
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগরে নির্মানাধীন পাকা ভবন ভাঙচুর করেও থেমে নেই সন্ত্রাসীরা। ঘটনার স্বাক্ষী হওয়ায় এবং জায়গা ছেড়ে দিতে হুমকি প্রদান অব্যহত রেখেছে তারা। এদিকে ভাংচুরের ঘটনায় ভবন মালিক সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করায় এবং প্রতিপক্ষও থানা পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ করায় থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ভবন মালিক আব্দুল গফুর বলেন, ‘পলাশপোল মৌজায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৬ শতক জমিতে আমি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করি। এতে করে আমার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই কহিনুর ইসলাম ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার বিধান মতে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সাতক্ষীরা বরাবর প্রতিকার প্রার্থনা করে মামলা করন। যার প্রেক্ষিতে বিরোধ নিষ্পত্তি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার একটি নোটিশ গত সোমবার সন্ধ্যায় ভবন ভাংচুরের পর আমার হস্তগত হয়।
ভবন মালিক আব্দুল গফুর আরও বলেন, বিগত ২০ আগস্ট ২০২০ ইং তারিখে আমার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই কহিনুর ইসলাম সাতক্ষীরা পৌর সভার মেয়র বরাবর একটি আবেদন করেন। তাতে আমি বিল্ডিং কোড না মানিয়া তাদের সীমনার মধ্যে অবৈধভাবে বাড়ী নির্মাণ কাজ করছি অভিযোগ করে মাপ জরিপ করে জমির সীমানা নির্ধারনের জন্য আবেদন করেন।
উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা পেীরসভার প্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সরেজমিনে মাপ জরিপ সম্পন্ন করে ম্যাপ আকারে উক্ত জমির প্লট ও অংশ চিহ্নিত করে নকশা করে দেন। ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল আলম ও সার্ভেয়ার মামুন-অর-রশীদ স্বাক্ষরিত ম্যাপ আকারে চিহ্নিত নকশাপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, আবেদনকারী কহিনুর ইসলাম আবেদন করেন যে বিবাদী আব্দুল গফুর তার সীমনা অতিক্রম করে ও বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মাণ কাজ করছে। কিন্তু মাপ জরিপ অন্তে দেখা যায় যে আবেদনকারীর (কহিনুর ইসলামের) আবেদন সঠিক নয়।
পাশাপাশি নালিশের সত্যতা না পেয়ে পৌরসভার সার্ভেয়ার ও কাউন্সিলর আমাকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। সে মোতাবেক আমি পৌরসভা থেকে বাড়ির প্লান পাশ করিয়ে সেই নকশানুয়ায়ী বাড়ি তৈরির কাজ চালাতে থাকি। এমতাবস্থায় গত সোমবার সন্ধ্যায় রেজাউলের নেতৃত্বে হাসান সহ অজ্ঞাত ৮/১০জন ব্যক্তি হামলা চালিয়ে নির্মানাধীন উক্ত ভবনের সাটারিং ভাংচুর করে ব্যপাক ক্ষয়ক্ষতি করে।
ভবন মালিক আব্দুল গফুর ও প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে জামাতা হাসান সহ ৮/১০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি মিলে বাড়িটির সাটারিং ভাংচুর করেন। ভাংচুরের বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় অবহিত করলে এসআই মহম্মদ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।’
ভবন ভাংচুরের প্রত্যক্ষদর্শী কামালনগর মধ্যপাড়ার এক ব্যক্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় রেজাউল, হাসান, শফি, শাহজাহান সহ অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জন এসে ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে ফিল্মি স্টাইলে আব্দুল গফুরের নির্মানাধীন বিি ল্ডং এর অংশ বিশেষ ভাঙচুর করে চলে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অপর এক ব্যক্তি বলেন, সাথী তথা কহিনুরদের জায়গা পেছনে। আব্দুল গফুরের জায়গা দিয়েই তারা চলাচল করে। আবার তারাই অন্যায়ভাবে গফুরের ভবন ভাঙচুর করেছে।
ভবন মালিক আব্দুল গফুরের স্ত্রী পারভীন বলেন, আমাদের ভবন ভাঙচুরের আগের দিন সাথী আমাকে পথে পেয়ে আমার গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এর পরদিনই সাথী, তার বোন মিতু, জামাই হাসান, বরুণ, গৌতম, শংকর প্রমুখ কহিনুরের ভাড়াটে গুন্ডারা সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে আমাদের ভবন ভাঙচুর করেছে। এ সময় আমি তাদের বাঁধা দিতে গেলে আমাকে হুমকি দেয় এবং তারা কোথা থেকে এসছে জানতে চাইলে বরুণ বলে আমরা আমেরিকা থেকে এসেছি, পারলে কিছু করে নিস।
এদিকে ভাংচুরের ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি লিখিত এজহার দাখিল করে ভবন মালিক আব্দুল গফুর। লিখিত ঐ অভিযোগ ও তার দেয়া বর্ননা মতে জানা যায়, আব্দুল গফুর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন নিয়ে ৬ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করছেন। এর এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী রেজাউলের নের্তৃত্বে হাসান সহ অজ্ঞাত ৮-১০ জন ব্যক্তি লোহার রড, শাবল, দা, লাঠি সোটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে তিন লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করেছে। এ সময় আবদুল গফুর বাঁধা দিতে গেলে তাকে আহত করে এবং শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষরা। এ সময় সন্ত্রাসীদের দলের সদস্য কোহিনুর ইসলাম ও রওশনা জাহান সাথী তার (গফুরের) স্ত্রী পারভীন ও তার ছেলে বাপ্পীকে মারপিট করে। এ সময় তারা গফুরকে হত্যার হুমকি দেয় এবং বিল্ডিং ভেঙে মাটি সমান করে দেবে বলে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। ভাংচুরের বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় অবহিত করলে এসআই মহম্মদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।’
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াছিন জানান, ‘মাগরিবের পরপরই রেজাউল, হাসান সহ আরও ৮/১০জন এসে বিল্ডিয়ের সাটারিং ভেঙে নিচে ফেলে দেয়। ইয়াছিন আরও জানায়, “এ ঘটনার স্বাক্ষী হওয়ায় বুধবার (০৩ মার্চ’২১) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসানের স্ত্রী রওশন জাহান সাথী আমার বাসায় গিয়ে নানারকম ভয় ভীতি প্রদর্শন করে হুমকি দিয়েছে।”
এ ব্যাপারে জানতে সাথীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী পুলিশ কর্মকর্তা মহম্মদ সাথে ঘটনার দিন রাতে কথা হলে তিনি জানান, ‘ঘটনাস্থলে ভাংচুরের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত রেজাউলের সাথে একাধিবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।’
এদিকে, সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান সঙ্গীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা দেখে গেলাম আগামীকাল (০৪ মার্চ-২১) বসে কাগজপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।