অনলাইন ডেস্ক :
২৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে টিলাগড় পয়েন্টের দিকে যাচ্ছিলাম। কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যাওয়ার পর দেখলাম, একটা ছেলে কান্নাকাটি করছে। সঙ্গে একটি মেয়ে। তার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। সেখানে অনেকেই ছিল। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কী হয়েছে?' ছেলেটি ঘটনা জানাল। আমি শাহপরাণ থানার ওসিকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানিয়ে তাদের নিয়ে এমসি কলেজ হোস্টেলে গেলাম।
এভাবেই ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের রাতের বর্ণনা দিলেন মিহিত গুহ চৌধুরী বাবলা। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এলাকায় তিনি বাবলা চৌধুরী হিসেবে পরিচিত।
বাবলা বলেন, 'ছাত্রাবাসের দিকে যেতে যেতে আন্দাজ করেছিলাম, কারা ঘটনা ঘটিয়েছে। এরা দীর্ঘদিন ধরেই কলেজ ও ছাত্রাবাস এলাকায় ছিনতাই-ইভটিজিং করছে। মোবাইলে ফেসবুক থেকে তাদের কয়েকজনের ছবি দেখাতেই মেয়েটির স্বামী চিহ্নিত করে।'
'১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা মূল জায়গায় চলে গেলাম। ছাত্রাবাসে গিয়ে সাইফুর, রবিউলসহ কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমাকে দেখেই তারা ওই দম্পতির গাড়ির চাবি ও মোবাইল ফোন আমার হাতে তুলে দেয়। চাবি আর মোবাইল নিয়ে আমি ছাত্রাবাসের গেটে পুলিশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি,' বলেন বাবলা।
বাবলা জানান, দম্পতিকে নিয়ে তিনি ছাত্রাবাসের ফটকে যাওয়ার পর দেখেন সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু ও যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
বাবলা বলেন, 'পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে এলে সবাইকে একসঙ্গে ধরা যেত।'
ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা সামনে নিয়ে আসায় বাবলা চৌধুরীকে কৃতিত্ব দিচ্ছে স্থানীয় মানুষ। নির্যাতনের শিকার তরুণী ও তার স্বামীর পাশে সর্বপ্রথম দাঁড়ানোর জন্য তার প্রশংসা করছে সবাই। অনেকে বলছেন, বাবলা চৌধুরী এগিয়ে না এলে ধামাচাপা পড়ে যেত অনেক কিছু। তার কারণেই ভেস্তে যায় সমঝোতা ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। শনাক্ত হয় অপরাধীরা।
তবে এখন বাবলা চৌধুরী নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায়ও আছেন। সমকালকে তিনি বলেন, 'ধর্ষকদের অস্তিত্বের লড়াই। তাই তারা চেষ্টা করবে আমাকে কিছু করার। কিন্তু আমি তো কাউকে ধ্বংস করার জন্য সহায়তা করিনি। মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করেছি। অপরাধীর কোনো দল হতে পারে না।'
প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে উল্লেখ করে বাবলা বলেন, 'আমি সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কাউকে ভয় করি না। একটি ভালো কাজ করেছি। এখানে অনেকে রাজনীতির গন্ধ খুঁজছেন।'
সেই রাতে ছাত্রাবাসের ফটকে থাকার ব্যাপারে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু সমকালকে বলেন, ওই রাতে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বন্দরবাজার যাচ্ছিলাম। এ সময় শাহপরাণ থানার এসি (সহকারী কমিশনার) জাহাঙ্গীরকে ফোন করে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের সামনে যেতে বলেন।
মিঠু দাবি করেন, 'সেখানে যাওয়ার পর বিস্তারিত জেনে আমরা আসামিদের শনাক্ত করতে পুলিশকে সহযোগিতা করি।
সূত্র-সমকাল