আকরামুল ইসলাম: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে সাড়ে তিন টন চাউল। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের নিয়ে সেগুলো ইতোমধ্যে বিলিবন্টন করা হয়েছে। তবে দুই হাজার টন চাউল চেয়ারম্যান আত্নসাত করেছেন মর্মে এলাকায় ঢালাওভাবে প্রচার করে গুজব ছড়িয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা।
একই সাথে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারপিট করেছেন বলে অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় তোলপাড় চলছে গোটা গাবুরা ইউনিয়নজুড়ে।
এসব ঘটনা জানিয়ে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জি.এম মাসুদুল আলম জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রথম পর্যায়ে দেড় টন ও পরে দুই টন চাউল পেয়েছি। সেগুলো ইউপি সদস্যদের নিয়ে সঠিকভাবে ওয়ার্ড পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এরপর ইউপি সদস্যরা সেগুলো পৌঁছে দেন। ৩৫০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাউল দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আযম লেলিন দুইটন চাউলকে দুই হাজার টন চাউল বলে প্রচার করছে। ইউনিয়নব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা অব্যাহত রেখেছে। ইউনিয়নের মানুষ ৪০ হাজারের উপরে। সহযোগিতা দিতে পেরেছি মাত্র ৩৫০ জনের। প্রতিপক্ষরা এই সুযোগ নিচ্ছে। বিষয়টি আমি প্রশাসনকে অবহিত করেছি।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম আরও বলেন, এলাকার সাইদুল ইসলামের ভাই মিজানুর রহমান ছোট কিছুদিন আগে গাজাসহ আটক হয়। আর গাজা বিক্রি করবে না ইউনিয়ন পরিষদে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। তারা বাবা ছেলেকে শাসন করে বাড়ি নিয়ে যায়। বর্তমানে সকলকে যখন বাড়িতে থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তখন সাইদুল খারাপ সঙ্গীদের নিয়ে আড্ডায় মেতেছে। এ নিয়ে সাইদুলকে আমি দুইটা থাপ্পড় দিয়েছি।
তিনি বলেন, এই বিষয়টি নিয়েও ওই ছেলেকে ছাত্রলীগ কর্মী সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছে প্রতিপক্ষরা।
ঘটনার বিষয়ে গাবুরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, সাইদুল ইসলাম নামের ছেলেটি ছাত্রলীগের কেউ নয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চেয়ারম্যানের বিচার দাবি করার ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই না জেনে তাকে ছাত্রলীগকর্মী পরিচয় দিয়েছে। বিষয়টি ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আযম লেলিন জানান, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে চেয়ারম্যান দূর্ণীতি অনিয়ম করছেন। প্রকৃত দুস্থ অসহায় গরীবদের মাঝে সঠিকভাবে বন্টন করছেন না। টিআর কাবিখা প্রকল্পের টাকাও আত্নসাত করেন। ইউনিয়নে সাড়ে তিনটন চাউল বরাদ্দ হয়েছে। কেউ দুই হাজার টন বলে প্রচার করলে সেটি ঠিক নয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ত্রাণের ২৯ পরিবারের চাউল বিএনপি দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করেছেন চেয়ারম্যান। সরকারি চাউল তিনি কোন দলের হয়ে প্রচার করতে পারেন না।
তবে ত্রাণের চাউল দলীয় প্রচারের বিষয়ে চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, সেগুলো ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো সরকারি ত্রাণের চাউল নয়। আর প্রকৃত গরীব অসহায়দের মাঝেই সরকারি চাউল বিতরণ করা হয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান রেকসোনা মুজিব জানান, অসহায় মানুষদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণে কোন দূর্ণীতি বা অনিয়ম হয়নি। দুই টনকে দুই হাজার কেজি বলে অপপ্রচার দিচ্ছেন কেউ কেউ।
এসব বিষয়ে জানতে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজার গিফারী বলেন, চেয়ারম্যান সরকারি ত্রাণ সহায়তা নিজের দলীয় পরিচয়ে বিতরণ করেছেন এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। একটি তদন্ত টিম গঠণ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া গাবুরা ইউনিয়নে সাড়ে তিনটন চাউল বরাদ্দ পেয়েছে দুই হাজার টন চাউল বরাদ্দ পেয়েছে এমন কেউ প্রচার করলে সেটি সঠিক নয়। ত্রাণ বিতরণে কোন অনিয়ম হলে কাউকেই ছাড় নয়।