ইয়ারব হোসেন: নাব্যতাহারা কপোতাক্ষের বুক জুড়ে এখন অসংখ্য মৎস্যঘের, পুকুর আর ফসলের মাঠ। নদের দুই তীরের জমির মালিকরা দিনের পর দিন পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া নদটি দখল করে সুরু খালে পরিনত করেছে। ভমি দস্যুরা চর দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি। দখল করা চরে ইটভাটাসহ ঘরবড়ি ও দোকানপাট নির্মান করে ভোট দখল করে আসাছে বছরের পর বছর।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার একাংশ ও তালা উপজেলার মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত এই কপোতাক্ষ নদ। এর অপর অংশে যাশোরের ঝিকোরগাছা, মনিরামপুর, কোশবপুর।
সরেজমিনে কলারোয়ার খোর্দ, দলুইপুর, দিয়াড়া, সরসকাটি, ধানদিয়া, তালা উপজেলার সরুলিয়া, কুটিঘাটা, পাটকেলঘাটা, ইসলামকাটি, বলরামপুর, শ্রীমন্তকাঠি আজিজ সুশীল পল্লী, মোবারকপুর বাহাদুরপুর এলাকা ঘুরে কথা হয় কপোতাক্ষ তীরের গ্রামবাসিদের সাথে। তারা জানান, গত ২০০০ সালের পর থেকে নদের তলদেশ পলি জমে ভরাট হতে থাকে। নাব্যতা হারানোর ফলে নদের তীর ঘেষে জমির মালিকরা প্রতি বছর একটু একটু করে নদটি দখল করে ফেলেছে। এখন এটি মরা খালে পরিনত হয়েছে। দখলকারিরা দখল করা চর ও তীর ঘেষে বসসি স্থাপন, কৃষি জমি ও মাছের ঘের করে ভোগ করছে। দখল উচ্ছেদে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ না থাকায় দখল কারিরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব ভূমি দস্যুদের কালো থাবা থেকে বাঁচানো যাচ্ছে না ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে উঠা কপোতাক্ষ নদকে।
কথা হয় কলারোয়ার দিয়াড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবর রহমান মফের সাথে। তিনি জানান, কম খরচে এক সময় খুলনা ও মংলা থেকে ছোট ও মাঝারী আকারের জাহাজে মালামাল আনা নেয়া করা হতো কপোতাক্ষ নদ দিয়ে। সে সময় নদটি দেড় হাজার ফুট চওড়া ছিলো। নদের তীর দখলের পর এখন এটি ৫০/৬০ ফুটের মতো চওড়া আছে। পলি ভরাট জমে ¯্রােত বন্দ হয়ে যাওয়ায় নদটি ক্রমশ দখল হতে থাকে। এখন এ নদে নৌকাও চলে না। তিনি আরও জানান, তার ইউনিয়নের শতাধিক মানুষ (যাদের নদের তীরে জমি আছে) নদের দিকে জমি বাড়িয়ে নদটি সংকুচিত করে ফেলেছে।
জয়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু জানান, তার ইউনিয়নের শতাধিক জমির মালিক জমির আঁইল নদের দিকে ঠেলতে ঠেলতে নদটির বেশির ভাগ অংশ দখল করে নিয়েছে। এসব দখলকরিদের উচ্ছেদ করা গেলে প্রায় এক হাজার বিঘা জমি উদ্ধার করা সম্ভব।
তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: মতিয়ার রহমান বলেন, তার এলাকার অসংখ্য মানুষ চর দখল করে মাছের ঘের পুকুর তৈরী করে অবৈধ ভোগ দখল করে আসছে। নদের সাথে লাগোয়া দুই তীরের জমির মালিকরাও নদটি দখল করে ফসল উৎপাদন করছে। এসব দখল কারিদের উচ্ছেদ করা গেলে কপোতক্ষের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি উদ্ধার করা যাবে।
ইসলামকাটি ইউপি চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র সেন জানান, তার এলকায় নদের দুই কুলই দখলকারিদের হাতে চলে গেছে। এখানে হাজারেরও বেশী জমি দখল করে নিয়েছে নদের কুল ঘেষা চাষিরা। কেউ কেউ জমির শ্রেনী পরিবর্তন করেও কপোতক্ষের জমি বন্দবস্ত নিয়েছে বলে শোনা যায়।
তালা এলাকায় কপোতাক্ষের চর দখল করে ইটভাটা করে নাম দেয়া হয়েছে তালার নুর ব্রিকস্, এবি ব্রিকস্ ও সনি ব্রিকস্ নামের তিনটি ইটভাটা। নুর ব্রিকস্ এর মালিক খায়রুল ইসলাম মনু, এবি ব্রিকস্ এর মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম, সনি ব্রিকস্ এর ম্যানেজার রবিন পাল জানান, কপোতাক্ষের খাস জমি নদের ওই পারে। এপারে তারা মালিকানা জমিতেই ভাটা নির্মান করেছেন।
কথা হয় কপোতাক্ষ নদ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসছেন পানি কমিটির তালা উপজেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ার পরই নদের তীরবর্তী মানুষেরাই নদের জমি দখলে নিয়ে ভোগ করা শুরু করে। তালা বাজারে নদের তীর দখল করে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, ঈদগাহ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। যা নদের জন্য ক্ষতির কারন। নদের কি পরিমন জমি দখল হয়ে গেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান তার জানা নেই জানিয়ে বলেন কপোতাক্ষের তিনের দুই ভাগ এখন দখল কারিদের হাতে চলে গেছে। যা উদ্ধার করা জরুরী।
কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির তালা উপজেলা সমন্বয়ক সরদার রফিকুল ইসলাম জানান, কপোতাক্ষের অনেক স্থান দখল হয়ে গেছে। নদ তীরের জমির মালিক ও ভূমিহীনরা এসব দখল করে খাচ্ছে। তবে নদের কি পরিমান জমি দখল হয়েছে তার কোন হিসাব তার কাছে নেই।
এবিষয়ে তালা-কলারোয়ার সংসদ সদস্য ওয়ার্কাস পার্টির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে দেশের সব নদ নদী ও খাল দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নির্দেশনা মোতাবেক স্থানীয় জেলা প্রশাসনও কপোতাক্ষ নদ দখলকারীদের উচ্ছেদ করে নদটি দখল মুক্ত করবে।