হাফিজুর রহমান:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে আবির মোল্লা ওরফে বাবু মোল্লা নাামের এক ব্যক্তিকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর লাশের গলায় ওড়না পেচিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উক্ত ঘটনায় সন্দেহ ভাজন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের নীলকণ্ঠপুর গ্রামের নূরুল মোড়লের মালিকানাধীন পুকুরপাড়ে একটি লেবু গাছে ওড়না দিয়ে গলায় পেচানো অবস্থায় পুলিশ বাবুর লাশ উদ্ধার করে।
বাবু মোলা কালিগঞ্জ উপজেলার নীলকণ্ঠপুর গ্রামের রহিম মোলার ছেলে। খবর পেয়ে বেলা ১১টার সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কালিগঞ্জ সার্কেলের দায়িত্ব প্রাপ্ত ইয়াছিন আলী নামক থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেন ও ওসি তদন্ত মিজানুর রহমান ঘটনা স্থলে যেয়ে লাশের সুরত হাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার মর্গে পাঠান। পরে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ এবং সি,আই,ডি পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যার মুল কারণ উৎঘাটনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
নীলকণ্ঠপুর গ্রামের রহিম মোলার স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন বলেন, তাদের গ্রামের শহীদ মোড়লের ছেলে ফারুক হোসেন গত বছরের অক্টোবর মাসে সাগরে মাছ ধরতে যেয়ে সুন্দরবনের চৌদ্দরশি লবনচোরা নামকস্থানে নৌকা থেকে পড়ে মারা যায়। ফারুকের এক ছেলে ও এক মেয়েসহ স্ত্রী সাবিনার সাথে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিয়ে হয় তার (হোসনে আরা) ছেলে বাবু মোলার (২৭)। বাবু তখন ইটভাটায় শ্রমিক সরদারের কাজ করতো। সাবিনাকে বিয়ে পর থেকে বাবু তার সৎ শ্যালক তিনটি হত্যা, একটি হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজিসহ সাতটি মামলার আসামী নুরুল মোড়লের সঙ্গে থাকতো। স¤প্রতি বাবুর আপন শ্যালক আরিফুল ইসলামের সঙ্গে তাদের সৎ ভাই নুরুল মোড়ল ও ভরুরের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। সোমবার ওই জমি নিয়ে মাপ জরিপও হয়। মাপ জরিপের সময় বাবু তার শ্যালক আরিফুলের পক্ষ নেয়।
মাপজরিপ চলাকালে দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর নুরুল মোড়ল তার মোটর সাইকেলে করে বাবুকে নিয়ে বিষ্ণুপুর বাজারে যায়। গভীর রাতে তারা বাড়ি ফেরে। সকালে প্রতিবেশি আবু সামাদ ও আব্দুল গফফার সেটে কাঁকড়া কিনতে যাওয়ার সময় বাবুর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে তাদেরকে জানায়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান থানায় যোগাযোগ করতে না পেরে ট্রিপল নাইনে ফোন দিলে উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করেন।
তিনি জানান, তার ছেলের ডান হাঁটুর উপরে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও দু’ পায়ের নখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। লেবু গাছে ঝোলানো বাবুর দু’ হাঁটু মাটির সঙ্গে লেগে ছিল। আশঙ্কা করা হচ্ছে মঙ্গলবার ভোরের দিকে তাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে গলায় ওড়না জড়িয়ে লেবু গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী বলেন, বাবুর ডান হাঁটু, দুু’ পায়ের নখসহ কয়েকটি স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর লাশ লেবু গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে নিহত আবির হোসেন ওরফে বাবু মোল্লার স্ত্রী সাবিনার পরিবারের সঙ্গে তার চাচাতো ভাই আশিকুর রহমানের দীর্ঘদিন ধরে জমি জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে দুটি পরিবার দুই নেতার ছত্রছায়ায় একে অপর কে ফাসানো সহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সামনে নির্বাচন সামনে রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য পরিকল্পিত ভাবে বাবু মোল্লা কে হত্যা করে প্রতি পক্ষকে ফাঁসাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এলাকার একাধিক সূত্র দাবী করছে তবে তদন্ত করলে মূল রহস্য উদঘটন হবে।
উক্ত ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। সর্বশেষ ঘটনা জানতে থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন এখনও থানায় কোন মামলা দায়ের হয়নি তবে মামলা প্রস্তুতি চলছে।