
বিশেষ প্রতিবেদক: আশাশুনিতে শিশুদের বিনোদনের জন্য বরাদ্দকৃত সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা আত্মসাতের পায়তারা চলছে। আশাশুনি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রথম সারির এক প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে দীর্ঘ সাত মাসেও কাজ সম্পন্ন হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকমন্ডলীর অভিযোগের তীর প্রভাবশালী ওই নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগের তথ্যানুসন্ধানে সাতনদীর একটি টিম সরেজমিনে কাজ করছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আশাশুনিতে নয়টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা খাতে ১৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক পিইডিপি ৪ এর আওতায় এ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দের আওতধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হলো- চম্পা খালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাকরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাওচাষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুল্যা বেলেডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইথালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশাশুনি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রতাপনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বরাদ্দের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। খাতা কলমের প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী নেতার দাপটে প্রকল্পটি এখনো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন- মার্চ মাসের শুরুর দিকে বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের উপজেলা পরিষদে ডাকা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এটিও আব্দুর রফিক জানান, শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা খাতে দেড় লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ এসেছে। এসময় উক্ত খাতে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী একটি ছক পূরণ করতে বলা হয়। ছক পূরণ করে আমরা ফিরে আসি। পরবর্তীতে জানানো হয় মেনুয়ালের বাইরে ইচ্ছামত কাজ করা যাবেনা। আশাশুনি লবনাক্ত অঞ্চলের কথা মাথায় রেখে মেনুয়ালে আগে থেকেই এসএস পাইপ দিয়ে কাজ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী মেনুয়ালটি উপজেলা প্রকৌশলী অফিস থেকে ইস্টিমেট করা হয়। এরপর আমাদের মধ্য থেকে দুজন শিক্ষক সাতক্ষীরায় গিয়ে সেখানে এস এস পাইপের জন্য দরদাম ঠিক করে আসে। প্রতি স্কুলের জন্য ৯৯ হাজার এবং আনুসঙ্গিক আরও ১৫/২০ হাজার টাকা খরচ হবে। ফিরে এসে বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের টিও সাইফুল ইসলামকে জানালে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে না জানিয়ে কেন গেলেন? নির্মান সামগ্রী খুলনা থেকে নেয়ার কথা ছিল। এখন এর দায়ভার সম্পূর্ণ আপনাদের। উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী ওই নেতার কথা উল্লেখ করে টিও বলেন, তার সামনে বলবেন আমি আপনাদের খুলনা থেকে নির্মান সামগ্রী কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম কিন্তু আপনারা রাখেননি। টিও’র কথামত প্রধান শিক্ষকরা প্রভাবশালী ওই নেতার বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। এসময় ওই নেতা রক্তচক্ষু ধারণ করে বলেন, আপনারা কেন আমার অগোচরে নির্মান সামগ্রী অর্ডার করে এসেছেন? শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়ে তিনি বলেন, আমি ঠিকাদার ঠিক করে দেব সে আপনাদের কাজ করে দেবে। এরপর ওই নেতা দাপট দেখিয়ে খুলনার ঠিকাদার রহিমকে ফোন দিয়ে কাজের ব্যাপারে বলে দেন। ঠিকাদার রহিম শিক্ষকদের বলেন ইস্টিমেটে এস এস পাইপ দেয়ার কথা আছে কিন্তু আমরা এম এস রড দিয়ে কাজ করবো। স্বল্প খরচে হয়তো এম এস রড দিয়ে কাজ করা যাবে কিন্তু খেলার সামগ্রীগুলো টেকসই হবে না। একথা চিন্তা করে শিক্ষকরা তার শর্তে রাজি হননি। এরপর প্রকল্পের কাজ ওখানেই স্থগিত হয়ে আছে বলে শিক্ষকরা জানান। এদিকে আশাশুনি উপজেলার প্রভাবশালী নেতার প্রভাবে সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকার কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছে না।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে অফিশিয়ালি ইস্টিমেট করার জন্য কাগজ এসেছিল এবং আমি সেটা ইস্টিমেট করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিস্তারিত বলতে পারবেন।
এবিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের টিও সাইফুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে জানাযায় প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির সাথে আতাত করে চলা টিও সাইফুল ইসলাম এ ব্যাপারে জড়িত। এছাড়াও এর আগে তার বিরুদ্ধে একাধিক দূর্ণীতির অভিযোগও রয়েছে।