
কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে বির্তকিত বিদ্রোহীদের অন্তর্ভূক্তি
মশিউর রহমান ফিরোজ: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের অন্যতম সেরা সংগঠন। স্বাধীন ভূ-খন্ড ও স্বাধীন বাংলাদেশ স্থাপর্থে অন্যতম রপকার এই রাজনৈতিক সংগঠন। সেই সংগঠনের কেন্দ্রের মৌখিক নির্দেশ অমান্য করে সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে বিদ্রোহী, বিএনপি, জামায়াত শিবির, মাদক ও অপরাধমুলক কর্মকান্ডে লিপ্ত আসামীদের (প্রায় অর্ধেক) কার্যনির্বাহী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পুনাঙ্গ কমিটির গঠনের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে জেলায়। ত্যাগী পরিশ্রমী এবং নিবেদিত আ’লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কেন্দ্রের মৌখিক নির্দেশা অমান্য করে বিদ্রোহী ও ইউপি নির্বাচনে সরাসরি নৌকার বিপক্ষে অবস্থান করা নেতাদের কার্যনির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে খ্যান্ত দেননি সভাপতি, সাধারন সম্পাদক। কমিটিতে স্থান দিয়েছে মাদক সেবনকারী অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলার আসামী, বঙ্গবন্ধু পরিবার নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারী, বিএনপি জামাত পরিবারের সক্রিয় সদস্য. উপজেলা বাস্তহারা দলের সাধারণ সম্পাদক. ব্যক্তিগত ড্রাইভার মোটরসাইকেল চালক. ছাত্রদলের ৯০ এর দশকের ছাত্রদল নেতাসহ মাদক, অপহরণ চাঁদাবাজি এসিড নিক্ষেপের মত জঘন্যতম অপরাধীদেরকে। বাংলাদেশ আওয়ামীলী দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কমিটি দেখে হতভম্ব হয়েছেন এলাকার সুশিল সমাজের মানুষ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে আগস্ট শোকের মাস। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠন আগস্ট মাস শোকের মাস হিসেবে গোটা মাসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। এই মাসে অপরাধের কারণে কমিটি ভেঙে দেওয়া ও বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু নতুন কোন পুর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়না। বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে গত ১৩ আগস্ট আশাশুনি উপজেলা আ’লীগের চেয়ারম্যানের স্বীয় কার্যালয়ে সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মুস্তাকিমের সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক শম্ভু চরণ মন্ডলের সঞ্চালনায় একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রস্তÍুতি সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও এমপি রুহুল হকের নাম ব্যবহার করে শোকের মাস হওয়া সত্বেও আনন্দ উল্লাস করে করতালি দিয়ে উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে।
জানা গেছে কমিটিতে স্থান পেয়েছে দলের একাধিক বার বিদ্রোহী প্রার্থীসহ বর্তমান বিএনপি জামাতের কমিটিতে থাকা নেতা কর্মীরা। আরো স্থান মিলেছে মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবনকারী, নাসকতা, এসিড নিক্ষেপ, চুরি, অপহরণ মামলার জঘন্যতম অপরাধীরা। আর কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আওয়ামীলীগের ত্যাগী পরিশ্রমী এবং নিবেদিত নেতাকর্মীদের। পুনাঙ্গ কমিটি প্রকাশের পর আশাশুনি উপজেলায় আ’লীগের ত্যাগী নেতকর্মীদের ভেতর প্রচন্ড অসন্তোষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
আরো জানা গেছে সাধারনত দলের উপদেষ্টা করা হয় প্রবীণ নেতাদের। সেইখানে এই কমিটিতে উপদেষ্টা করা হয়েছে প্রাথমিক সদস্য পদ না থাকা কয়েকজন অল্প বয়স (বিতর্কিত) ব্যক্তিদের। এছাড়াও গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক তাদের পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন নাপাওয়ায় প্রায় সব ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল বলে জানা গেছে।
স্থানীরা জানান প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতরা হলেন সহ-সভাপতি পদে দুই বারের বিদ্রোহী প্রার্থী বঙ্গবন্ধু পরিবার নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারী ঢালি মুহাম্মদ শামসুল আলম, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মোল্লা, আনুলিয়া ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুসের পক্ষ নিয়ে নৌকা প্রতিক হারিয়ে দেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী (অডিও ক্লিপসসহ প্রমানিত) আলমগীর আলম লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই বারের বিদ্রোহী প্রার্থী দীপঙ্কর বাছাড় দিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আশাশুনি সদর ইউনিয়নের দুই বারের