
হাফিজুর রহমান/হাবিবুল্লাহ বাহারঃ- ঢাকা গুলিস্থান শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতালের বেডে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ এর বহুল আলোচিত হত্যাচেষ্টায় অগ্নিদগ্ধ নানী নাতির মধ্যে ৮ বছরের নাতি নাজমুল মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার সময় অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে যৌতুকের সাক্ষী হয়ে রইল। যৌতুকের দাবি মিটাতে না পারা এবং তালাক দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিশোধ নিতে গত (২ অক্টোবর) শনিবার রাত আনুমানিক পৌনে ২টার সময় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের কাজলা গ্রামে ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় নানি ফাতেমা বেগম (৫২) ও নাতি নাজমুলকে ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে বাইরে থেকে আঁটকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। আগুনের ঘটনায় এলাকাবাসী দ্রুত এসে অগ্নিদগ্ধ নানী ফাতেমা এবং নাতি নাজমুলকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরে খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে অবস্থার অবনতি হলে ঐদিন রাতে তাদেরকে ঢাকা গুলিস্তান শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতাল ভর্তি করে। সেখানে তিন দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রে আনুমানিক ১.৪০ মিনিটে নাজমুল মারা যায়। উক্ত ঘটনায় গত (৩
অক্টোবর) রবিবার কাজলা গ্রামের মৃত জব্বার আলী সরদার পুত্র আব্দুস সাত্তার সরদার বাদী হয়ে ভাঙ্গানমারি গ্রামের নওয়াব আলীর পুত্র সবুজ গাতিদার (৩৫), সুমন গতিদার (২৫), মৃত শুক্র গাতিদার এর পুত্র নোয়াব আলী গাতিদার (৬০) এবং তার স্ত্রী মর্জিনা খাতুনকে (৫৫) আসামি করে থানায় একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলা দায়ের করে। মামলা নাম্বার ৪। উক্ত মামলার প্রধান আসামি ঘাতক সবুজকে ওইদিন বিকাল ৪টার সময় সাতক্ষীরা থেকে থানার উপ সহকারী পরিদর্শক আজিম গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। গ্রেপ্তারকৃত ঘাতক সবুজকে (৪ অক্টোবর) সোমবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোরশেদ আলী সাতক্ষীরার বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। উক্ত ঘটনায় নিহত নাতি নাজমুলের লাশ ঢাকা শাহবাগ থানার মাধ্যমে ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার কাজলা গ্রামের আব্দুস সাত্তার এর কন্যা নাজমা খাতুন এর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গানমারি গ্রামের সবুজ গাতিদার এর সঙ্গে ৭/৮ মাস আগে বিবাহ হয়। বিবাহের পর হতে মোটা অংকের যৌতুকের জন্য প্রায় স্ত্রী নাজমা কে মারধর করতো। উক্ত ঘটনায় ৩/৪ মাস আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সবুজ গাতিদার হত্যার পরিকল্পনা করে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে (২
অক্টোবর) রাতে সবুজ এর শশুর সাত্তার মৎস্য ঘের পাহারায় চলে গেলে সবুজ তার দলবল নিয়ে রাত্র আনুমানিক পৌনে ২ টার সময় ঘরে তার শাশুড়ি ফাতেমা বেগম এবং নাতি নাজমুলকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিল। সেই সুযোগে পরিকল্পিতভাবে ঘরে পেট্রোল দিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তাদের ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জ্বলন্ত ঘরের মধ্যে হতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে আগের মামলাটি এখন হত্যা মামলায় পরিণত হল। এ ব্যাপারে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।