হাফিজুর রহমান: জন্ম ১৯৭৬ সালের ৫ ডিসেম্বর আর কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে অষ্টম শ্রেনী হতে নবম শ্রেনীতে উত্তীর্ন হয় এই মর্মে অত্র স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন গত ২৩/০৬/১৯৯৬ ইং তারিখে স্বাক্ষর দেওয়া ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেটে চাকুরী করে বেতনভাতা উত্তোলন করে আসছেন কালিগঞ্জ উপজেলার রুস্তম আলী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এম.এল.এস.এস (পিয়ন) ফজর আলী গাজী। অথচ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিম গাজীর চতুর্থ পুত্র ফজর আলী গাজী সম্পর্কে হোগলা গ্রামের সাইফুল, সিরাজ, রবিউল, আলম সহ একাধিক ব্যক্তি সাতনদীকে জানান ফজর আলী কোনোদিন কোনো স্কুলে যাননি বা কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হননি। চাকুরীর সুবাদে যেমনি ভাবে মোটা অংকের টাকায় সার্টিফিকেটে জন্ম তারিখ ০৫/১২/১৯৭৬ ইংরেজী সাল দেখানো হয়েছে অনুরূপ ভাবে ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে ফজর আলীর ছোটো ভাই রাশেদ গাজীর জন্ম তারিখ প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাওয়ায় সেখানে দেওয়া আছে ১৮/০২/১৯৬৯ সাল। তার অর্থ দাড়ায় ছোটো ভাই রাশেদ থেকে তার ন অর্থাৎ ফজর আলী ৭ বছরের ছোট। এটা কোনো সিনেমার গল্প না প্রকৃত সত্য ঘটনা তুলে ধরা হলো। এইভাবে জাল সনদে অত্র স্কুলে গত ১৯/১২/২০০৪ সালে ফজর আলী যোগদান করে এবং ২০১০ সালে স্কুল এমপিও ভুক্তির পর হতে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পিয়ন ফজর আলী ১০৫৭৬৫২ ইনডেক্স নাম্বারে নলতা রূপালী ব্যাংক শাখা হতে ২৯২৩০১১০১০৯৯১ নং হিসাবে বেতন ভাতা উত্তোলন করে ভোগ করে আসছেন। বিভিন্ন সময় স্কুলে নিরীক্ষণ ও অডিট বিভাগ তদন্ত করে ধরা পড়লেও বিষয়টি রহস্যজনক ভাবে পার পেয়ে যায়। ২০০১ সালে বিএনপি, জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে উপজেলার ভাড়াশিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় সহকারী শিক্ষক চাচাই গ্রামের মাওঃ আব্দুর রাজ্জাক তার মৃত বাবা রুস্তম আলীর নামে প্রথম রুস্তম আলী নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে মাধ্যমিক করা হয় যার ইনডেক্স নং-৬১০৪১৫১২০১ এবং ই.আই.আই.এন নাম্বার ১১৮৭৬৫। স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে অত্র স্কুলের পরিচালনা পর্ষাদের সভাপতি হিসাবে সহকারী শিক্ষক মাওঃ আব্দুর রাজ্জাক অদ্যবধি দায়িত্ব পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে স্কুলের সব শিক্ষক, কর্মচারী নিয়োগে সবার নিকট থেকে স্কুল প্রতিষ্ঠাতার নামে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহন করা হয়। পিয়ন ফজর আলীর বিষয়টি জানা জানি হয়ে গেলে পারুলগাছা গ্রামের মৃত রাশেদ ঢালীর পুত্র বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম বাদী হয়ে গত ০২/১১/২০২০ ইং তারিখে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অডিট ও আইন) শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব, মহা-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোর, চেয়ারম্যান দূর্নীতিদমন কমিশন ঢাকা, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষক বরাবর এক লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৩/১২/২০২০ তারিখে ৩৭,০০,০০০০,০৮৭,১১,০০২,১৮,১৮৪ নং স্মারকে কালিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব লিয়াকাত আলী স্বাক্ষরিত পত্রে কালিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশের প্রেক্ষিতে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ গত ৩১/১২/২০২০ ইং তারিখে রুস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন ফজর আলীকে শুধুমাত্র স্কুলে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান এবং পরিচালনা পর্ষাদের সভাপতি মাওঃ আব্দুর রাজ্জাককে জানানো হয়নি বলে সাতনদীকে জানান। গত ৯ জানুয়ারী শনিবার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় এম.এল.এস.এস ফজর আলীর বিরুদ্ধে চুরি এবং সার্টিফিকেট জালিয়াতী সম্পর্কে কারন দর্শানোর নোটিশ দিলেও সে গ্রহন করেননি। তাকে নোটিশ দেওয়ায় উপজেলা পরিষদের এক শির্ষ জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে হুমকি দিয়ে বেশি বাড়া বাড়ি করতে নিষেধ করেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি সাতনদীকে জানান সে স্কুলে গিয়ে পিয়ন ফজর আলীর সাথে কথা বলেছে। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলে হবে এমন কোনো বাধ্য বাধকতা নাই। তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে না বললে তাৎক্ষনিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তার নিকট ফোন দিয়ে জানতে চাইলে তাকে তদন্ত রিপোর্ট লিখিত আকারে দাখিল করার নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে স্কুলের পরিচালনা পর্ষাদের সভাপতি মাওঃ আব্দুর রাজ্জাকের ব্যবহৃত ০১৭১৫-২১২১৯১ নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিয়েও বন্ধ পাওয়া যায়। প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান ওরফে তারেকের ব্যবহৃত ০১৭১২-৭৯৯২২০ নাম্বার মোবাইলে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমিতো নামমাত্র একজন পোষ্ট অফিসের মত। আমার কিছু করার বা বলার ক্ষমতা নাই। আমি এবং পিয়ন ফজর আলী একই তারিখে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অত্র বিদ্যালয়ে চাকুরী করে আসছি। আমাকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নির্দেশ ছাড়া কোনোকিছু করার ক্ষমতা নাই। এল.এম.এস.এস ফজর আলীর ব্যবহৃত ০১৭৯১-৬১১২০৬ নাম্বার মোবাইলে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আমি সার্টিফিকেট ঠিক করে এনেছি। কোথা থেকে ঠিক করেছেন এ প্রসঙ্গে বলেন আমি গত ৬ তারিখে সাতক্ষীরার বিজ্ঞ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে জন্ম তারিখ ঠিক করে এনেছি বলে জানান। তিনি কখনো কোনো স্কুল পাঠশালায় পড়েছেন বা ভর্তি হয়েছেন কি না এ প্রশ্ন করতেই তিনি ফোন কেটে দেন।