
-
ঘুষ গ্রহনের প্রতিকার চেয়ে আইজিপি’র কাছে অভিযোগ
-
১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ আদায়
-
এসিড নিক্ষেপের মামলায় চার দফায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ আদায়
-
এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় এজহহার গ্রহণে অস্বীকৃতি, ২৫দিন পর ৭০ হাজার টাকা নিয়ে মামলা রেকর্ডের অভিযোগ
-
টাকা ছাড়া শ্যামনগর থানায় মামলা রেকর্ড করেননা ওসি নাজমুল হুদা
-
ঘের দখলের নেপথ্যে বাংলা ভাই, ফ্রন্টে নেতৃত্বে আছেন সাইফুল্লাহ
হাবিবুর রহমান, শ্যামনগর থেকে ফিরে: লক্ষ টাকা দাবী ও ঘুষ গ্রহনের ঘটনায় শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে আইজিপি’র কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। থানায় সেবা নিতে আসা বিপদগ্রস্ত মানুষদের কাছ থেকে বেশুমার ঘুষগ্রহণের অভিযোগ আছে ওসি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে।

আইজিপির নিকট অভিযোগের কপি
শ্যমনগর থানার বাঁধঘাটা গ্রামের গফুর গাজীর পুত্র আলমগীর হোসেন জানান, তার পরিবারের এক’শ বিঘার একটি চিংড়ি ঘের গত ১৭ নভেম্বর গভীর রাতে মাছ লুটপাট করে যুবলীগ নেতা বাংলা ভাই’র স্বজনরা। মাছ লুটপাটের নেতৃত্বে ছিল রামজীবনপুর গ্রামের শুকুর আলীর পুত্র সাইফুল্লাহসহ জুলফিকার আলী ভুট্টো, নাছিম সরদার, বংশীপুর গ্রামের মহাশিনের পুত্র রায়হান ও জাহিদ, ভবানীপুর গ্রামের আবতাব এবং ইছহাক। যুবলীগ নেতা বাংলা ভাইর ইন্ধনে মৎস ঘেরটি ১৯ নভেম্বর পরিপূর্ণ ভাবে দখলে নিয়ে নেয় তারা।
আলমগীর হোসেনের অভিযোগ, দখলদাররা বাগদা, ভেটকি, ভাঙ্গান, টেংরা, পারশে ও সাদা মাছ (রুই জাতীয়) লুট করে ত্রিশ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করে। লুটকরা মৎস বিক্রি করে পাওয়া বিপুল পরিমান নগদ টাকা থেকে মোটা অংকের টাকা স্থানীয় থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হুদাকে দেয় লুটেরারা। ফলে মৎসঘের দখলের ঘটনায় মামলা না নিয়ে ঘের মালিক আলমগীর হোসেনকে কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দেন ওসি নাজমুল হুদা। ১৭ নভেম্বর রাতে মৎস ঘের থেকে মাছ লুটপাট করা হয়। ১৮ নভেম্বর পরিপূর্ণ ভাবে ঘের দখলে নেওয়া হয়। ১৯ নভেম্বর আলমগীর হোসেন থানায় যায় মামলা করতে। এ সময় আলমগীর হোসেনের কাছে এক লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করে ওসি নাজমুল হুদা বলেন, তোমার মৎস ঘেরের পানি ছুঁতে পারবেনা কেউ। এরপর ওই দিনই আলমগীর হোসেন বিশ হাজার টাকা প্রদান করেন ওসি নাজমুল হুদাকে। কিন্তু দখলদারদের নিকট থেকে মোটা দাগের আর্থিক সুবিধা নিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে মৎসঘেরটি দখলে নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন ওসি নাজমুল হুদা। এরপর অনেকটা নিরুপায় হয়ে আলমগীর হোসেন গত ২ ডিসেম্বর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত তদন্তের জন্য শ্যামনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে।
আদালতে দাখিল করা এজাহারে আসামী শ্রেণীভুক্তরা হলো, এস এম সাইফুল্লাহ, মোঃ শোকর আলী, নাজিম সরদার, জুলফিকার আলী ভুট্টু, জাহিদ হোসেন, আবু রায়হান, আবতাব গাজী, আবুজার গাজী ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন
আলমগীর হোসেনের আরও অভিযোগ হলো স্থানীয় শাসকদলের প্রভাবশালী নেতা বাংলাভাই নেপথ্যে থেকে এই মৎস ঘের দখলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ইতোপূর্বে এই বাংলাভাই একই মৎসঘের দখলে নিয়েছিল। অভিযোগের পর তৎকালীন পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবি পুলিশ বাংলা ভাইকে আটক করেন। পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান এবং মৎসঘের রেখে চলে যান। আলমগীর হোসেন আইজিপি বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগে বলেছেন ওসি নাজমুল হুদা এক লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করে ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন। দখলদারদের লুটপাট করা মৎস বিক্রয়লব্দ ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণও দাবী করেছেন আলমগীর হোসেন তার আবেদনে।
এ ছাড়াও মৌখিক অভিযোগে আলমগীর হোসেন সাতনদীকে জানান, তার প্রতিবন্ধি ভাই জাহাাঙ্গীর হোসেন খোকনকে এডিস নিক্ষেপ করে তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুন এবং বাড়ীর কাজের লোক বাবলু। ঘটনাটি তারা ২০/২৫ দিন পর জানতে পারেন। জানার পরই মা ফমেতা খাতুনের স্বাক্ষরিত একটি এজাহার নিয়ে থানায় গেলে তা গ্রহণ করেনি ওসি নাজমুল হুদা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার ওসির সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ২৫ দিন টাল বাহানা করে ৭০ হাজার নগদ টাকা ঘুষ নিয়ে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মামলা রেকর্ড করেন তিনি। পরে ওসি নাজমুল হুদা তিন দফায় যথাক্রমে ৩০ হাজার, ২৫ হাজার ও ২০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন এসপি ও সার্কেল এসপির নামে। তিনি বলেন এসব মামলার তদন্তে উপরের অফিসারদের টাকা দেয়া লাগে।
শ্যামনগর থানার সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কোন ঘটনায় থানায় এজাহার রেকর্ডের ক্ষেত্রে নিচে ১০/১৫ হাজার থেকে শুরু করে অবস্থা বুঝে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন ওসি নাজমুল হুদা। টাকা ছাড়া তিনি মামলা রেকর্ড করেননা। অথচ তার রুমের দরজায় লেখা আছে জিডি ও মামলা রেকর্ডে কোন টাকা গ্রহণ করা হয় না। শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে ওসি নাজমুল হুদার ঘুষ বানিজ্যের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা ডিআইজি’র কাছে বিচার চেয়েছেন।
এব্যাপারে ওসি নাজমুল হুদার মতামত নেয়ার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করলে সাতনদীকে তিনি জানান, “আমরা মাঠে কাজ করি। এরকম অভিযোগ আসতেই পারে। তবে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও অসত্য।”
অপরদিকে মতামত নেওয়ার জন্য সার্কেল এএসপি’র মোবাইলে যোগাযোগ করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এদিকে, আলমগীর হোসেনের মৎস ঘের দখলের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৃথক দুটি প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন।

