প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ১৭, ২০২৫, ২:১৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ২৫, ২০২০, ১:০০ অপরাহ্ণ
কামরুল হাসান
কলারোয়ায় প্রেমজ সম্পর্কের কারণে প্রেমিককে পিটিয়ে খুনের ঘটনাটি হত্যা মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হত্যার ঘটনায় মেয়েটির মা আসমা খাতুন, দাদা রিয়াজ উদ্দীন ও চাচা ইউপি সদস্য আব্দুল জলিলকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
তবে, পলাতক রয়েছেন প্রধান আসামি মেয়েটির পিতা কামরুল ইসলামসহ চাচা ওহিদুজ্জামান পিন্টু এবং অন্যরা। রাতে প্রেমিকার সাথে ফোনে কথা বলায় প্রেমিক তুষার হোসেন জনি (২০) নামে ওই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রেমিকা মেয়ের পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার সকাল ১১টায় নিহতের বাবা উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের বজলুর রহমান শেখ বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিবরণ ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কামরুল ইসলামের মেয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী সায়মা জামান ময়না (১৬) এর সাথে একই গ্রামের বজলুর রহমান শেখের ছেলে ঢাকা পলিটেকনিক কলেজের সিভিল ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ তুষার হোসেন জনির প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে উঠে।
গত বুধবার (২২ এপ্রিল) গভীর রাতে ময়না তুষারের সাথে মোবাইল ফোনে প্রেমালাপ করছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে মেয়ের বাবা কামরুল ইসলাম মেয়েকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে মেয়ে ময়নাকে দিয়ে মোবাইল ফোনে তুষারকে ঘরের পিছনের রাস্তায় দেখা করার জন্য আসতে বলে।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে তুষার সেখানে যাওয়া মাত্রই ময়নার বাবা কামরুল, চাচা বাসারুল, পিন্টু, রিন্টুসহ মামলার আসামীরা তুষারকে লাঠি ও রড দিয়ে মারপিট করে। এসময় প্রেমিক তুষার জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মামলার বাদি তুষারের বাবাকে ডেকে আনা হয়। রাতে রাস্তা থেকে অচেতন অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেখানে অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তুষারের মৃত্যু হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তুষারের বন্ধু পাইকপাড়া গ্রামের খলিল মোড়লের ছেলে জিসান (২৪) জানায়- ময়নার হঠাৎ ফোনে তুষার জানায়, রাতে ঘরের পিছনের রাস্তায় দেখা না করলে সে (ময়না) আত্মহত্যা করবে।
এসময় তুষার তাকে সাথে নিয়ে ময়নার সাথে দেখা করতে যায়। ময়নাদের ঘরের পিছনে যাওয়া মাত্রই ময়নার বাবা ও চাচারা মারপিট শুরু করে। এসময় সে (জিসান) যুগিখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তুষারের সাথে ময়নার তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো বলে সে জানায়।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গীয়াস জানান, এঘটনায় শেখ বজলুর রহমান বাদি হয়ে ১০ জনের নামে কলারোয়া থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৮) দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন, এঘটনায় এক ইউপি সদস্যসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীদের শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, কলেজছাত্র তুষারের মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার ভোরে তুষারের পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ময়নার বাবা ও চাচাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা এসে গ্রামবাসিদের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) তৌফিক আহম্মেদ জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এদিকে, যুগিখালী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিহত তুষারের জানাজা নামাজ শেষে তাকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।