সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি প্রতিবেদক : আশাশুনি উপজেলা সদরে ভেঙ্গে যাওয়া রিং বাঁধ আটকানো সম্ভব হলেও পাউবো’র মূল বেড়ী বাঁধ নির্মান কাজ সম্ভব হয়নি। প্লাবিত এলাকার পানিবন্ধী মানুষ সুপেয় পানি, খাদ্য সংকট, স্যানিটেশন ও বসবাসের সমস্যা জর্জরিত রয়েছেন। এছাড়া উপজেলার আরও ১০/১২ পয়েন্টে বেড়ী বাঁধের অবস্থা শোচনাীয় হয়ে পড়েছে। সেদিকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী এলাকাবাসীর।
গত মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) খোলপেটুয়া নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকার শান্তনা হিসাবে বৃহত্তর এলাকাকে রক্ষার্থে দেওয়া রিং বাঁধ ভেঙ্গে যায়। সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তুলনায় ১০ থেকে ২০ সে.মি উচু জোয়ারের চাপে মঙ্গল ও বুধবার দু’দিনে ৬টি পয়েন্টে রিং বাধ ভেঙ্গে জেলেখালী, দয়ারঘাট, আশাশুনি পূর্ব পাড়া, পশ্চিম পাড়া, দুর্গাপুর গ্রাম এলাকা প্লাবিত হয়। শতাধিক মৎস্য ঘের, অসংখ্য সাদা মাছ চাষের পুকুর, বসতবাড়ী, গবাদি পশুসহ আধা পাকা ও কাচা বোরো ধানের কৃষি জমি নিমজ্জিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩ দিন প্রাণপণ পরিশ্রম করে রিং বাঁধ রক্ষার কাজ করা হয়। পাউবো জিও ব্যাগ, জেলা প্রশাসন বাঁধ রক্ষার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য মজুরি হিসাবে ৭ কেজি করে চাউল প্রদান করেন। সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজার ব্যবস্থাপনায় পাউবোর কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহনে বৃহস্পতিবার রিং বাঁধের ভাঙ্গন স্থান (পয়েন্ট) হ্যাঁচারী এলাকা, মনিন্দ্র নাথ, রণজিৎ বৈদ্য, শংকর কুমার, নিরান চন্দ্র ও পুলিন কুমারের বাড়ির কাছে রিং বাঁধ আটকানোর কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন নিয়মিত কাজের খোঁজখবর নেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
দীর্ঘ ৯ মাস অতিক্রান্ত হলেও সুপার সাইক্লোনের আঘাতে (২০ মে-’২০) ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ বাঁধা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে দ্বিতীয় দফায় (৩০ মার্চ- ’২১) এলাকাটি প্লাবিত হওয়ায় ৩৫০ পরিবারের মানুষ সুপেয় পানি, খাদ্য সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যা জর্জরিত হয়ে পড়ে। কাজ-কাম না থাকা, মাছের ঘের ও ক্ষেত খামার তলিয়ে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সরকারি ভাবে শুক্রবার প্লাবনের শিকার ৩৫০ পরিবারকে ৭ কেজি করে চাউল দেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সুপেয় পানি সরবরাহ করলেও প্রত্যন্ত প্লাবন কবলিত এলাকার অনেকের কাছে পানি পৌছানো স্ভব হচ্ছেনা। অপরদিকে উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও বড়দল ইউনিয়নে ১০/১২ পয়েন্টে বেড়ী বাঁধের উপর দিয়ে পানি উপচে ভিতরে ঢোকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। হরিষখালী ও কুড়িকাহুনিয়া বাঁধের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। জোয়ারের সময় বাঁধটি উপচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব স্থানে পুনরায় কাজ না করলে সামনে অমাবশ্যাসহ পরবর্তীতে পানি বৃদ্ধি ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে এসব বাঁধ উপচে ও ভেঙ্গে পুনরায় গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বিরাজ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার ও এসডিই মাজহারুল ইসলাম জানান, সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তুলনায় নদীতে কমপক্ষে ১০-১২ সেঃমিঃ পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৫৪ মিঃ উচ্চতায় পরিণত হওয়ায় রিং বাঁধ টিকতে পারেনি। অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে ভাঙ্গন কবলিত রিং বাঁধ রক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার থেকে মূল বাঁধে দু’টি পয়েন্টে ২১০ ফুট ভাঙ্গন স্থানে ক্লোজারের বেডের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। রোববার জিও বস্তায় বালি ভরে ছোট ক্লোজারের চাপান দেওয়া হবে। পরবর্তীতে বড়টি ক্লোজার চাপান দেওয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লোজার চাপান সম্পন্ন সম্ভব হবে ইনশাল্লাহ। ক্লোজার আটকানোর পর জেলেখালী ও দয়ারঘাট এলাকার দুর্দশা ও চরম ঝুঁকিতে থাকা ৫৩৫ মিঃ বেড়ী বাঁধের কাজ করা হবে।
কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার মোস্তাক হোসেন জানান, কাজের টেন্ডার হলেও এখনো ওয়ার্ক অর্ডার পাইনি। পাউবো কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিয়ে ওয়ার্ক অর্ডারের আগেই এখানে কাজের সকল প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। কাজ করার ক্ষেত্রে গোণ বেগোণের বিষয়টি জড়িত। এখন সুযোগ মত কাজে হাত দিয়েছি। কাল (রবিবার) একটি ক্লোজার চাপান সম্পন্ন করা হবে ইনশাল্লাহ। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা মূল বাঁধের ভাঙ্গন আটকে ভিতরে পানি উঠা বন্ধ করবো ইনশাল্লাহ। ১৪ ফুট টপ রেখে পুরনো বাঁধকে নতুন বাধের স্লোবে ঢুকিয়ে কাজ করা হবে। এসও রাব্বী হাসান জানান, পাউবো’র এলাকার বেড়ী বাঁধের অবস্থা সম্পর্কে সবসময় সচেতন। খুব শীঘ্রই নিমতলা এলাকার ২৫০ মিটার নির্মান কাজে সাড়ে ১৮ লক্ষ টাকা এবং মানিকখালী থেকে নিমতলা ৭০০ মিটার বাঁধ নির্মানের জন্য ৪১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। খুব শীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।