প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ৩, ২০২৫, ৯:৩৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১, ২০২৫, ৮:২৮ অপরাহ্ণ
একটি ভ্যানের আকুতি: একমাত্র সম্বল হারিয়ে আতিয়ারের মানবেতর জীবনযাপন
পাইকগাছা প্রতিবেদক : যেটাকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকা। পরিবারের মুখে দু'বেলা অন্ন যোগায়। একচিলতে হাসি মেলে। সেই
একমাত্র অবলম্বন ইঞ্জিন চালিত ভ্যান হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অসহায় হতদরিদ্র ভ্যান চালক আতিয়ার (৪২)। সে পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের সিলেমানপুর গ্রামের দিরাজ সরদারের ছেলে। স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সংসারে ভ্যান চালিয়ে যা আয় হতো কোনরকম জীবিকা নির্বাহ করতো। বছরে ঈদের সময় ১০ কেজি চাল ব্যতীত পায় না কোন সরকারি অনুদান। তারপরও দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও সুখেই ছিল আতিয়ারের পরিবার। সম্প্রতি আয়ের একমাত্র সম্বল ভ্যানটি হারিয়ে বর্তমানে সে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সরজমিনে দেখা গেছে, দো-চালা টালির ছাউনী মাটির দেয়ালের উপর দণ্ডায়মান আতিয়ারের ঘর। দেয়ালের মাটি কোথাও কোথাও ধ্বসে খসে পড়ছে । ঘড়ের ভিতরের অবস্থা এতটাই করুণ বৃষ্টি এলেই পরিবারদের নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। টালির ফাঁক চুয়ে অঝোরে বৃষ্টি পানি পড়ে। আর ঝড় এলে উদ্বেগের শেষ থাকে না। এমনটাই তার বাড়ির চিত্র। অসহায় ভ্যানচালক আতিয়ার জানান, গত ১৩ জুন রোজ শুক্রবার প্রতিদিনের ন্যায় আমি সকালে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় যাই এবং দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে ৩’শ টাকা আয় করি। এমতাবস্থায় জুম্মার নামাজের সময় হলে উপজেলার আগড়ঘাটা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন একটি স্থানে ভ্যানটি তালা দিয়ে নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায়। নামাজ আদায় শেষে বাহিরে এসে দেখি আমার ভ্যানটি নির্দিষ্ট স্থানে নেই।এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও ভ্যানটি পাইনি।
আতিয়ার আরও বলেন, এক চিলতে বাড়িভিটা ছাড়া আমার আর কোন জায়গা জমি নেই। এই মুহূর্তে যে একটা ভ্যান পুনরায় কিনে চালাবো তার সামর্থ্য নেই।বর্তমান ভ্যান হারিয়ে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে এক বেলা খেয়ে দু বেলা না খেয়ে কোনরকমে দিন কাটাচ্ছি।মাঝে মাঝে মনে হয় নিজেকে শেষ করে দেই। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে সেই কাজটিও করতে পারি না।আমার মত যেন বিপদ আল্লাহ আর কাউকে না দেয় এই বলেই হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন আতিয়ার। আতিয়ারের কান্না দেখে স্ত্রী জলি বেগমও অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, দুনিয়ায় এমন কেউ নেই যে আমাদের মতো গরীবের পাশে দাঁড়িয়ে, একটা ভ্যানের ব্যবস্থা করে দিবে? আমার স্বামীর আয়ের উপর এ গরিবের সংসার চলে। ভ্যান হারিয়ে আয় বন্ধ হয়ে আজ সংসারে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মুখে অন্ন তুলে দিতে হচ্ছে অতি কষ্টে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তোবা আমাদের মরণ ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তিনি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে একটি ভ্যান পেতে আকুতি জানিয়েছেন।
Copyright © 2025 দৈনিক সাতনদী. All rights reserved.