নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। কমিটির সদস্যরা হলেন সাইদুন নবী চৌধুরী, যুগ্ম সচিব, ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা; আব্দুল হালিম, উপ-সচিব, নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ও বিপ্লব দেবনাথ, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সদস্য সচিব তদন্ত কমিটি, নির্বাচন কমিশন কার্যালয়। গত ১১ মার্চ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব বিপ্লব দেবনাথ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই তথ্য জানা গেছে। যার স্মারক নং১৭.০০.৮৭০০.০৩৫.৪৬.০৫৬.২০-৩৫১।
আগামী ১৫মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে আবেদনকারী ও নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী রির্টানিং অফিসার, সহকারী রির্টানিং অফিসার. থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কেন্দ্রের পুলিশ ইনচার্জ, প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারসহ উল্লেখিত ব্যক্তিগণের শুনানী ও বক্তব্য গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণের শুনানী আগামী ১৬মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সাতক্ষীরার কার্যালয়ে গ্রহণ করা হবে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ৩০ জানুয়ারী ৩য় ধাপে অনুষ্ঠিত কলারোয়া পৌরসভার নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে ব্যাপক অনিয়ম, সহিংসতা, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, তিনটি ব্যালটের মধ্যে মেয়র প্রার্থীর ব্যালট ভোটারকে না দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার ঘটনায় বিএনপি ও এক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীসহ একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী নজির বিহীন ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন। এ কারণে গত ৬ ফেব্রুয়ারী বেসরকারিভাবে ঘোষিত কলারোয়া সহ তিনটি পৌরসভার ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তাসহ অন্যান্যদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী ২৫ প্রার্থী।
ওই আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য মহল অভিনব কায়দায়, গায়ের জোরে কলারোয়ার প্রভাবশালীদের নীল নকশায় এই নির্বাচনটি প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হয়। নির্বাচনের পূর্বে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু গুম হন। প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসারের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে অভিযোগ করলেও কোন সহযোগিতা পাননি। তদন্তের দায়িত্ব ঐ বিতর্কিত রিটার্নিং অফিসারের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তার পরিবর্তে কমিশনের উচ্চপদস্থ ও নিরপেক্ষ কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অত্র প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনকে বাতিল করে পূণ:নির্বাচনের দাবি জানান আবেদনকারীরা।
এ বিষয়ে এএসএম এনায়েতউল্লাহ খানসহ অন্যান্য প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন থেকে কোন প্রতিকার না পেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন।
অপরদিকে নির্বাচনের আগে দলীয় নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়ায় অপর আওয়ামী লীগ নেতা সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনু বিদ্রোহী প্রাথী হিসাবে মাঠে নামেন এবং মোবাইল প্রতীক পান। প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে তিনি নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী মজনু চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, তাকে বসাতে ব্যর্থ হয়ে বাঁকা পথ বেছে নেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের প্রভাবে ২৭ জানুয়ারী গভীর রাতে কলারোয়া থানার গেটের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত তার আবাসিক ভবন ঘিরে ফেলে সাতক্ষীরা ডিবি’র ওসি ইয়াছিন আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সাদা পোশাকধারী ডিবি’র অন্তত ৩০ জনের একটি দল। অবস্থা বেগতিক দেখে পিছনের দরজা দিয়ে তিনি সটকে পড়েন। তখন ঘেরাওকারীরা তার পুত্র আরিফকে আটকে রেখে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। বলেন তোমার বাবাকে হাজির করো। এসময় তাকে রিভলবার দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখানোসহ অকথ্য ভাষায় গালাগালও করা হয়। পুত্রের দুরাবস্থা দেখে রাত সাড়ে তিনটার সময় সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী বিশেষ ওই বাহিনীর দেয়া শর্ত মোতাবেক প্রার্থীতা প্রত্যাহার সহ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেন। এসময় তিনি বলেন, আটক উপজেলা চেয়ারম্যান লাল্টুকে ছেড়ে দেওয়া হোক। তার উপস্থিতিতেই আমি ঘোষণা দিতে চাই। কিন্তু সে সুযোগও দেয়া হয়নি। তারপর রাত চারটার দিকে ডিবি সদস্যরা তাদের অবস্থান সরিয়ে নেয়। পরে নির্বাচনের আগের দিন ২৯ জানুয়ারি সকাল এগারটায় নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার সহ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনিরুজ্জামান বুলবুলকে সমর্থন করার ঘোষণা করেন তিনি। এসময়ে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুনুর রশিদ, আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।