
নিজস্ব প্রতিবেদক: জেলখানায় কারাবন্দীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও উন্নত খাবার এবং আদালতে হাজিরাকালীন সময়ে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা হওয়ায় দেশব্যাপী আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান। ইতিমধ্যে এ খবর যতই ছড়াচ্ছে ততই দেশব্যাপী ছড়াচ্ছে তার সুনাম। মানবিকতার শীর্ষে রেখেই ঘুরে ফিরেই ‘মানবিক জজ’ হিসেবে সুখ্যাতি পাচ্ছেন কারাবন্দী ও তাদের স্বজনসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে। খাবার পরিবর্তনে কারাবন্দীদের মুখে হাসি ও খুশি ফুটে উঠেছে।
অবশেষে বাস্তবায়িত রূপ পেতে যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা জজ মফিজুর রহমানের এই মানবিক প্রয়াস। আদালতগামী কারাবন্দীদের দুপুরের খাবারের জন্য মাথাপিছু ২৬ টাকা বরাদ্দ প্রদানে সম্মতিজ্ঞাপন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। গত ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কারা -২ শাখার উপ-সচিব সানজিদা শারমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে আদেশক্রমে এ অনুরোধ করা হয়। যা ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে বাস্তবায়িত হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা জজ শেখ মফিজুর রহমান তার পূর্বের কর্মস্থল মাগুরায় থাকতে কারাবন্দিদের জন্য দুটি সুপারিশ করেছিলেন। তা হলো কারাবন্দীদের জন্য স্বাস্থ্যকর উন্নত খাবার প্রদান এবং আদালতে হাজিরা দিতে আসা কারাবন্দীদের জন্য খাবার প্রদানের ব্যবস্থা করা। এর আগে আদালতে যেসব কারাবন্দীরা হাজিরা দিতে আসতো তারা দুপুরে কোন খাবারই পেত না। কারণ কারা কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে তাদের সাথে চিড়া – গুড় দেয়া হতো আর কারাবন্দীদের বক্তব্য মতে তাদের না খেয়েই দিনটা কাটাতে হতো। মুলত বাস্তবতা হলো,যে কারাবন্দীর আত্মীয় – স্বজন সব ম্যানেজ করে খাবার সরবরাহ করতে পারতো তাদেরই দুপুরে খাবার জুটতো। না হলে থাকতে হতো অভুক্ত অবস্থায়। এই অমানবিক ব্যবস্থার পরিবর্তে প্রস্তাবনা আকারে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেন জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান মহোদয়। যার প্রথম অংশ ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ আদালতে হাজিরা দিতে আসা সকল কারাবন্দীদের দুপুরের খাবারের জন্য আলাদা করে বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ। এর বাস্তবায়ন শুরু করেছে এই নতুন বছরের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এখন আদালতগামী কারাবন্দীরা দুপুরের জন্য শুকনা খাবার (যেহেতু আদালতের হাজতখানা অন্য খাবার দেয়ার উপযোগী নয়) অর্থাৎ পাউরুটি, সিদ্ধ ডিম এবং কলা পাচ্ছেন, অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটানোর অমানবিক দিনের অবসান হয়েছে।
উল্লেখ্য, জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান সাতক্ষীরায় যোগদানের পর হতেই একের পর পর মানবিক কাজ করে ও সাধারণ অসহায়, দুস্থ মানুষের কাছে পৌছে গিয়ে আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়ে যাচ্ছেন।