= দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাট্টা মেম্বররা।
= ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত বন্ধ মেম্বরদের।
= চেয়ারম্যানকে বয়কট/ অপসারনে মেম্বরদের অনাস্থা জ্ঞাপন।
= অনাস্থা প্রস্থাবের সরকারি বিধি বিধান।
= মেম্বরদের প্রকৃত দূর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে চেয়ারম্যানের পক্ষে অধিকাংশ মানুষ।
= দূর্নীতিবাজ ও তার দূর্নীতির চিত্র প্রকাশের দাবী ভূক্তভোগীদের।
= সরেজমিনে গণতদন্তের দাবী এলাকাবাসীর।
নিজস্ব প্রতিবেদক: (পূর্ব প্রকাশিতের পর) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ৩নং কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দাখিল করে একাট্টা হয়েছে পরিষদের ১২ ইউপি সদস্য। ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। অভিযোগ দাখিলের পরও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের মৌন সমর্থন চেয়ারম্যানের পক্ষে থাকায় চেয়ারম্যানকে কাবু করতে নতুন ছক আঁকে মেম্বররা। দূর্নীতির অভিযোগে চেয়ারম্যান পরাস্ত না হলে তাকে বয়কট/চেয়ার থেকে অপসারন করার জন্য আঁকা নতুন ছকে সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করে মেম্বররা। অনাস্থা প্রস্তাবে চেয়ারম্যানের দূর্নীতি প্রমানিত হলে অপসারন হতে পারেন চেয়ারম্যান; আর দূর্নীতি প্রমানিত না হলে বেকায়দায় পড়তে পারেন অভিযোগ দাখিলকারী মেম্বররাও। এদিকে চেয়ারম্যানকে নয়; মেম্বরদেরই প্রকৃত দূর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে ইউনিয়নের সংখ্যাগরিষ্ট সাধারণ মানুষ চেয়ারম্যানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অধিকাংশ মেম্বরের দ্বারা প্রতারনা ও অর্থদন্ডের শিকার হয়ে মেম্বরদের অনিয়ম ও দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরার দাবী জানিয়েছে ভূক্তভোগীরা। আর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে শুধু টেবিলে বসে তার তদন্ত না করে টিবল তদন্তের পাশাপাশি সরেজমিনে গণতদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি দাবী জানিয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। গত ৫ জুন ১ম পর্বে “ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা” - প্রকাশের পর দৈনিক সাতনদীর তথ্যাঅনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব চিত্র।
উল্লেখ্য, আশাশুনির কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস, এম রফিকুল ইসলামের মৃত্যু জনিত কারনে ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে নৌকা প্রতীকে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরী। ঐ বছরের ৩ সেপ্টেম্বর শপথ গ্রহণ করেন তিনি। এর পরদিন (৪ সেপ্টেম্বর) প্যানেল চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পরিষদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহনের ৯ মাসের মাথায় তার বিরদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির ৮ দফা অভিযোগ উত্থাপন করে গত ১ জুন ২০২০ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ঐ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযোগ দাখিলের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে ইউপি সদস্যবৃন্দ। এতে করে জনসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের সেবাপ্রত্যাশীরা।
সরেজমিনে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জান গেছে, অভিযোগ দাখিলের খবর চাউর হলে উপজেলার অফিসপাড়ায় এবং কুল্যা ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা, হাটে-বাজারে আর চায়ের আড্ডায় মানুষের আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে এই বিষয়টি। এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সাধারণ মানুষের মাঝে।
এ বিষয়ে দৈনিক সাতনদীর পক্ষ থেকে ঐ ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের শতাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলা হয়। তারা তাদের অভিমতে বলেন, “অল্প কিছুদিন হলো ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদের দায়িত্ব পেয়েছেন। আপাত দৃষ্টিতে তিনি একজন সৎ, ন্যায় পরায়ন ও ক্লিন ইমেজের মানুষ। একজন সম্পূর্ন নতুন মানুষ প্রথমবার ইউনিয়ন পরিষদের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে সেখানে দূর্নীতি করতে গেলে আইনের ফাঁক ফোঁকর বুঝতেও অন্তত: এক বছর সময় লাগে। এই স্বল্প সময়ে চেয়ারম্যান হারুন চৌধুরী দূর্নীতি করেছেন এটা আসলে খুব একটা বিশ^াসযোগ্য নয়। তবে প্রকৃতই তিনি যদি কোন দূর্নীতি করে থাকেন তাহলে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিৎ।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি সাতনদীকে বলেন, মেম্বররা যতোই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর অনাস্থা জ্ঞাপন করেন না কেন জনগন জানে কে বা করা দূর্নীতিবাজ। তাই চেয়ারম্যানের পক্ষেই সাধারণ জনসমর্থন বেশি।
