মহাম্মদ যারিফ, কলারোয়া থেকে ফিরে: গত ৩০ জানুয়ারি কলারোয়া পৌর নির্বাচনকে ঘিরে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হয়েছে। খোদ শাসকদলের কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে ভয়-ভীতিকর হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যানকে আটকে রেখে ভোটের বৈতরনী পার হওয়ার নেপথ্য কুশীলব আওয়ামী লীগের একাধীক নেতার কুমতলবের খবর পাওয়া গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ দু’ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু। কলারোয়া পৌরসভার নির্বাচনে ফিরোজ আহম্মেদ স্বপণের নিকট আত্মীয় ও তার গ্রুপের অনুসারী মাস্টার মনিরুজ্জামান বুলবুল নৌকা প্রতীক পেয়ে ভোটের মাঠে নামেন। অপর দিকে আমিনুল ইসলাম লাল্টুর অনুসারী সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী নৌকা প্রতীক না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে মোবাইল প্রতীক নিয়ে মাঠে নামেন। দু’গ্রুপ মুখোমুখি থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগ কিম্বা কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যের কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে উপজেলা চেয়ারম্যান লাল্টুর অভিযোগ। পরে নির্বাচনের পূর্বে ২৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী সাজেদুর রহমান খান চৌধুরীকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য আহবান জানান এবং তিনি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন ব্যাক্ত করেন।
সাজেদুর রহমান খান চৌধুরীকে বসাতে বল প্রয়োগ:
উপজেলা চেয়ারম্যানের আহবানে সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী নৌকা প্রতীকে সমর্থন জানালেও গভীর রাতে বিশেষ এক মহলের ৩০ সদস্য তার বাড়ী ঘিরে ফেলে। তাকে না পেয়ে তার ব্যবসায়ী পুত্র ..এর মাথায় অস্ত্র তাক করে তার পরিবারের সদস্যদের খুন-জখমের হুমকি দেয়। ওই সময় পরিবারটি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
অপরদিকে ২৮ তারিখ দিনগত রাতে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুকে ফোন করে ডেকে নিয়ে নির্জন জায়গায় ৪৮ ঘন্টা আটকে রাখা হয়। বাড়ীতে গিয়ে একই মহল তার ক্লাস নাইন পড়ুয়া পুত্র আরফিনসহ পরিবারের অন্য সব সদস্যকে খুন-জখমের হুমকি দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। তারা অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালসহ লাল্টুকে গুম ও পরিবারের সদস্যদের খুন জখমের হুমকি দেয়।
একইভাবে ভোটের আগেরদিন রাতে চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে বিশেষ ঐ মহলটি ভোট কেন্দ্রে না আসতে হুমকি প্রদর্শন করে আসে।
ভোটের আগরেদিন রাতে যাদের বাড়ীতে বিশেষ মহলটি গিয়ে ভয়-ভীতিকর হুমকি দিয়ে আসে:
পৌর আওয়ামী লীগের নেতা শফিউল আলম শফি (কাউন্সিলর নির্বাচিত), হাসান, ইসমাইল, হোসেন বাবু, সালাহউদ্দীন, ফারুখ, ইনছার, আছাদুজ্জামান তুহিন, রফিকুল ইসলাম, চঞ্চল, রফিক, ফজলু, টিপু সহ শতাধিক ব্যাক্তির বাড়ীতে বিশেষ মহলটি যেয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। এসময় তারা বলে কালকে ভোটকেন্দ্রে যাবিনা। গেলে পরিনাম ভাল হবে না।
কাউন্সিলরদের ভোট কেটে দেয়ার নামে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজী:
স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী নেতা সরাসরি প্রশাসনের নাম ভাঙ্গীয়ে ৯টি ওয়ার্ডের ১৮/২০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর নিকট থেকে ৩ লক্ষ থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। চক্রটি প্রচার দেয় প্রশাসনকে ম্যানেজ না করলে ভোটে পাশ করা যাবে না। যে সব কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তাদের তালিকা আছে সাতনদীর হাতে। ইতোমধ্যে উপজেলা ভাইস চেয়াম্যান শাহাজাদার বিরুদ্ধে তার আপন ফুফু পাঁচ লক্ষ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছে। ফুফাতো ভাইদের হামলারও শিকার হয়েছেন তিনি। টাকা দিয়েও পাশ করতে পারেননি এমন প্রার্থীদের টাকা ফেরৎ দেয়ার খবর আছে। তবে প্রশাসনের নামে টাকা নিলেও তা পকেটস্থ করেছে চিহ্নিত মহলটি।