মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম:
চাহিদা বৃদ্ধির পাওয়ার কারণে সারাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক এলপিজি প্লান্ট। কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়লেও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি নীতিমালার অভাবে লাকশান পোহাচ্ছেন এ খাতে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা। গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের শুরুতে বোতলজাত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বিভিন্ন অপারেটর। অভিযোগ রয়েছে, বাজারে নতুন নতুন কোম্পানি আসছে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। ফলে ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখতে বেশি দামে কিনে প্রতিনিয়ত কম দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন পুরোনো ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ওমেরা এলপি ডিস্ট্রিবিউটরদের ১২ কেজির বোতলের জন্য ৮৪৫ টাকার ডিমান্ড ড্রাফট (ডিডি) করতে হয়। ওই ৮৪৫ টাকা থেকে দুই সপ্তাহ পড়ে কমিশন হিসেবে ৪০ টাকা ফেরত পান সংশিষ্ট ডিস্ট্রিবিউটর। একইভাবে বিএম এলপিজির জন্য ডিডি করতে হয় বোতলপ্রতি ৮৩০ টাকা। কমিশন ও গাড়িভাড়া মিলে ৬০-৮০ টাকা ফেরত পান ডিস্ট্রিবিউটররা। একইভাবে টোটাল গ্যাসের জন্য ডিডি করতে হয় ৮১৫ টাকা। কমিশন হিসেবে ফেরত আসে ৯-১৪ টাকা।
কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জ, সীতাকুÐ ও বারৈয়ার হাট এলাকার প্লান্ট থেকে এসব এলপিজি বোতল সংগ্রহ করে গুদামজাত এবং নগরীর খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে ৪২-৫২ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের। পরে বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি দামে ওমেরা বিক্রি হয় ৭৮০ টাকা, বিএম ৭৬০ টাকা, টোটাল ৮০০-৮২০ টাকা। এতে একেকটি বোতল বিক্রিতে গড়ে ৪০-৫০টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানালেন ডিস্ট্রিবিউটররা। তবে বসুন্ধরা, সুপারসহ কয়েকটির দাম কম থাকলেও বাজারে সিলিন্ডার সংকট থাকার কথা বলছেন তারা।
বর্তমানে বাজারে বসুন্ধরা, যমুনা, বিএম, ওমেরা, টোটাল, জি-গ্যাস, পেট্রোম্যাক্স, লাফস্, ইউনি গ্যাস, ডেল্টা, ফ্রেশ, জেএমআই, নাভানা, ওরিয়ন, বেক্সিমকো, সেনা, ইউনিভার্সাল, ইউরো, ইনডেক্স, বিন হাবিব, পদ্মা, প্রমিতা, নেওয়াজ, সুপার নামের প্রতিষ্ঠানগুলো এলপি গ্যাস বাজারজাত করছে বলে জানা যায়। বাকলিয়া এলাকার ওমেরা, বিএম, অরিয়নসহ বেশ কয়েকটি ব্রান্ডের ডিলারশিপ নিয়েছেন মোক্তার হোসেন লিটন। বাকলিয়ায় নাজিম উদ্দিন শাহ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে এ ব্যবসায়ে জড়িত। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অপারেটর বাজারে আসছে। নতুন নতুন ডিস্ট্রিবিউটর নিচ্ছেন তারা। এতে এ ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে।
প্রতি মাসে টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। আবার টার্গেট প‚রণ করতে না পারলে ডিস্ট্রিবিউটরশিপ হারানোর হুমকি রয়েছে। মাসের পর মাস বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কোটিপতি অনেক ডিস্ট্রিবিউটরও এখন পথে বসেছে।
এব্যবসায়ী আরো বলেন, ‘এলপিজি বাজারজাতকরণের জন্য কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। যে কারণে বোতলজাত এলপি গ্যাস ব্যবসায়ে এখন নৈরাজ্য চলছে। যে যার মতো করে বিক্রি করছে। এতে বিভিন্ন কোম্পানি ডিস্ট্রিবিউটররা মার খাচ্ছে।’
হালিশহর এলাকার সুপার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির স্বত্ত¡াধিকারী জহুরুল হক জম্মু দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, ‘কমিশন বাদ দিয়েও গাড়িভাড়া, গুদাম ভাড়া, স্টাফ খরচ মিলে আমার মাসে দেড় লাখ টাকা খরচ আসে। কিন্তু আয় হয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। গত দেড় বছর ধরে প্রতিমাসে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছি।’
প্রথমে ব্যবসা ভালো চললেও এখন অনেক কয়েক লক্ষ টাকা দেনায় পড়ে গেছি- জানালেন চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকার রংধনু এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত¡াধীকারী মো. করিম। তিনি বলেন, ‘প্লান্ট থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি পর্যন্ত একটি বোতলে ৪৫-৫২ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সবমিলিয়ে প্রতিবোতল গ্যাসের জন্য খরচ পড়ে ৮০০-৮৫০ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ থেকে ৮২০ টাকা। গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি কোম্পানি তাদের গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। বাজারে নতুন নতুন কোম্পানি আসছে।
ফলে নতুন নতুন ডিস্ট্রিবিউটর নিচ্ছেন তারা। এতে মাঠপর্যায়ে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। অনেকে অভিজ্ঞতা না নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিয়ে নতুন নতুন বিনিয়োগ করে বসছে। পরে ব্যবসায় এসে বিপাকে পড়ছেন।’ গত এক থেকে দেড় বছর ধরে টানা লোকসান দিচ্ছেন বলে জানালেন এ ব্যবসায়ী।
চট্টগ্রাম মহানগর এলপি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর ডিলার এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমাদের এলপি গ্যাস ব্যবসায়ীরা বাজারে অনেক টাকা বাকী ও প্রতি সিলেন্ডারে এক হাজার থেকে এক হাজার পাঁচশত টাকা লোকসান হচ্ছে বিদায় এখন পুঁজি হারানোর ভয়ে দিনের পর দিন টিকে থাকার লড়াই করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। সরকার যদি ব্যবসায়ীদের সার্থে নিতিমালা মাধ্যমে সুষ্ট পরিবেশ করতে পারে তবেই ব্যবসায়ীরা লোকসান থেকে পরিত্রান পাবে।