নিজস্ব প্রতিবেদক: আমি একটি স্বপ্ন নিয়ে সাতক্ষীরায় এসেছি। স্বপ্নটি বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগিতা চাই। সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে। নিরপরাধ মানুষ হয়রানিতে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। গতকাল সোমবার সকাল এগারোটায় জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী। সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে শুভেচ্ছা বক্তব্যে এসব ব্যাখ্যা করেন তিনি। মতবিনিময় কালে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. আমিনুর রহমান (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আতিকুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ). ডিআইও-১ মো. ইয়াছিন আলম চৌধুরী, পুলিশ পরিদর্শক নিরস্ত্র (ওসি ডিবি) তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ, সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মহিদুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী তার বক্তব্যে আরও বলেন, আপনারা আমাদের ভুলটা ধরিয়ে দিবেন, সেটা আমরা অবশ্যই শুধরে নেব। তবে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এবং একটি বাহিনীর জন্য আত্মমর্যাদাকর এমন কিছু লিখবেন না। লিখতে চাইলেও আমার সাথে একটু পরামর্শ করে নেবেন। পুলিশ সুপার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের সবার পরিবার-পরিজন আছে। আমরা সমাজের বাইরে না। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আর শুধুমাত্র একবছর ট্রেনিং নিয়েছি পুলিশে। আমার আচার-আচরণ, শিক্ষা অবশ্যই পরিবর্তন হবে না। আমি যোগদান করে এখনো কোনো থানায় যায়নি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সাংবাদিকদের সাথে বসে প্রকৃত চিত্র নিয়ে থানাগুলো পরিদর্শনে যাব। আসন্ন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, এখন নির্বাচনকে অগ্রধিকার দিয়ে কাজ করবো। একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন সাতক্ষীরায় করার জন্য আপনাদের সু-পরামর্শ চাই। আমি কাজে বিশ্বাসী। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সুন্দর পুলিশিং সেবা ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে চাই। নির্বাচনকালীন সময় মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও পুলিশের প্রধান দায়িত্ব। এরপর তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বলুন এরপর আমি আবারও বলবো।
এরপর একে একে বক্তব্য দেন বণিক বার্তার গোলাম সারোয়ার, গ্রামের কাগজের রেজাউল ইসলাম, দৈনিক সাতক্ষীরার সকালের নির্বাহী সম্পাদক আমিরুজ্জামান বাবু, ডিবিসি’র বেল্লাল হোসাইন, খুলনা সংযোগ’র অসীম চক্রবর্র্তী, বাংলাদেশ বেতারের ফারুক মাহবুবুর রহমান, দৈনিক মশালের সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মনিরুল ইসলাম মনি, দৈনিক পত্রদূতের এসএম বিপ্লব, দৈনিক কালের চিত্রের সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহমেদ, সমকালের এম কামরুজ্জামান, একাত্তর টেলিণভিশনের বরুণ ব্যাণার্জী, দৈনিক সাতনদী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মো. হাবিবুর রহমান, দৈনিক সাতনদী পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান প্রমুখ।
এসময় সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর কল্যান ব্যাণার্জী, চ্যানেল আই এর এড. আবুল কালাম আজাদ, ইত্তেফাক এর মনিরুল ইসলাম মিনি, সময় টেলিভিশনের মমতাজ আহমেদ বাপী, সহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। সাংবাদিকদের বক্তব্য শোনার পর পুলিশ সুপার আবারও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য শুরু করেন। প্রথমেই তিনি বলেন, আমি আশা করি কাজ করার ক্ষেত্রে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা পাবো। আমি যেখানেই কাজ করেছি, সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের সহযোগিতা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, নির্বাচনকেই আমি প্রাধান্য দিচ্ছি। বিবেকই বড় আদালত উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিন শেষে আমি নিজেই বুঝতে পারবো আমি কতটুকু ভালো কাজ, মন্দ কাজ করেছি। পুলিশ দ্বারা সাধারণ মানুষ হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি বন্ধ করতে হবে এবং করবোই। তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু হওয়া উচিত। স্মার্ট বাংলাদেশের পুলিশও হবে স্মার্ট। ডিজিটাল বাংলাদেশের পুলিশও হবে ডিজিটাল। আগে মানুষ মনে করতো পুলিশ-আর্মি হতে বেশী লেখাপড়া দরকার নেই। এখন আর সেই সুযোগ নেই। পরিবর্তন হয়েছে। আমার সাথে পড়াশোনা করেও অনেকে সাব ইন্সপেক্টর হয়েছেন। পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যা বলবেন তা মাথায় নিয়ে এসেছি। জিরো টলারেন্স নিয়ে চলবো। পুলিশের কোনো কর্মকর্তা অন্যায় করলে ব্যবস্থা নিব। পুলিশকে ব্যবহার করে অনেকে লাভবান হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি আর হতে দেওয়া যাবে না। উন্নতি হঠাৎ হয়না, আস্তে আস্তে হয় উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, উদ্দেশ্য সৎ থাকতে হবে। অসৎ উদ্দেশ্য খবর লেখা ঠিক না। পত্রিকা একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, তখন সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকরা লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জাগিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সৎ। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, একটি গাছ রোপণ করলে ফল পেতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। আমি সময় চাই, ভালো কাজ করার জন্য। পুলিশ সুপার নাশকতাকারীদের ইঙ্গিত করে বলেন, যারা ভুল করেছে তাদের সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। তারা পুনরায় অপরাধ না করলে তাদের অবশ্যই ভালো হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া সবার দায়িত্ব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, কোনো ধর্মই অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বলতে বলেনা। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মভীরু মানুষকে উষ্কে দেয়। এদের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহবান জানান তিনি।