তারা বলেন, দায়িত্ব পালনে চেয়ারম্যানের তুলনায় অনেক মেম্বরের সময়কাল বেশি হওয়ায় তারা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞ। বিগত দিনে বিভিন্ন ভাতার কার্ড প্রদান, কাবিখা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, ঘর বরাদ্ধের নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করার বহু অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ মেম্বরের বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন সময়ে যে বাজেট-বরাদ্ধ এসে থাকে মেম্বররা তাদের ইচ্ছেমতো তার তালিকা তৈরী ও বন্টন করে থাকেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে তাদের এসব বিষয়ে আপোষ না হওয়ায় বেঁকে বসে মেম্বররা। অপরদিকে ইচ্ছেমতো কাজ করার সুযোগ না দিতে বদ্ধ পরিকর থাকেন চেয়ারম্যান। আর তাতেই বাঁধে মূল বিপত্তি। একাট্টা (ঐক্যবদ্ধ) হয়ে যান মেম্বররা। চেয়ারম্যান উঠে যান অনিয়ম-দূর্নীতির কাঠগড়ায়।
অবশ্য মেম্বররা দাবী করেছেন, চেয়ার্যান বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ বা সমন্বয় না করায় তারা তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ের স্বার্থেই অভিযোগ দাখিল ও অনাস্থা প্রস্তাবের পথে হাটতে বাধ্য হয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দাখিলের পর অধিকাংশ পাবলিক সেন্টিমেন্ট চেয়ারম্যানের পক্ষে যেতে থাকলে অবস্থা পর্যবেক্ষন করতে থাকেন মেম্বররা। পরে তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ফেসবুক লাইভেও একাধিকবার তাদের অভিযোগ ও দাবীর কথা তুলে ধরেন। অবশ্য এ সময় দু’একজন মেম্বর তাদের বক্তব্যে অসংলগ্ন ও চেয়ারম্যানকে হুমকি প্রদান স্বরুপ কথা বলায় তাদের ক্ষমতার খুঁটির জোর কোথায় তা জানতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। অপরদিকে কোন রকম দূর্নীতি করেননি উল্লেখ করে চেয়ারম্যান তার দৃঢ়চেতা মনোভাব প্রকাশ করতে থাকলে এবং তার পক্ষের লোকজনও তাদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন ও মেম্বরদের দূর্নীতির খোঁজ করতে থাকলে নড়েচড়ে বসেন মেম্বররা। মেম্বররা আবারও নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠক ও শলা পরামর্শ গত ৬ জুন ২০২০ তারিখে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নিকট চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে তাদের অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। তবে জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিলকৃত অভিযোগ পত্রে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করে থাকলেও সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে অনাস্থা পত্রে তারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৪টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন।
উল্লেখিত ৪টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- (১) চেয়ারম্যান একজন দূর্নীতিবাজ; তিনি ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ ভরাটে বরাদ্ধ ৭ মে:টন চাউল আত্মসাৎ করেছেন। (২) তিনি সরকারি ত্রাণ আত্মসাৎকারী; করোনার কারনে বরাদ্ধকৃত ত্রানের অনুকূলে ২৩% টাকা আত্মসাৎ করেছেন। (৩) তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারকারী; সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে তিনি নিজের লোক দ্বারা ত্রাণ বিতরণ করেন এবং গায়ের জোরে ইউডিসি উদ্যোক্তাকে অপসারণ করেন এবং (৪) সরকারি সম্পদ বন্টনে অনিয়মকারী; সুপেয় পানি সংরক্ষনের ট্যাংকির অনুকূলে সরকারি নীতির ৪ গুণ টাকা নিয়েছেন। সাথে ৬টি টিউবওয়েল বিতরনেও অনিয়ম করেছেন।
চেয়ারম্যানে বিরুদ্ধে উপরোক্ত অভিযোগ সম্বলিত অনাস্থা পত্র জমা দেয়ার পর জনমনে প্রশ্ন দেখা- “কি হবে এখন ?” কিভাবে হবে উদ্ধুধ সমস্যার সমাধান ?
