
সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হারের লজ্জায় ডুবেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের সেই দুঃস্বপ্ন বাংলাদেশ পেছনে ফেললো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবিয়ে। গতকাল সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে জহুর আহমেদ মাঠে বাংলাদেশের দেয়া ২৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭৭ রানে থামে ক্যারিবীয়দের ইনিংস। আর ১২০ রানের বড় জয়ে উইন্ডিজকে দ্বিতীয়বার ধবলধোলাইয়ের লজ্জায় ডোবালো বাংলাদেশ। যেকোনো দলের বিপক্ষে এই মাঠে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ও এটি। ২০০৯ সালে প্রথমবার ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইওয়াশ করে টাইগাররা। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০৬ সালে কেনিয়াকে গুঁড়িয়ে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ। গত দেড় দশকে ১৪ বার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা।
আর ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয়বার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। গত বছর জিম্বাবুয়েকে ৩-০তে হারায় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা আট জয় পেল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে নির্দিষ্ট কোনো দলের বিপক্ষে এরচেয়ে বেশি জয় আছে কেবল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। রোডেশিয়ানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছে টানা ২০ ওয়ানডে। দেশের মাটিতে সবশেষ ১০ ওয়ানডে সিরিজের নয়টিতেই জিতলো বাংলাদেশ। এই জয়ে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লীগে পেল আরও ১০ পয়েন্ট। এর সঙ্গে পয়েন্ট তালিকায় উঠে এলো দ্বিতীয় স্থানে। বাংলাদেশের সমান ৩০ পয়েন্ট ইংল্যান্ডেরও। রানরেটে এগিয়ে থাকায় ইংলিশদের পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ৪০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে সোমবার তৃতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামে বাংলাদেশ। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ‘চতুর্পান্ডবের’ ফিফটিতে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওয়ানডেতে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলেন সমান ৬৪ রানের ইনিংস, সাকিব আল হাসান করেন ৫১ রান। এক ম্যাচে বাংলাদেশের চারজনের পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস এই নিয়ে হলো মাত্র তৃতীয়বার। আর চার সিনিয়রের একসঙ্গে ফিফটি এই প্রথম।
রান তাড়ায় নেমে একবারও জয়ের আশা জাগাতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। ৯৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ইনিংসের মাঝপথেই হোয়াইওয়াশের ক্ষণগণনা শুরু সফরকারীদের। রভম্যান পাওয়েলের ৪৭ রান কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন এনক্রুমাহ বোনার। ৩৪ বল বাকি রেখে ১৭৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। শীর্ষ ক্রিকেটারদের ছাড়া খেলতে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াই জমাতে পারেনি শেষ ম্যাচেও। তিন ম্যাচের সিরিজে তাদের কোনো ব্যাটসম্যানের নেই ফিফটি, কারও নেই ৪ উইকেট। তিন বছরেরও বেশি সময় পর ওয়ানডে খেলতে নামা তাসকিন আহমেদ নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ৮.২ ওভারে ৩২ রান খরচায় নেন ১ উইকেট। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার। ২টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন ওভার হাত ঘুরিয়ে ১ উইকেট পেয়েছেন সৌম্য সরকার। ম্যাচসেরা হয়েছেন ৫৫ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহীম। উইকেটের পেছনে চারটি ক্যাচও নিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের সিরিজটা ব্যাটে-বলে রাঙিয়েছেন সাকিব। এক ফিফটিতে ১১৩ রান ও ৬ উইকেট শিকার ওয়ানডের এক নম্বর অলরাউন্ডারের। তবে গতকাল বোলিং স্পেল শেষ না করেই মাঠ ছাড়েন কুঁচকির চোট নিয়ে। ৪.৫ ওভার বল করে সাকিব ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে সিরিজ সেরার পুরস্কারটা উঠেছে সাকিবের হাতেই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবার সিরিজসেরার পুরস্কার হাতে নিজের ইনজুরির অবস্থা জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। এখন বেশ ব্যাথা অনুভব করছি।’ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ষষ্ঠবার ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এতদিন পাঁচটি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার নিয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন সাকিব। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৪তম বার সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন সাকিব। ক্রিকেট ইতিহাসে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। এই রেকর্ডে সাকিবের আগে রয়েছেন শুধু জ্যাক ক্যালিস (১৫), বিরাট কোহলি (১৮) ও শচীন টেন্ডুলকার (২০)।