কালিগঞ্জ ব্যুরো: মুজিব শতবর্ষ পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গৃহীনদের গৃহ প্রদানের প্রকল্পকে পুজি করে চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দীনের নাম ভাঙিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন জুড়ে প্রায় ৪শতাধিক অসহায় পরিবারের নিকট হতে গৃহ দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও দেখার কেউ নাই। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ২নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন জুড়ে বিভিন্ন গ্রামে। এপ্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, আফছার সহ একাধিক ব্যক্তি ঘটনা স্বীকার করে সাতনদীকে বলেন চেয়ারম্যানের নাম করে কোমরপুর গ্রামের নিজামুদ্দীনের পুত্র সফিউল্লাহ, শ্রীধরকাটী গ্রামের শেখ রুহুল আমিনের পুত্র রাকিব হোসেন ছাড়াও ঐ প্রতারক চক্রের সদস্য লুইচ, সবুর, ফিরোজ, মিন্টু, খালেক, আলামিন, বাপ্পি সহ অন্যান্যরা বিভিন্ন গ্রামের লোকজনকে প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে পরিবার প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘর দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানকে জানালে প্রতারক চক্রটি এলাকা ছেড়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে আছে। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা শাহিনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেটা আর আলোর মুখ দেখেনি। চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি সাতনদীকে বলেন এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে সাংবাদিকরা আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি জেনেছি। পরে আমি খোজ নিয়ে জানতে পারি ঐ প্রতারক চক্রটি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। আমি কিছু লোকের টাকা ফেরত দিয়ে তাদের নিকট হতে লিখিত নিয়েছি। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম হতে প্রায় ৪শতাধিক পরিবারের নিকট হতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা লোপাট সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি, তবে তিনি অভিযোগকারী ৫ জনের টাকা ফেরত দিলেন কিভাবে এবং তিনি জানতে পেরেও এব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি কেন এ প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যার শেখ রিয়াজ উদ্দীন কোনো সদ উত্তর দিতে পারেনি। তিনি বলেন আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী বি.এন.পি, জামায়াত জোটের, পার্সপোট ও বি.আর.টি.এ অফিসের দালাল জাহাঙ্গীর আলম আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট রটনা রটাচ্ছে। চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনের এমন বক্তব্যের সঙ্গে সরজমিনে ঘুরে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে তার সত্যতা মেলেনি। সাংবাদিকরা এলাকায় গেলে টনক নড়ে চেয়ারম্যানের। তখন তিনি অভিযোগকারী ভুক্তভোড়ী শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত এজাহার মোল্লার স্ত্রী টুরি বিবির ৫ হাজার, জাহানারা বেগমকে ৫ হাজার, মাজেদ গাজীর স্ত্রী সালেহা বেগমকে ৫ হাজার, শওকত গাজীর স্ত্রী মুনজিলা বেগমকে ৫ হাজার এবং উদয় কর্মকারের স্ত্রী বাসন্তি কর্মকারকে ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে সাদা কাগজে সহি করিয়ে নেয় চেয়ারম্যান বলে জানান। বাকী দুই একজনের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিলেও আজো পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের টাকার কোনো হদিস নাই। এখন প্রশ্ন হলো ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাইনি। শস্যের মধ্যে যদি ভুত থাকে, তবে ভুত ঝাড়াবে কে। চেয়ারম্যান এ বিষয় কিছু জানেনা, টাকাও নেননি। তবে, কেন টাকা ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গ আসলো। একই সঙ্গে প্রতারক চক্রটি ইউনিয়ন জুড়ে ৪শতাধিক লোকের নিকট হতে দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেলেও তিনি কেন জানতে পারেননি। সরজমিনে গেলে ভুক্তভোগীরা সাতনদীকে জানান প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে গৃহীনিদের গৃহ দেওয়ার নাম করে যে সমস্ত ভুক্তভোগীদের নিকট হতে প্রতারক চক্রটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা হলো মুকুন্দমধুসুদনপুর গ্রামের সুরাত আলীর কন্যা লিপি খাতুনের নিকট ৭হাজার, একই গ্রামের আলেয়া খাতুনের নিকট হতে ৭হাজার, জিয়াদ আলীর পুত্র বিল্লালের নিকট হতে ৩হাজার, নীলকণ্ঠপুর গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর পুত্র সিরাজুল ইসলামের নিকট হতে ৩হাজার, আনছার আলীর নিকট হতে ৩হাজার, মৃত বাচা গাজীর পুত্র আনছার আলীর নিকট হতে ৭হাজার, মৃত কছের মোড়লের পুত্র আবুল হোসেন মোড়লের নিকট হতে ৭হাজার, মৃত হারান গাজীর পুত্র মুজিবর গাজীর নিকট হইতে ৭হাজার মুকুন্দ মধুসুদনপুর গ্রামের ঠান্ডা মোড়লের কন্যা আলেয়া খাতুনের নিকট হইতে ৮হাজার, তমিজ উদ্দীনের কন্যা রেহেনা খাতুনের নিকট হইতে ৮ হাজার, আলাউদ্দীন ঢালীর নিকট হইতে ৮ হাজার, সুরাত গাজী কন্যা লিপি খাতুনের নিকট হইতে ৭হাজার, চাচাই গ্রামের শিবপদোর পুত্র প্রশান্ত দাশের নিকট হতে ১৪ হাজার, রঘুনাথ মন্ডলের পুত্র গুরুপদ মন্ডলের নিকট হতে ১০হাজার, গোষ্ট মন্ডলের পুত্র বিমল মন্ডলের নিকট হইতে ৮হাজার টাকা করে এইভাবে ইউনিয়ন জুড়ে অসহায় গরীবদের টার্গেট করে প্রায় ৪শতাধিক নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। ভুক্তভোগীরা আরো জানান বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিক বার চেয়ারম্যান, মেম্বরদের স্মরণাপন্য হলেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে সময় ক্ষাপন করে আমাদেরকে পথে বসিয়েছে। টাকা ফেরত পাওয়ার আসায় এখন তারা উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়ে বিভিন্ন হুমকির মধ্যে দিনপাত করিতেছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ইউনিয়নবাসী নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। বিষয়টি নিয়ে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন জুড়ে টকঅব দি টাউনে পরিনত হয়েছে।