
আহাদুর রহমান জনি: ভোমরা কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের কমিটি ভাঙ্গাগড়া নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান গত ছয় বছরে অন্তত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। চলমান কমিটির কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। দীর্ঘ দুই যুগেও ভোমরা স্থল বন্দরের এ সংগঠনটি নির্বাচনের মুখ দেখেনি।
ভোমরা স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের অধিকাংশ সদস্যের অভিমত দীর্ঘ দুই যুগেও সংগঠনটি নির্বচনের মুখ দেখতে না পারার মূলে খুলনা শ্রম অধিদপ্তরের সীমাহীন ঘুষ বাণিজ্য। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হন হাবিবুর রহমান। ৯৯ সালে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন রনজিত কুমার ঘোষ। ২০০০ সালে সভাপতি হন হাবিবুর রহমান হাবিব, ২০০৬ সালে সভাপতি মনোনিত হন আলহাজ্ব আব্দুস সবুর।
২০০৮ সালে সভাপতি পদে মনোনিত হন আশরাফুজ্জামান আশু, ২০১২ সালে সভাপতি মনোনিত হন মোঃ নিছার উদ্দীন আহমেদ, ২০১৫ সালে আহবায়ক মনোনিত হন নাছিম ফারুখ খান মিঠু। ২০১৫ সালে সভাপতি মনোনিত হন কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু, ২০১৮ সালে সভাপতি মনোনিত হন এইচএম আরাফাত এবং ২০২০ সালে সভাপতি মনোনিত হন নওশাদ দিলয়ার রাজু। সর্বশেষ সাধারণ সভা থেকে গঠিত নওশাদ দিলওয়ার রাজু, মোস্তাফিজুর রহমান নাছিমের কমিটি অবৈধ দাবী করে জেলা আওয়ামী লীগের বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এজাজ আহম্মেদ স্বপন হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। শুনানি অন্তে রাজু-নাছিমের কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। পরে শ্রম অধিদপ্তরে দেন-দরবার করে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করার পর নতুন করে ৩০ নভেম্বর ৫ সদস্যের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হন এজাজ আহম্মেদ স্বপন। ৫ সদস্যের অন্যান্যরা হলেন আশরাফুজ্জামান আশু, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, এএসএম মাকছুদ খান, ও মিজানুর রহমান।
৫ সদস্যের এই কমিটি গঠনের জন্য পরিচালক মিজানুর রহমান ২৮ নভেম্বর ২ লক্ষ টাকা, ২৯ নভেম্বর ১ লক্ষ টাকা ও ৩০ নভেম্বর গ্রহণ করেন ২লক্ষ টাকা। পরে আবার আহবায়কের পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে আহবায়ক কমিটির সদস্য রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীর নিকট থেকে ২৬ মার্চ ১লক্ষ ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন পরিচালক মিজানুর রহমান এবং নিজ মোবাইল নম্বরে (০১৭১২-৬১৭৫৯৭) বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করেন যথাক্রমে ১০,৫০০ (দশ হাজার পাঁচশত টাকা), সময় বিকাল ৪:২৫ মিনিটে ০১৯৫২-৮২৪৫৭৮ নম্বর মোবাইল থেকে এবং একই দিনে ০১৯৬০-১৬২৪৪৪ নম্বর মোবাইল থেকে ৯,৫০০(নয় হাজার পাঁচশত টাকা)। এছাড়াও প্রতিটি জাতীয় দিবসে ৫০ হাজার এবং প্রতি সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন মিজানুর রহমান।
২০১৬ সালে খুলনা শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন মিজানুর রহমান। তার যোগদানের পর থেকে ভোমরা স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজন্টস্ এসোসিয়েশনের ৪টি কমিটি গঠন হয়েছে। এসব কমিটি অনুমোদনের সময় তিনি কমপক্ষে পাঁচলক্ষ টাকা ঘুষ আদায় করেছেন কমিটির কর্মকর্তাদের নিকট থেকে। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি নির্বাচন এড়িয়ে যেন-তেন করে একটি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া করে দেবেন বিনিময়ে তাকে গুনতে হবে ২০ লক্ষ টাকা।
গত ৬ বছরে পরিচালক পদে থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধীনস্থ সংগঠন থেকে কাড়িকাড়ি টাকা ঘুষ আদায় করে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান। ভোমরা স্থল বন্দরে অন্তত ৮টি এমন সংগঠন আছে। গত ৬ বছরে মিজানুর রহমান অন্তত ২০ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালন মিজানুর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে সাতনদীকে বলেন, আমি আদালতের আদেশ পালন করেছি মাত্র।