হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ থেকে:
২০১৪ সাল হতে অদ্যবধি মাদ্রাসায় না এসে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সাত বছর চাকরি করে যাচ্ছেন। অথচ অত্র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একাধিক সহিংস মামলার আসামি আব্দুল কাদের হেলালির সহযোগিতায় প্রতিমাসে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকেও বেতন ভাতা উত্তোলন করে গেলেও দেখার কেউ নেই। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। সাংবাদিকরা বিষয়টি জেনে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে গত ১ জানুয়ারি ওই শিক্ষক বাহারুল চাকরি হতে অব্যাহতি চেয়ে অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন করেছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দারুল উলুম চৌমুহনী ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে আসছে।
এ ব্যাপারে অত্র মাদ্রাসার দাতা সদস্য আবু তালেব সরদার বাদী হয়ে গত ২১ ডিসেম্বর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বসিলা ঢাকা, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবর পৃথক পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ হাতে পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম ও অত্র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
লিখিত অভিযোগ এবং অত্র মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি নুরুল হক সরদার অভিভাবক আশিক ইকবাল অত্র মাদ্রাসার শিক্ষক আমজাদ হোসেন, মনিরুজ্জামান, মিজানুর রহমান, নুরুল আমিন, জি এম শফিকুল ইসলাম, মনসুর আলী, আবু বক্কর সিদ্দিক, আব্দুস সবুর সহ অভিবাবকরা সাংবাদিকদের জানান, ২০১৩ সালে ১৭ডিসেম্বর বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সভাপতি ও মানবাধিকারকর্মী মোসলেম উদ্দিন কে চৌমুহনী বাজারে ফেলে প্রকাশ্য দিবালোকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যাকারী সহ একাধিক মামলার আসামি অত্র মাদ্রাসার এবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক বাহারুল ইসলাম এর (ইন্ডেক্স নাম্বার পি আর ০১৬৬৮৭৬) বিরুদ্ধে থানায় মামলা হওয়ার পর হতে পলাতক থাকায় ওই মাদ্রাসা হতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় হাজির হয়নি।
অথচ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের হেলালির সহযোগিতায় প্রতিমাসে হাজিরা খাতায় ভুয়া স্বাক্ষর করে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছে। মাদ্রাসার আহবায়ক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে অবগত না করে তার এবং সভাপতির যৌথ স্বাক্ষর করে প্রতিমাসে বেতন ভাতা দিয়ে যাচ্ছে অধ্যাপক। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সাতক্ষীরার আমতলা নামক স্থানে আফতাব এগ্রো ফুড কোম্পানিতে বছরের পর বছর বহাল তবিয়তে চাকরি করে দুই স্থানে থেকে বেতন উঠাচ্ছে।
এ সংক্রান্ত বিষয় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা সাংবাদিকদের নিকট হতে জানতে পেরে বিপদ বুঝতে পেরে গত ৩১/১২/২০২১ ইংরেজি তারিখে প্রথম দফায় পদত্যাগপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে গত ১/১/২০২২ ইংরেজি তারিখে তার অব্যাহতি পত্র টি অধ্যক্ষের সঙ্গে শলা-পরামর্শ সেটা গ্রহণ করে। যাতে করে চাকরি না করেও দীর্ঘ সাত বছরের বেতন ভাতার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে না হয়। এ ব্যাপারে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য শিক্ষক বাহারুল এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও আফতাব এগ্রো ফুড কোম্পানিতে চাকরি করার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এবং তিনি আরও বলেন আমি বাড়িতে গেলে হাজিরা খাতায় সই করে আসি অধ্যক্ষ আমার বেতন জমা করে দেয় পরে আমি চেক দিয়ে বেতন উত্তোলন করে নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি সাংবাদিকদের জানান অভিযোগ হাতে পেয়ে আমি প্রথম পর্যায়ে ওই শিক্ষক এবং আবেদনকারীকে আমার অফিসে ডেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। পরবর্তীতে সরোজমিনে আমি বিষয়টি নিয়ে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলব তারপর রিপোর্ট প্রদান করব।