অনাস্থা প্রস্তাব বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ বিধিমালা- স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর সপ্তম অধ্যায়ে- বিভিন্ন ধারা উপধারায় যা বলা হয়েছে তার আলোকে উল্লেখ করা যায় যে, বিধিমালার ৩৯ এর (৩) উপধারায় অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব প্রাপ্তির পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করিবেন এবং উক্ত কর্মকর্তা অভিযোগসমূহের বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য ১০ (দশ) কার্যদিবসের সময় প্রদান করিয়া অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিবেন। জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হইলে উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী নিযুক্ত কর্মকর্তা জবাব প্রাপ্তির অনধিক ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবে যে সকল অভিযোগের বর্ণনা করা হয়েছে, সে সকল অভিযোগ তদন্ত করিবেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হইলে উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী নিযুক্ত কর্মকর্তা অনধিক ১৫ (পনের) কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকল নিবার্চিত সদস্যের নিকট সভার নোটিশ প্রেরণ নিশ্চিতকরণপূর্বক পরিষদের বিশেষ সভা আহবান করিবেন। নিয়মানুযায়ী সভার কার্যক্রম পরিচালত হবে। এরপর উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী নিযুক্ত কর্মকর্তা সভা শেষ হইবার পর সভার কার্যবিবরণী প্রস্তুত করিয়া আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ সরকারের নিকট প্রেরণ করিবেন। সরকার উপযুক্ত বিবেচনা করিলে, অনাস্থা প্রস্তাব অনুমোদন অথবা অননুমোদন করিবে।
আইনি এ সকল প্রক্রিয়া অনুসরন ও বাস্তবায়ন শেষেই জানা যাবে কি ঘটবে কুল্যা ইপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ ও ইউনয়নবাসীর ভাগ্যে।
এদিকে সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান করতে গেলে দেখা গেছে, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অনাস্থা জ্ঞাপনকে আমলে না নিয়ে চেয়ারম্যানের ক্লিন ইমেজের কথাই ব্যক্ত করছে ইউনিয়নের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। সাতনদীর ক্যামেরার সামনে অনেকেই মেম্বরদেরকেই প্রকৃত দূর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন অভিযোগ, প্রতারনা ও বঞ্চনার কথা। আবার অনেকেই লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে, যার কপি এসে পৌঁছেছে দৈনিক সাতনদীর হাতে।
ঐসব অভিযোগ থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেম্বরদের অনিয়ম, দূর্নীতি, অবৈধ অর্থ আদায়, কার্ড বেঁচাবিক্রি সহ নানাবিধ বিষয় জানা গেছে। অবশ্য অভিযোগসমুহের তদন্ত ও প্রমান সাপেক্ষেই জানা যাবে মেম্বররা প্রকৃতই কোন অনিয়ম বা দূর্নীতি করেছেন কি না।
তবে ভূক্তভোগীরা বলছেন, কাবিখা, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, রেশন, প্রতিবন্ধি ভাতা, ভিজিডি সহ বিভিন্ন বিষয়ে যদি সরেজমিনে বৃহৎ তদন্ত করা হয় তাহলে অনেক সাধূ দরবেশেরও গোমর ফাঁস হতে পারে। তাই প্রকৃত দূর্নীতিবাজ ও তার অনিয়ম-দূর্নীতির চিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরার দাবী জানিয়েছে ভূক্তভোগীরা।
আর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সহ মেম্বর- মহিলা মেম্বরদেরও নানা কর্মকান্ডের বিষয়ে সরেজমিনে গণতদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি দাবী জানিয়েছে সচেতন এলাকাবাসী।
