
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: চীনসহ ৩২টি দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া শিল্পের উপর। ফলে বিপাকে পড়েছে পীকূলীয় অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত উপজেলার কয়েক লক্ষ কাঁকড়া আহারণ, ক্রয়, বিক্রয় ও রপ্তানীকারকরা। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ, খুলনা রেঞ্জ, বাগেরহাট ও শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধিন লবন পানি এলাকার লাখ লাখ মানুষ এই কাঁকড়া আহারণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া প্রায় ৫০ হাজার ছোট বড় কাঁকড়ার খামার ও হ্যাচারী রয়েছে। যা থেকে কাঁকড়া মোটা তাজাকরণ করে রপ্তানী করা হয়।
করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের সাথে বাংলাদেশের সকল ফ্লাইট বন্ধ থাকায় কাঁকড়া রপ্তানী সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছে কাঁকড়া চাষীরা। প্রতিটি খামারে কম বেশি কাঁকড়া থাকলেও তা রপ্তানীর অভাবে খামারে মরে ছাপ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত কাঁকড়ার ৯০ ভাগ রপ্তানী হয় চীনে। বাঁকি ১০ ভাগ বিশ্বের অন্যান্য বাজারে রপ্তানী হয়। যেহেতু সুন্দরবনে সরকারিভাবে জানয়ারী- ফেব্রæয়ারী কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম থাকায় তা আহারন সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ রয়েছে। কাঁকড়া আহারণ বন্ধ হওয়ার আগেই ছোট বড় খামারীরা কাঁকড়া ক্রয় করে খামারে মজুদ রেখেছিলো। করোনা ভাইরাসের কারনে রপ্তানী বন্ধ থাকায় সূর্যের তাপ আকষিৎ বেড়ে যাওয়ায় খামারের কাঁকড়ায় অসাভাবিক মড়ক দেখা দিয়েছে।
সুন্দরবনে এই দুই মাস কাঁকড়া আহারণ বন্ধ থাকলেও উপকূলীয় ৫০টি উপজেলায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষ উপকূলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে কাঁকড়া আহারণ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। করোনা ভাইরাসের কারনে কাঁকড়া ক্রয় বিক্রয় বন্ধা থাকায় মারাত্মক বিপাকে পড়েছে এই উপকূলের মানুষরা। তাদের এক মাত্র আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অত্যন্ত অভাব ও অনাটনের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। শ্যামনগর উপজেলার পদ্ম পুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের রাজ্জাক সানা, আনোয়ার হোসেন, মাসুমস বিল্লাহ তারা সবাই কাঁকড়া আহারণকারী। তারা জানান, প্রায় ২ মাস কাঁকড়া বিক্রয় বন্ধ থাকায় অত্যান্ত কষ্ট করে তাদের দিন কাটছে। বিকল্প কোন কর্ম সংস্থানও তাদের অভ্যস্ত না। যে সেখানে কাজ করে টাকা উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করবে।
বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দাতিনা খালী গ্রামের কাঁকড়া খামারী মহসীন আলম, রেজাউল করিম, মন্তেজ আলী, মান্নান ঢালী ও শহিদুল্লাহ জানান, সুন্দরবনে কাঁকড়া আহারণ সরকারিভাবে বন্ধের আগে কাঁকড়া ক্রয় করে খামারে মজুদ রেখেছিলো। জানুয়ারী ফেব্রæয়ারী বন্ধ মৌসুমে চড়া দামে বিক্রয় করার জন্য। চীনে করোনা ভাইরাসের কারনে কাকড়া বিক্রয় বন্ধ থাকায় সহায় সম্বল সব হারিয়ে পথে বসেছে তারা। শ্যামনগর উপজেলার কাঁকড়ার বড় মোকাম নামে পরিচীত হরিনগর বাজারে কাঁকড়া ব্যবসায়ী মোজাম আলী, রবীন বিশ্বাস ও নবাব আলী জানান, চীনসহ বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কাঁকড়া ক্রয় বিক্রয় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব শুধু কাঁকড়া আহারণ বিক্রয়কারীদের মধ্যে নয়।
সমস্ত ব্যবসা বানিজ্যে মন্দা পড়েছে। তাদের অভিমত এক্ষুনে সরকার চীন বাদ দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য নতুন বাজার বের করে কাঁকড়া রপ্তানী শুরু না করলে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের ব্যপক ক্ষতি হতে পারে। যার প্রভাব দেশের সব যায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।