হাফিজুর রহমান/হাবিবুল্লাহ বাহারঃ- সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরে দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে পেটের ক্ষুধার যন্ত্রনায় বৃদ্ধা এতিম দুই বোন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাটলেও দেখার কেউ নেই। দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর ভিক্ষা করে লোকের কাছে হাত পেতে অর্ধহারে অনাহারে কোনদিন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও স্থানীয় মেম্বর চেয়ারম্যান বা উপজেলা প্রশাসনের কেউ কোন দিন খোজ নেয়নি। অনেক কষ্ট করে এতিম বৃদ্ধা অন্ধ মরিয়ম একটি বিধবা ভাতার কার্ড এবং অপর বোন বৃদ্ধা রাহিলা একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের বই পেলেও প্রতারক চক্রের খপ্পরে ভাতার টাকা তাদের ভাগ্যে জোটেনি। মরিয়মের নামে বিধবা ভাতার বইতে এবং রাহিলার নামে বয়স্ক ভাতার বইতে ২০২০ পর্যন্ত ভাতার টাকা উত্তোলনের লিপিবদ্ধ থাকলেও তারা সেটা পায়নি। স্থানীয় কিছু প্রতারক চক্র স্থানীয় মেম্বরের নাম করে বই নিয়ে টাকা উঠিয়ে আবার বই ফেরত দিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার সময় সরে জমিনে কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাজার গ্রামে গেলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সরকারী জায়গার উপর একটি ভাঙ্গা জরাজীর্ণ কুড়ে ঘরে বসে দুই বোন অন্ধ মরিয়ম এবং রাহিলা এই ভাবে সাতনদীর সঙ্গে কথা গুলো বলছিল। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া গরীবদের জন্য এত সহায়তা থাকলেও তাদের ভাগ্যে একবার একটি বিধবা ও বয়স্ক ভাতা কার্ড পেলেও বর্তমান সেটিও নাই। ১০ টাকা কেজির চাউলের কার্ড, ভিজিডি কার্ড,ভিজিএফ কার্ড, প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া ঈদের ভিজিডি কার্ডের টাকা বা গৃহহীনদের বাসগৃহ নির্মানের কোনটাতে তাদের ঠাই হয় নাই। শুধু মাত্র আশে পাশে বসবাসকারী অসহায় দরিদ্রদের দয়া-দাক্ষিণ্যে কোন রকমে অনহারে অর্ধহারে খেয়ে না খেয়ে বেচে আছে। তাদের জীবনের গল্পটি এমন কালিগঞ্জ উপজেলার বাজারগ্রামের মরিয়মের সঙ্গে শেখ আব্দুল্লাহর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাদের তিনটি সন্তান জন্ম গ্রহন করিলেও পরে মারা যায়। এরপর স্বামী মারা যাওয়ার পর হইতে মরিয়ম সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস ও ভিক্ষা করে জীবন চালিয়ে আসছিল। বর্তমান ৭০ বছরের মরিয়ম অসুস্থ্য অন্ধ হয়ে আর হাটা চলা করতে পারে না। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে নিজের ঝুপড়ি ঘরে প্রায় সময় শুয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে লাঠি ভর করে ঘরের বাহির হয় খাদ্যের সন্ধানে। বিধবা ভাতার বহি নং-১৭৭, এবং হিসাব নং-১৯, যা ২০২০ সালে পর্যন্ত পেয়েছে। অপর বোন রাহিলার সঙ্গে একই গ্রামের সইলুদ্দীনের সঙ্গে বিয়ে হয়, বিয়ের পর কোন সন্তান না হওয়ায় এবং স্বামী মারা যাওয়ার পর হতে দুই বোন এক সঙ্গে ভিক্ষা করে একই জায়গায় বসবাস ও জীবন যাপন করে আসছে। রাহিলার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড নং-২৯১, হিসাব নং-২৯, সেটাও ২০২০ সালে ১৭ এপ্রিল সর্ব শেষ ৩ হাজার টাকা ভাতা দিয়ে আর দেওয়া হয়নি। এর পর থেকে দুই বোনের কপালে সরকারী কোন সাহার্য্য জোটেনি। বর্তমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে অসুস্থ্য শরীর নিয়ে ঘরের ভেতরে না খেয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেচে আছে। এক মাত্র পাড়া প্রতিবেশিদের দেখা শুনা এবং দয়া ছাড়া পৃথিবীতে তাদের সম বেদনা জানানোর মত আর কেউ নাই। এলাকার মেম্বর চেয়ারম্যানরা একাধিকবার এলাকায় গেলেও তাদের খবর কেউ রাখেনি। শুধু মাত্র ভোটের সময় আসলে ভোট ভিক্ষার জন্য প্রার্থীরা দ্বারে দ্বারে তাদের কাছে ভোট ভিক্ষার জন্য যায়। তারা নিজেরা জানেনা যে সরকারী খাদ্য সহায়তার পাওয়ার জন্য ৩৩৩ তে ফোন করলে খাদ্য পাওয়া যায়। তাই বিষয়টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী এবং ভুক্তভোগী মরিয়ম ও রাহেলা।