তবে অনাস্থা জ্ঞাপনের পেছনের তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরেক নতুন তথ্য। কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এক সচীব ও সাবেক এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান যে, অনাস্থা জ্ঞাপনের বিষয়টি এই ইউনিয়ন পরিষদের জন্য নতুন নয়। অযৌক্তিক চাহিদা পূরণ না হওয়ায় সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম এস এম রফিকুল ইসলামের আমলেও মেম্বর থাকা অবস্থায় বর্তমান মেম্বর আব্দুল মাজেদ গাজী ও উত্তম কুমার বিশ^াসের নের্তৃত্বে পরিষদের তৎকালীন অন্যান্য মেম্বরদের দলে ভিড়িয়ে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরদ্ধেও অন্তত: ৩ থেকে ৪ বার অনাস্থা জ্ঞাপন করতে যান তারা। কিন্তু তদন্ত হওয়ার আগেই তৎকালীন চেয়ারম্যান মেম্বরদের ডেকে সমন্বয় করে নেন।
এসব বিষয়ে অভিযোগকারী মেম্বরদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মাজেদ গাজীর সাথে যোগাযোগ করতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে ৬নং ওয়ার্ড সদস্য উত্তম কুমার দাশ এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাদের দাখিলকুত ৮ দফা অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন চেয়ারম্যান আমাদের হিস্যা সঠিকভাবে দেননা। তিনি বিভিন্ন রকম অনিয়মের সাথে জড়িত।
তিনি বলেন, এর আগেও আমরা তার বিরুদ্ধে একবার অনাস্থা জ্ঞাপনের প্রস্তুতি নিয়েছেলাম। কিন্তু সেবার প্রস্তুতিকালেই আমাদের মধ্যে সমন্বয় হয়। এবার তিনি (চেয়ারম্যান) কোন সমন্বয়ের উদ্যোগ নেননি।
সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম এসএম রফিকুল ইসলামের আমলে তিনি সহ অন্যান্য মেম্বররা একাধিকবার অনাস্থা জ্ঞাপন করেছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিনি যেহেতু বিএনপি’র চেয়ারম্যান ছিলেন তাই তিনি অনাস্থা জ্ঞাপনের প্রস্ততির সাথে সাথেই আমাদের ডেকে সমন্বয় করে নিতেন।
আর অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেয়ায় জনগনের ভোটে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সেই আস্থার প্রতিদান স্বরুপ এবং গণরায়কে সম্মান দিতে আমি কোনরুপ অনিয়ম দূর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেয়ায় মেম্বররা তাদের অবৈধ সুযোগ সুবিধা আদায় করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে অসত্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ দাখিল করেছেন।
তিনি বলেন, আমি কোন অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত নই। তাই আমি কোন অভিযোগ বা অনাস্থাকে ভয় পাচ্ছি না। তদন্তে যদি আমার দূর্নীতি প্রমানিত হয় তাহলে আমি যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নেব। আর যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে যারা আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য ভিত্তিহীন অভিযোগ দাখিল করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহি অফিসার মীর আলিফ রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। সরকারী নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় সরকারী বিধি বিধানের কথা জানতে চাইলে তিনি উপরোল্লেখিত নিয়মের কথাই ব্যক্ত করেন।
তাই অভিযোগের তদন্ত, তদন্ত শেষে ফলাফল আর কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের অজানা আরও তথ্য জানতে আগামী ৩য় পর্বে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন আর চোখ রাখুন দৈনিক সাতনদী পত্রিকার পাতায় ও অনলাইন মিডিয়ায়।