
আশাশুনি প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা-আশাশুনি উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত পানি উন্নয়ন বের্ডের ভেড়ি বাঁধ। কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে মেরামতের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার ভাঙ্গন দেখা দেয়। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা দিয়ে নদীর পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয় ভাঙ্গন কবলিত এলাকার জনসাধারন। অথচ ভেড়ি বাঁধ মেরামতের দায়িত্ব নিয়োজিত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের নতুন নতুন বাড়ি হয়।সম্পত্তি ব্যবসার স¤প্রসারন হয় তাদের।
নদী বেষ্ঠিত সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২ টি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ নং বিভাগের আওতাধীন ভেড়িবাঁধ রয়েছে ৩৭৭ কিলোমিটার এবং ২ নং বিভাগের আওতাধীন ভেড়ীবাঁধ রয়েছে ৪১৬ কিলোমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রাধীন বিশাল এই ভেড়ীবাঁধের কোন না কোন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয় প্রতি বছর। উপজেলার বহু এলাকা ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসার আগেই মেরামত কৃত বাঁধে আবার ভাঙ্গন দেখা দেয়।
প্রতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের কারন হিসেবে ভুক্তভোগিরা মনে করেন, সিডিউল মোতাবেক কাজ হয় না। বাঁধ নির্মান কিংবা মেরামতের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিডিউলের ৫০ ভাগ কাজেই হয় না। ফলে প্রতি বছর বর্ষা, জলোচ্ছ¡াস এবং ঝড়ে আশাশুনি উপজেলার ভেড়ি বাঁধের অধিকাংশই ভাঙ্গন দেখা দেয়। অনেক ভেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকজন অভিজ্ঞ ঠিকাদার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অলিখিত সিষ্টেম চালু রয়েছে। ফলে সিডিউল মোতাবেক কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না। তারা জানান, কাজের ওয়ার্ক অর্ডার থেকে শুরু করে কাজের ফাইনাল বিল পর্যন্ত দফায় দফায় উৎকোচ দিতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্মচারি, কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীকে। সিডিউল মোতাবেক ১০০ভাগ কাজ করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্ধারিত হারে পার্সেন্টেজ দিতে হয়। না হলে সব বিল পাওয়া যায় না। ফলে ঠিকাদের ভাল ভাবে কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও বাধ্য করানো হয় অনিয়মের আশ্রয় নিতে। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুষের হার এত বেশী অধিকাংশ ক্ষেত্রে লাভ তো দুরে থাক আসল পুঁজি বাচাঁনোই কঠিন হয়ে পড়ে।
কয়েক জন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, এই বিভাগে কাজ করে তারা আর্থিক অবস্থার কোন উন্নতি করতে পারেনি। অথচ এই বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারি ও প্রকৌশলীরা লাখ লাখ টাকার সম্পাদের মালিক হয়েছেন।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২ নং বিভাগের আওতাধীন ভেড়ীবাঁধ রয়েছে ৪১৬ কিলোমিটার। তার মধ্যে আশাশুনি খোলপেটুয়া নদীর পুই জ্বালা, খাজরা, বুধহাটা, নওয়াপাড়া, আশাশুনি দয়ারঘাট, শ্রীউলা, প্রতাপনগর এলাকায় ভাঙ্গন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। আশাশুনির ভাঙ্গন এলাকা প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যায় করে মেরামত করার পরও শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নিতীর কারনে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারো ভাঙ্গন শুরু হয়। এতে লাভবান হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারি ও কর্মকর্তারা। আর কপাল ভাঙ্গে ভাঙ্গন কবলিত আশাশুনি এলাকার মানুষের।