এস এম জগলুল হায়দার
১২ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং তারিখে সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার এস এম জগলুল হায়দারের প্রত্যয়ন পত্রে যা বলেছেন….

এস এম জগলুল হায়দার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন
যথাস্থানে প্রযোজ্য
আমি এই মর্মে প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করিতেছি যে, সৈয়দ আলীপুর মৌজায় বি,এস,৩২ এবং ১৬৪ নং খতিয়ানে ২৯.৮২ একর জমির রেকর্ডীয় মালিক আলহাজ্ব মোঃ আঃ গফুর গাজী দিং, পিতা- মৃত এলাহী বক্স গাজী, সাং মানিকপুর, হাল সাং-বাদঘাটা, উপজেলা – শ্যামনগর, জেলা সাতক্ষীরা দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজে ও নিজ ব্যক্তিদের দ্বারা প্রথমে ধান্য চাষ এবং পরে মৎসচাষ করিয়া আসিতেছে। সম্প্রতি বর্তমান বৎসরে কতিপয় ব্যক্তি জোর পূর্বক উক্ত জমিটি দখল করিয়াছে। যাহা সম্পূর্ন বে-আইনী বলে আমি মনে করি। উল্লেখিত ব্যক্তির শান্তিপূর্ণভাবে দখলীয় জমি বা মৎস ঘেরটি যাতে ফেরৎপাইতে পারেন সেজন্য আইনী সহযোগীতার জোর সুপারিশ করছি।
উল্লেখ্য, তিনি উক্ত জমি উদ্ধারে চাঁদাবাজির স্বীকার হয়ে আইনের আশ্রয় গ্রহন করিতেছে। আমি তার দখলীয় জমি উদ্ধার সহ সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।
ইহা আমার জানা মতে সত্য।
১২ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং তারিখে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন প্রত্যয়ন পত্রে যা বলেছেন….
যথাস্থানে প্রযোজ্য

আতাউল হক দোলন

আতাউল হক দোলন স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন
আমি এই মর্মে প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করিতেছি যে, সৈয়দ আলীপুর মৌজায় বি,এস,৩২ এবং ১৬৪ নং খতিয়ানে ২৯.৮২ একর জমির রেকর্ডীয় মালিক আলহাজ্ব মোঃ আঃ গফুর গাজী দিং, পিতা- মৃত এলাহী বক্স গাজী, সাং মানিকপুর, হাল সাং-বাদঘাটা, উপজেলা – শ্যামনগর, জেলা সাতক্ষীরা দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজে ও নিজ ব্যক্তিদের দ্বারা প্রথমে ধান্য চাষ এবং পরে মৎসচাষ করিয়া আসিতেছে। অত্র এলাকার কতিপয় ভ‚মিদস্যু ব্যক্তিরা একজোটভুক্ত হইয়া চলতি বছরে আলহাজ্ব আব্দুল গফুর গাজী দিং দের নিকট চাঁদা দাবী করায় এবং দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপণ করায় তাহার ঘেরী অন্যায় ও অনধিকার ভাবে প্রবেশ করতঃ জবর দখল করেছে এবং ঐ বৃহৎ ঘেরের বিভিন্ন প্রকার মাছ লুন্ঠন করিয়া বহু ক্ষতিসাধন করিয়াছে। যাহা সম্পূর্ণ বে-আইনী বলে আমি মনে করি। আলহাজ্ব আব্দুল গফুর গাজী দিং উক্ত জমি জমা উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের কাছে আশ্রয় প্রার্থী হয়েছেন। আমি আলহাজ্ব আব্দুল গফুর গাজী দিংদের উক্ত ঘেরটি ফেরত পাইবার জন্য আইনী সহযোগীতার সুপারিশ করছি। আমি তার দখলীয় জমি উদ্ধার সহ সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।
ইহা আমার জানা মতে সত্য।