঘরের আড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মাস খানেক আগে তাদের বিয়ে হয়। নিহত গৃহবধু আঞ্জুয়ারা শ্যামনগর থানার কৈখালী গ্রামের আনোয়ার সরদারের কন্যা। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের দাবী বিয়ের পর হতে নতুন জামাই সহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন ব্যবসার নামে মোটা অংকের টাকা যৌতুক চেয়ে আসছিলো। অন্যদিকে স্বামী সাইদুল ইসলাম জানান তার স্ত্রী মানসিক ভাবে অসুস্থ্য থাকায় কাউকে না জানিয়ে রবিবার সকাল আনুমানিক ১০টার সময় ঘরের আড়ায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে থানার উপ-পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এব্যাপারে থানায় রবিবার আরো একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে, মামলা নং-৩০। এ ব্যাপারে থানার উপ-পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম সাতনদীকে জানান, যেহেতু দুটি ঘটনার পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে, সে কারনে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ গোলাম মোস্তফা সাতনদীকে জানান, ঘটনা দুটি বিতর্কিত মনে হওয়ায় লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।