
# আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, ওসি নেন দুস্কৃতকারীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা
# কাজীরহাট বাজারের একক নিয়ন্ত্রণের নেপথ্যে তুরান হত্যাকান্ড
# দুস্কৃতকারীরা নানা অপকর্ম করলেও ব্যবস্থা নেননি কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা হাবিব
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন তুরানকে হত্যা করা হয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতা জহুরুল-নজরুলের মদদে এ অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, জহুরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামের মদদে তুরানের দোকান দখল করে রেখেছিল কেরালকাতা ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। তুরানের দোকানের মাসিক ভাড়া বাবদ পাওনা টাকা চাইতে গেলে তুরানকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। প্রথমবার ইটের আঘাতের পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার নজরুলের নির্দেশে মাথায় আঘাত করে মনিরুল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় একের পর এক এলাকায় নানা ধরনের অপকর্ম করে চলেছে স্থানীয় বিএনপির নামধারী দুষ্ক্রিয়কারীরা। অভিযোগ রয়েছে, অপকর্মের এসব ঘটনা জড়িতরা কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন।
জানা গেছে, জহুরুল ইসলাম ৮ নম্বর কেরালকাতা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কাজীরহাট বাহার কমিটির সভাপতি। আর নজরুল ইসলাম কুশোডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাজীরহাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
তুরানের চাচা আবদুর রশিদ সরদার জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে তুরান উপজেলার কাজীরহাট বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলামের দোকানে পাওনা টাকা চাইতে যান। এ সময় মনিরুল টাকা দেবেন না বলে টালবাহানা শুরু করলে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বাজারের লোকজন এসে তাদের থামিয়ে দেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তুরানের দোকানের সামনে গিয়ে তাকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করেন মাংস ব্যবসায়ী মনিরুল। এতে তুরান গুরুতর জখম হন এবং মাটিতে পড়ে যান। বাজারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
আবদুর রশিদ সরদার আরও জানান, মাথায় আঘাতের কারণে তুরান ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে স্ট্রোক করেন। তাৎক্ষণিক তাঁকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে উন্নতি না হওয়ায় খুলনা সিটি হাসপাতালে ভর্তি করে মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখান থেকে বাড়ি আসার পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তুরান। পুলিশ লাশ মর্গে পাঠিয়েছে। তিনি ধানঘোরার গ্রামের মৃত আবদুল হামিদ সরদারের ছেলে।
এ বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী মনিরুলের ব্যবসায়ী অংশীদার মফিজুল ইসলাম ও কাজীরহাট বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আসানুর রহমান বলেন, মনিরুলের কাছে পাওনা ২০ হাজার টাকা নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে মনিরুল গিয়ে তুরানের মাথায় আঘাত করেন।
মনিরুল উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের কাউরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় মনিরুল বা তাঁর বাবা কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
অভিযোগ উঠেছে, তুরানের এ হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত। এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের মদদ দেন সয়ং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এসব অভিযোগের ব্যাপারে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের বক্তব্য জানার চেষ্টা করে তার মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। সে সময় তার ফোনটি অন্য একজন রিসিভ করেন এবং জানান, হাবিবুল ইসলাম হাবিব এখন নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি পরে কথা বলবেন।
জানা গেছে, তুরানের বাবা মৃত আবদুল হামিদ সরদারকেও সাংবাদিক বেলাল হত্যার মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয় এবং তিনি সেই মামলার দায় মাথায় নিয়ে মারা যান। এই মিথ্যা মামলাটি সাজিয়েছিলো তুরান হত্যার ইন্ধনকারী নজরুল মেম্বার। হামিদ সরদারকে ঘায়েল করবার জন্য তার নাম জড়ানো হয়। এছাড়াও ওই মামলায় নজরুল তার প্রতিদ্বন্দ্বী কুশোডাংগা, হেলাতলা এবং কেরালকাতা ইউপি বিএনপি নেতাতাদের নাম দেয়া হয়।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুল আরেফিন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৪/১৮.০৩.২৫ । এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর এই নজরুল-জহিরুলসহ যারা চাঁদাবাজী ও লুটপাট চালিয়ে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি ওসি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অতি সম্প্রতি একটি মামলা করা হলেও আসামিদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। কলারোয়া উপজেলাটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য বলে বিবেচিত। এসব চোরাচালান সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ওসি নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। জহুরুল এবং নজরুল শেখ হাসিনার গাড়িবহর মামলায় সাড়ে চার বছর কারাবন্দি ছিলেন। সরকার পতনের পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠে। প্রথমে দখলে নেন কাজীরহাট বাজার কমিটি। জবরদস্তির ওই কমিটিতে তুরানকেও সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হলে তিনি পদত্যাগ করেন। পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন, সেই কমিটিতে তুরান সাধারণ সম্পাদক হন। এই পাল্টা কমিটি করাকে কেন্দ্র করে খুন হন তুরান। তবে ভয়ে তুরান হত্যার মুল ইন্ধনদাতা জহুরুল এবং নজরুলের নাম বলতে ভয় পাচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা আরো জানান, কাজীরহাট বাজারের অর্ধেক জায়গায় তুরানদের মালিকানাধীন। এই বাজারের একক নিয়ন্ত্রণ জহুরুল এবং নজরুলদের কাছে যাওয়ায় জিম্মি হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীা। জহুরুলকে থানার দালাল এবং নজরুলকে চোর নামে চেনেন স্থানীয়রা। নজরুলের নেতৃত্বে স্থানীয় অনেক মানুষের বাড়িতে ছিনতাই এবং চুরির ঘটনা ঘটে। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের উপর নেমে আসে খড়গ।