আহাদুর রহমান: নাম এক হওয়ার কারণে রেহানা পারভীনের চেকবই অন্য হিসাবধারীকে দেয়া হয়েছে। এরপর একে একে পাঁচবার করা হয় টাকা উত্তোলন। শেষবার ব্যাংকে ধরা পরলেও ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে রেহানা পারভীনের অনুমতি না নিয়ে করা হয়েছে টাকা ট্রান্সফার। এখনও হদিস মেলেনি একটি চেকের। ঘটনাটি ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার।
রেহানার স্বামী ওমর আলী জানান, “আমার স্ত্রী রেহানা পারভীন এর নামে ইসলামি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব আছে যার নং- ২০৫০১৪৩০২০২০২৯৩১২। চেক বইয়ের চেকের পাতা শেষ হয়ে গেলে নতুন একটি চেক বইয়ের আবেদন করি। কিন্তু পরবর্তীতে করোনাকালীন সময়ে ব্যাংকে এসে আর চেক বই সংগ্রহ করা হয়নি। হঠাৎ গত ৪ই অক্টোবর রবিবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ফোনে আমি ও আমার স্ত্রী ব্যাংকে গেলে জানতে পারি চেক বই রেহানা নামের অন্য মহিলার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবাক করার মত বিষয় হলো সেই মহিলা ওই চেক বই থেকে পাঁচবার টাকা উত্তোলনও করেছেন। শেষ বারে টাকা উত্তোলন করতে গেলে বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।”
এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে ব্যাংকের ম্যানেজার (অপারেশন) সামছুল ইসলাম রেহানা পারভীনকে বলেন যে তার হিসাব থেকে ওই ১,৮১,০০০ টাকা কথিত ওই রেহানাকে তুলে দিতে হবে। রেহানা পারভীন বলেন, আমার হিসাবে বিদেশ থেকে টাকা আসে। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমার আত্মীয় স্বজনও টাকা লেনদেন করে থাকে। সব কিছু বুঝে না পেয়ে আমি টাকা দিতে পারবনা।
একপর্যায়ে ব্যাংকের ম্যানেজার সামছুল ইসলাম তাদের হিসাবটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। রেহানার স্বামী ওমর জানান, “আমরা ম্যানেজারকে বলি সব কিছু না বুঝে নিয়ে আমরা হিসাব বন্ধ করব না”। তবে হিসাবধারী রেহানা ও তার স্বামীকে অন্ধকারে রেখে ইসলামি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার কর্মকর্তারা তার হিসাব থেকে ১,৮১,০০০ (একলক্ষ একাশি হাজার) টাকা ওই কথিত রেহানা খাতুনের নামে ট্রান্সফারও করে দেয়।
রেহানা খাতুনের একাউন্ট স্টেটমেন্ট অনুযায়ী দেখা যায়, রেহানা খাতুনের চেকবই ব্যবহার করে কথিত ওই রেহানা খাতুন চলতি বছরের ১০ই মার্চ ৩০,৮০০ টাকা, ১৮ই মার্চ ১০,০০০ টাকা, ২৪শে মার্চ ১৬,০০০ টাকা, ২৩ এপ্রিল ৫১,০০০টাকা ও ১০ই অগাস্ট ১,০২,০০০ টাকা উত্তোলন করে যার চেক নং MCH02923541 থেকে 45 পর্যন্ত। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জব্দ করে MCH02923547 নং চেক। কিন্তু এখনও MCH02923546 নং চেক এর হদিস পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বললে ইসলামি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার ম্যানেজার (অপারেশন) সামছুল ইসলাম জানান, “রেহানা পারভীনের চেক অন্য এক রেহানা খাতুনের কাছে ভুল ক্রমে চলে যায়। ওই রেহানা ওমর এর স্ত্রী রেহানা পারভীনের হিসাব থেকে ৬টি চেকের মাধ্যমে তার টাকা তুলে নেয়। সপ্তম চেকটি আমরা জব্দ করি”। স্বাক্ষর কিভাবে মিলল এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন “স্বাক্ষর একই রকম”। তখন ওই কথিত রেহানার স্বাক্ষর দেখতে চাইলে তিনি প্রশ্ন করে প্রতিবেদককে বলেন, আপনাদের উদ্দেশ্যটা কি? টাকা অন্য একাউন্টে ট্রান্সফারের জন্য হিসাব গ্রহীতার অনুমতি নিয়েছেন কিনা এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন “এটা মিউচুয়াল হয়ে গেছে”। অথচ এখন তিনি ওমরকে বিভিন্ন মাধ্যমে ফোন দিয়ে জানাচ্ছেন যেন ওমর বিষয়টি লিখিত অনুমতি দেয়। ম্যানেজারের কথা মত ৬টি চেকে টাকা তোলার কথা হলেও মূলত ৫টি চেকের বিপরীতে টাকা তোলা হয়েছে। এখন হদিস নেই আরও একটি চেকের।
ওমর জানান “আজ সোমবার বিকালে হুমায়ুন কবীর নামের একজন ফোন দিয়ে আমাকে জানান তিনি ব্যাংক থেকে বলছেন। তিনি আমার বাসায় আসতে চান। ব্যাংকের চেকের বিষয়টি মিটমাট করতে চান। ফোনে সব কথা না বলে বাড়ি এসে বলতে চান”।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ইসলামি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধান মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। আমি এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব”।
তবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের এহেন কাজে বিস্মিত গ্রাহকরা।
ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় চেক কেলেঙ্কারি
পূর্ববর্তী পোস্ট