বিদ্রোহী প্রার্থী স ম সেলিম রেজা মিলন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক পদে বিএনপি জামাত পরিবারের সক্রিয় সদস্য সাবেক জাতীয় পার্টির নেতা সাজ্জাদুল হক টিটল, তথ্য গবেষণা সম্পাদক পদে বর্তমান বুধহাটা ইউনিয়ন বিএনপি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা বাস্তহারা দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক পদে বিদ্রোহী প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র সানাক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পদে দুই বারের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক জাতীয় পার্টির নেতা নজরুল ইসলাম গাইন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত ড্রাইভার মোটরসাইকেল চালক রমেশ মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক পদে আশাশুনি উপজেলার অনেক ত্যাগী ও প্রবীণ আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কাছের লোক সদ্য চাকরি থেকে অবসর গ্রহণকারী কালিপদ দাস, শিক্ষা ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ছাত্রদলের ৯০ দশকের ছাত্রদল নেতা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে বিদ্রোহী প্রার্থী ওমর সাকি পলাশ। এবং সদস্য পদে মাদক সেবনকারী অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলার আসামী আসমাউল হোসেন, মাদক অপহরণ চাঁদাবাজি ও এসিড নিক্ষেপের মতো অপরাধী আবুল কাশেম খোকা, নাশকতা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি মো. হারুনুর রশিদকে অন্তভুক্তি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেন লিটন বলেন, মুল যারা আ’লীগ করে তাদের অধিকাংশ বাদ দিয়ে যারা আ’লীগ করেনা করার মতনা জুনিয়ার ও অনেক ইউনিয়নে স্বাধীনতার বিপক্ষদের স্থান দেওয়া হয়েছে। আমি চাই জনপ্রিয় ও আগামীতে আ’লীগের কিছু দিতে পারবে সে ধরনের লোকগুলো কমিটিতে আসুক। ব্যক্তিগত ড্রাইভার মোটরসাইকেল চালক কমিটিতে রাখা সম্পর্কে তিনি বলেন আমি সাধারন সম্পাদক কাছে শুনেছি আপনি কেন তাকে কমিটিতে রাখছেন তিনি আমাকে বলেছে ও আমার সাথে থাকে তাই কমিটিতে রেখেছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই কমিটি নিয়ে কাজ করা খুব কষ্ট হয়ে যাবে।
আশাশুনি উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এ বি এম মোস্তাকিম বলেন আমাদের পুনাঙ্গ কমিটির মৌখিক অনুমোদন দিছে। শোকের মাস বলে কাগজ পত্রে সহি হয়নি। এখানে আমরা দুজনে কমিটি ভাগ করে নিয়েছি। আমার ভাগে ৩১ জন। আর সাধারণ সম্পাদকের ৩০ জন। সেনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য বিষয় তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
আশাশুনি উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শম্ভু চরণ মন্ডল বলেন, আমরা কমিটি গঠন করে আমাদের এমপি সাহেবের অবগত করেছি। তারপর জেলায় জমা দিয়েছি। তিনি সব কিছু জানেন। বির্তকিত ব্যক্তিগত ড্রাইভার মোটরসাইকেল চালক কমিটিতে স্থান দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন আমাদের কাছে পুনাঙ্গ কমিটি জমা হয়েছে। আমরা অনুমোদন দেয়নি। শোকের মাস শেষে যাচাই বাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম ফজলুল হক বলেন, আশাশুনির সভাপতি সাধারন সস্পাদক স্বাক্ষরিত একটি পুনাঙ্গ কমিটি পেয়েছি। আমরা বলে দিয়েছি শোকের মাস শেষে আমরা যাচাই বাচাই করে তারপর দেখা যাবে। কেন্দ্রের মৌখিক নির্দেশনা আছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলে থাকতে পারবে। কিন্তু কমিটির কোন গুরত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারবেনা। বির্তকিত অনুপ্রবেশকারি সম্পর্কে তিনি বলেন এরকম যদি কেউ থাকেন তাহলে আমরা আলোচনায় বসবো। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহন।
সাতক্ষীরা ৩ সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক বলেন, আমার নির্দেশনা ছিল যারা আওয়ামীলীগ করে ও আওয়মীলীগের কর্মী তাদের সবাইকে সমন্বকরে কমিটি করতে। যদি কোন অসমন্বয় হয়ে থাকে তার দায়িত্ব সভাপতি সাধারন সম্পাদকের।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম. মোজাম্মেল হোসেন (দায়িত্বপ্রাপ্ত খুলনা বিভাগ) বলেন, নিয়মানুযায়ী জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কমিটি যাচাই-বাচাই করবে এবং কার্যনির্বাহী কমিটি আলোচনা করবে তারপর অনুমোদন দিবে। এব্যাপারে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক সাথে কথা বললে ভাল বলতে পারবে। বিদ্রোহীদের কার্যনির্বাহী কমিটিতে স্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন জেলা কমিটিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।