সচ্চিদানন্দদেসদয়: দশথেকে বিশ বছর আগে দেশ-বিদেশের খবরা-খবর জানার একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও। তখন খবরের সময়ে শহর কিংবা গ্রামের লোকজন একটা নির্দিষ্ট স্থানে খবর শোনার জন্য সমবেত হত। কারণ তখনো সবাব ঘরে ঘরে রেডিও’র প্রচলন ছিলনা। ফলে অনেকেই বিয়েতে উপঢৌকন হিসেবে সনি,ন্যাশানাল, প্যানাসনিক, ডেলট্রন,ভারতীয় সন্তোষ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রেডিও (বেতার) গ্রহণ করত। এরপর অবশ্য রেডিও’র প্রচলন বৃদ্ধি পেয়ে সবাব ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছিল। এর ফলে আর শহর কিংবা গ্রামের মানুষকে দল বেঁধে জড়ো হয়ে খবর শুনতে হতো না। কারণ প্রত্যেকেই তখন নিজ নিজ রেডিও টুইনিং করে খবর শুনতেন।সে সময়ে তরুণ সমাজের কাছে রেডিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তারা রবীন্দ্র-নজরুল সঙ্গীত, গানের ডালি, দূর্বার, সুখী সংসার, দর্পন, ছায়া ছবির গান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, নাটক, শোনায় অভ্যস্থ হওয়ায় রেডিও’র প্রচলন ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে সেই জনপ্রিয়তা তরুন প্রজন্ম বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। সময়ের বিবর্তনে তারা রেডিও ছেড়ে টেপ রেকর্ডার (ক্যাসেট) এর দিকে ঝুঁকে পড়ে। পরবর্তীতে সেটিরও বিলুপ্তি ঘটিয়ে মোবাইল তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।বর্তমানে মোবাইলের কারনে রেডিও’র অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছে। এখন আর তরুণ-তরুণীরা আগের মত রেডিও শোনেন না।তবে এখনো কিছু প্রবীন ব্যক্তি আছেন যারা রেডিও বিবিসি’র খবরের উপর নির্ভশীল। তাদেরই একজন আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের ভীমচনদ্র দেবনাথ প্রতিবেদককে জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতার থেকে সরাসরি সম্প্রচার কৃত খবর শোনার একমাত্র মাধ্যমই ছিল রেডিও। যে খবর শুনে লক্ষ বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে উজ্জ্বিবিত হয়েছিল। তৎকালিন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক আঠারো মিনিটের ভাষণ সরাসরি রেডিওতে শুনে লাখো বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।আশাশুনির রেডিও’র নিয়মিত শ্রোতা বুধহাটা ইউনিয়নের বুধহাটা গ্রামের সবুজ দেবনাথ, বেউলা গ্রামের রামনারায়ন বসাক ও আশাশুনি ইউ'পির বলাবাড়িয়া গ্রামের রনদা প্রসাদ মন্ডল এবং কুল্যা ইউনিয়নের কুল্যা গ্রামের মৃনাল ব্যানার্জী জানান, বর্তমানে বিজ্ঞানের আবিষ্কারে ফলে অতি সহজেই মোবাইল এফ.এম-এর মাধ্যমে আমরা রেডিও অনুষ্ঠান গুলো শুনতে পাই। ফলে নতুন করে আর রেডিও (বেতার যন্ত্র) ক্রয় করে খবর শোনার প্রয়োজন পড়েনা। ফলে দিন দিন আমাদের সেই ঐতিহ্যবাহী রেডিও (বেতার যন্ত্র), যার বৈজ্ঞানিক নাম টেনডেষ্টার হারিয়ে যেতে বসেছে।বিশেষত উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরা,খুলনা,বাগেরহাট সহ বিভিন্ন জেলা গুলোতে সেই সময়ে তরুন যুব সমাজের কাছে খুব প্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সময়ে ঢাকা,খুলনা,কলকাতা আকাশ বানি, এফ এম, রবীন্দ্র-নজরুল সংগীত , নাটক শুনতেন।বিবিসির খবর শুনতে হুমরী খেয়ে পড়তেন জনসাধারন। কিন্তু এই রেডিও যে এতো তাড়াতাড়ি বাংলা থেকে হারি যাবে তা বাংলার মানুষ তখন কল্পনাও করেনি। যার ফলে গ্রাম-শহরে আর রেডিওর গান, খবরাখবর কিছুই শোনা যায় না। একদিকে যেমন রেডিওর জনপ্রিয়তা হারিয়ে তেমনি আবার মার খেয়েছে রেডিও র মিস্ত্রীরা। এখন বাজারে রেডিওর মিস্ত্রীরাও সেই কাজ ছেড়ে আন্য কাজে মন বসিয়েছে তারা রেডিও র বদলে রাখছে অন্যান্য ইলেকট্রনিক সারঞ্জাম। আশাশুনির পুরাতন রেডিও মিস্ত্রী আব্দুল ছাত্তার বলেন আমি বহুদিন ধরে রেডিওর কাজ করেছি কিন্তু এখন মানুষ আর রেডিও ব্যবহার করেনা তাই আমি এখন টিভি মেরাময়তের কাজ করছি। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিৃষ্ণুপুর গ্রামের শেফালী রানী দত্ত একটু অন্যভাবে প্রতিবেদককে জানান, রেডিও’র গুরুত্ব এখনো কমে যায়নি। যাদের কাছে এটির গুরুত্ব থাকা প্রয়োজন তাদের কাছে এখনো এর যথাযথ গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই স্বাধীন বাংলার প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা রেডিও’র মাধ্যমেই শুনেছি। তাই আসুন আমরা সবাই আমাদের হারিয়ে যাওয়া এই রেডিওটির গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনি।তাই এই বেতার যন্ত্রটিকে টিকেয়ে রাখাতে এখনই প্রয়োজন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যুগোপোগী অনুষ্ঠান নির্মাণ করা।