নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গাছা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি, খলিষখালী ইউপি চেয়ারম্যান সাবীর হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে নিয়োগ বন্ধের দাবীতে বৃহস্পতিবার সকালে খলিষখালীর ইউনিয়নের গাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা, অভিভাবক ও এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ম্যানেজিং কমিটির দুই জন সদস্য। এঘটনার পর আজ শুক্রবারের নির্ধারিত নিয়োগ বোর্ড গতকাল গভীর রাতে বন্ধ করে দেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে, গত ২৭ জুলাই সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কাফেলা পত্রিকায় গাছা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের, সহাকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়ার শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ৪ টি পদে ১৯ জন চাকরী প্রত্যাশী আবেদন করেন।
আজ শুক্রবার (১৯আগষ্ট) সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি খলিষখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ার্কাস পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য অধ্যাপক মোল্লা সাবীর হোসেন চাকরি প্রত্যাশী কয়েকজনের কাছ থেকে নিয়োগের নামে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্থানীয় কৃষ্ণনগর গ্রামের ভুপতি সরকারের ছেলে জয়ন্ত সরকারকে অফিস সহায়ক পদের জন্য ৮ লাখ টাকায় চাকরী দেয়ার কথা বলে টাকা ম্যানেজ করতে বলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রথিন্দ্র নাথ মন্ডল ও সভাপতি অধ্যাপক মোল্লা সাবীর হোসেন। প্রধান শিক্ষকের কথামত জমি বিক্রি, স্বর্ণের গহনা বিক্রি, ঘেরের জমি বন্ধক রেখে বুধবার ৭ লাখ টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি চেয়ারম্যান সবির হোসেন এর কাছে যায় চাকরী প্রত্যাশী জয়ন্ত সরকার। এসময় এত কম টাকায় চাকরি হবে না আরও কয়েক লাখ টাকা দিতে হবে বলে তাকে ফিরিয়ে দেন চেয়ারম্যান সাবীর হোসেন। এরপর নিয়োগের নামে ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি প্রচার হয়। অভিযোগ উঠেছে এর আগেই ১৩ লাখ টাকা নিয়ে ওই পদে আরেক জনের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে ৪ টি পদে নিয়োগের নামে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে এবং নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবীতে বৃহস্পতিবার সকালে গাছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে অভিভাবকরা বিক্ষোভ মিছিল, মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সরজিৎ সরকার, ভবোতোস কান্তি মন্ডল, ছাত্রলীগ নেতা ইন্দ্রজিৎ মন্ডল, আ’লীগ নেতা গোপাল সরকার, নিয়োগ প্রার্থী, বাঁধন সরকার, জয়ন্ত সরকার, দিপ্ত বাছাড়, পার্থ রায় চৌধুরী প্রমুথ।
বক্তরা অভিযোগ করেন, গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগের নামে অর্ধকোটি টাকা লুটপাট নেতৃত্ব দিচ্ছে বিদ্যালয়ে পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রিয় নেতা অধ্যাপক সাবীর হোসেন ও প্রধান শিক্ষক রথিন্দ্র নাথ মন্ডল। এছাড়া তারা নিয়োগ প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ দাবী করেছেন। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে খলিষখালী ইউনিয়নের বিশেষকাটি গ্রামের গুরুপদ মন্ডল, অফিস সহায়ক পদে তুষার সরকার, আয়া পদে অর্পিতা রায়, নিরাপত্তাকর্মী পদে মাসুমকে নিয়োগের তোড়জোড় করা হয়। প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে ইতোমধ্যে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সভাপতি চেয়ারম্যান সাবীর হোসেন। বক্তরা মানবন্ধনে অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর অনিমিয়ত বিদ্যালয়ে না আসা বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুটপাট সহ দুর্নীতির আখড়া খানায় পরিনত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সে সভাপতির সাথে মিলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে নিয়োগ বোর্ড করার তোড়জোড় করা হয়। প্রকৃত মেধাবীদের চাকরি না দিয়ে পাতানো নিয়োগ বোর্ড করতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করা হয়। শুক্রবার সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পাতানো নিয়োগ বোর্ডের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মানবন্ধন কর্মসূচী পালন শেষে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য সরজিৎ সরকার ও ভবতোষ মন্ডল লিখিত আবেদন করেন জেলা প্রশাসক বরাবর।
এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খলিশখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্কাস পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য অধ্যাপক মোল্লা সাবীর হোসেন তার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের আনিত নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিপক্ষরা এটি ছড়াচ্ছে। ১০/১৫ জন ব্যক্তি মানববন্ধন করে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তিনি যোগ করে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের কোন হস্তক্ষেপ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবেব তিনি না সূচক জবাব দেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন করিব জানান, তিনি অভিযোগ পেয়ে নিয়োগ বন্ধের জন্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গাছা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যলয়ে অর্ধকোটি টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আজ শুক্রবারের নিয়োগ বোর্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।