
সচ্চিদানন্দদেসদয়,আশাশুনি থেকে: আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট বেড়িবাঁধ নির্মান কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে কিছুদিনের মধ্যে বাঁধ নির্মান কাজে ব্যবহৃত সস্তা জিওব্যাগ (মাটি ভর্তি) কিছুদিনের মধ্যে নদীতে সরে যেতে শুরু করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঈদের আগে কাজ শেষ করে শ্রমিকরা বাড়িতে ফেরার তাগিদে তড়িঘড়ি করে রাস্তায় ও রিভারসাইটে মাটি না দিয়ে কার্পেট বিছিয়ে বালু ভর্তি সস্তা জিওব্যাগ দিয়ে কাজ শেষ করে এলাকা ছেড়ে চলে যান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ শেষ হতে না হতেই তাদের কাজের অনিয়মের ধরা পড়তে শুরু করে। ইতিমধ্যে বালির ব্যাগ সরে নদীগর্ভে চলে যেতে শুরু করেছে। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধটি নির্মান কাজের পরও পূর্ববতঃ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে দাবী করেন স্থানীয়রা। এ
তাছাড়া স্থানীয় শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করে চলে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনদের বিরুদ্ধে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে দয়ারঘাটে ভেঙ্গে যাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪ নং পোল্ডারে বাঁধ রক্ষার জন্য ৩টি ব্রিচ ক্লোজিং শেষে প্রায় ৫৩৫ মিটার এলাকায় নদী সংরক্ষণ করতে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ সাজানো হয়েছে। নির্মান কাজে প্রাক্কলিত মূল্য ১৩৮.৫৬ লক্ষ টাকার এ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। কাজ শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই নিমাই মÐলের বাড়ীর সামনে ও ব্রাইট স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে রাস্তার ¯েøাবের বালির বস্তা ধ্বসে নদীতে চলে যাচ্ছে। বাঁধ নির্মান করার সময় কান্ট্রি সাইটে ৫ ফুটের মধ্যে স্কেবেটর মেশিন দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি তুলে বাঁধ নির্মান করা হয়। মনি দোকানদারের পুকুরে প্রথমে বালি ভরাট করে সেই বালি জিও ব্যাগে ভরে বাঁধে লাগানো হয়। অবাক করা বিষয় হলো সেই একই স্থানের সম্পূর্ণ বালি তুলে মেশিনে করে বাঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আব্দুল হাদির ঘের ও সুন্দরবন হ্যাচারীর পুকুর থেকে একই অবস্থায় প্রথমে বালি ভরাট দিয়ে সেই বালি দিয়ে রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। এসময় স্থানীয় লোকজন জনপ্রতিনিধিরা বাঁধা দিলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, তারা এগুলো অবশ্যই ভরাট করে দেবেন। তারা বালি উত্তোলনের জন্য মেশিন নিয়ে এলেও অজ্ঞাতকারণে ভরাট না করেই মেশিনটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। আজও তাদের কিছু পাইপ পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলা রয়েছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে সে মেকআপ ধুয়ে যাওয়ায় তার আসল রুপ ফুটে উঠেছে। বৃষ্টিতে বাঁধের বালি ধুয়ে স্থানে স্থানে পুরানো বাঁধের থেকেও নিচু হয়ে গেছে। বালির বস্তা সরে যাওয়া ও নিচু বাঁধের কারনে স্থানীয়দের আশঙ্কা কাটছেনা।
স্থানীয় বাসিন্দা বিভ‚তি ভ‚ষণ বলেন, গত ৭ এপ্রিল কাজ পায় কুষ্টিয়া, চৌরহাসের নাসির উদ্দীন মোল্যার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমে বরাবরের মত বাঁধ মেরামতের কোন প্রকল্প পরিচিতি দেওয়া হয়নি। পরে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে প্রকল্প পরিচিতি টাঙানোর নির্দেশ দিলে বাঁধের মূল নকশা ও প্রকল্প পরিচিতির দুটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।
সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, বাঁধটির ১৪ ফুট প্রস্থ, টপ আড়াই ফুট, কান্ট্রি সাইড ২২ ফুট ও রিভার সাইট ৩০ ফুট করে ¯েøাবে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু কাজ শুরুর পর দেখা যায় সে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। কাজ হচ্ছে পূরানো রাস্তার গাঁ দিয়ে। ওই রাস্তার মাঝ বরাবর ধরে ১৪ ফুট মাথা তৈরীর কাজ করা হচ্ছে। উচ্চতা আড়াই ফুট করার কথা বললেও করা হচ্ছে মাত্র এক থেকে দেড় ফুট।
এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন বাঁধা দিলে আবার পুরানো রাস্তার ¯েøাব থেকে ১৪ ফুট মাথা করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তার উচ্চতা সেই একই রকম করা হয়।
রিভার সাইটে ৩০ ফুট ও কান্ট্রি সাইটে ২২ ফুট ¯েøাব করার কথা থাকলেও কোন নিয়মই মানা হয়নি। কান্ট্রি সাইটে তো মোটেই নয়। শ্রমিকদের পাশাপাশি স্কেবেটর মেশিন দিয়েও শুকনো ঝরঝরে ধুলো মাটি দেওয়া হয়েছে নতুন বাঁধে। এছাড়া নিমাই মÐল, সমীর রায় ও আব্দুল হাদির মৎস্যঘের থেকে মেশিন দিয়ে বাঁধের নিচের মাটি কেটে রাস্তায় দেওয়া হয়েছে। ফলে কান্ট্রি সাইটে বৃষ্টির পানি জমে ভাটার সময় বালির বাঁধ চুঁইয়ে নদীতে যাচ্ছে। সে জন্যে প্রতি ভাটায় একটু একটু করে রিভার সাইটে বিছানো বালির বস্তাগুলো নদীতে সরে যাচ্ছে। আবার রিভার সাইটে প্রয়োজনীয় মাটি দিয়ে ¯েøাব না করে যেনতেন প্রকারে সমান করে কার্পেট বিছিয়ে বালির সাজানো হয়েছে। কখনও বৃষ্টি কখনও করোনা আবার কখনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে পূঁজি করে বাঁধ নির্মানে ব্যাপক তড়িঘড়ি করা হয়েছে।
দয়ারঘাট গ্রামের গণেশ মÐল বলেন, ¯েøাব থেকে বস্তা যাতে সরে না যায় সে জন্যে আমরা বাঁশ বা বল্লির পাইলিং করে দিতে বলেছিলাম কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের পরামর্শের কোন মূল্যায়ন করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান এসডিও মাজহারুল ইসলাম এবং এসও রাব্বি হাসানের উপস্থিতিতে কন্ট্রাকটর সম্পূর্ণ ইচ্ছামত কাজ করে গেছেন। রাস্তা উঁচু করার কথা বললেও তারা কোন আমলেই নেইনি। রাস্তার নিচে দেড় ফুট জায়গা না রেখেই সেখান থেকে গর্ত করে মাটি তুলে রাস্তার উপরে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে জেলেখালি গ্রামের নিমতলা নামক স্থানে বাঁধ মেরামতে কাজ পেয়েছিলেন বাবুল হোসেন নামে এক ঠিকাদার। তার কাছ থেকে মৌখিকভাবে কাজ বাগিয়ে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারী। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানটিতেই তিনি বাঁধের দুপাশে কোন মাটি না দিয়ে খাঁড়া উঁচু করে নদীর দিকটায় কার্পেট বিছিয়ে কাজ শেষ করেন। কিন্তু এখানেও বৃষ্টিতে তাদের মেকআপ গলিয়ে দেয়। খাঁড়া রাস্তার দুধারেই মাটি বসে বাঁধটি ফের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় শ্রমিক গৌতম সানা জানান- আমিসহ ৩ জন বাঁধে কাজ করেছি। কিন্তু ঈদের পর এসে টাকা দেব বলে তারা আমাদের প্রায় ৮ হাজার টাকা আজও দেয়নি আর বাঁধের পাশে আসেনি।
এ ব্যাপারে এসও রাব্বি হাসান বলেন- ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা সামাদ সাহেবকে বারবার কাজটি সম্পন্ন করতে বলছি। কিন্তু তারা বৃষ্টির অজুহাতে আজও কাজে আসেনি। এক বছরের মধ্যে বাঁধের যেকোন সমস্যা তারা দেখবেন। রাস্তার ধারে যে মাটি কাটা হয়েছে সেসব খানাখন্দ গুলো আমরা ভরাট করে দেব। আমাদের ড্রেসার মেশিনটি এখানে আনার পরে প্রতাপনগরের অবসস্থা খারাপ হওয়ায় বর্তমানে সেখানে কাজ করছে। রিভারসাইটে যেসব ¯েøাবে মাটি নেই সেখানে পূণরায় মেরামত করতে হবে। আর নিমতলায় যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে তাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। বাঁধের যে উচ্চতা হওয়ার কথা নকশায় উল্লেখ আছে সে মোতাবেকই বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হবে। অনিয়মের সাথে কোন আপোষ করব না।