
আব্দুর রশিদ: আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর শ্রাবন্তী বৈরাগী বিভিন্ন সরকারি অনুদান দেওয়ার নামে গরিব ও অসহায় মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিলে সরকারি অনুদান মেলে, টাকা না দিলে সরকারি অনুদান মেলে না ইউপি সদস্য শ্রাবন্তীর কাছ থেকে। সে এক পিরিয়ড মেম্বর নির্বাচিত হয়ে দুই বছরের মধ্যে হয়েছে কোটিপতি ও করেছে বিলাসবহুল বাড়ি। ইউপি সদস্যের একান্ত সহযোগী ফকরাবাদ গ্রামের মৃত এনায়েত গাজীর মেয়ে জোসনা বেগম। মৌখিক অভিযোগ ও তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, লক্ষ্মী খোলা গ্রামের সুজন মন্ডলের স্ত্রী নিপনিকা মণ্ডল, উজ্জ্বল মন্ডলের স্ত্রী পুষ্পু রানী মন্ডল, কোমল মন্ডলের স্ত্রী দিপালী রানী মন্ডল তাদের নিকট থেকে ৪ হাজার করে টাকা নিয়ে আড়াই বছরের মধ্যে পানির ট্যাংকি দেইনি টাকাও ফেরত দেইনি এমনটাই অভিযোগ তাদের। ফকরাবাদ গ্রামের মৃত বালক গাজীর ছেলে গফুর গাজী ও তার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন দুইজনকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে জোছনার মারফত ৭ হাজার টাকা নিয়েছে বলে তার ছেলে রুস্তম গাজী জানিয়েছে।
বুড়িয়া গ্রামের জগদীশ মন্ডল (বুড়ু) এর স্ত্রী সখি মন্ডল (ডিডব্লিউবি) এর কার্ড করে দিয়ে ৩ হাজার টাকা, রমেশ মন্ডলের স্ত্রী প্রতিবন্ধী টুনি মন্ডলের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ভক্ত বাছাড়ের স্ত্রী ইচ্ছা রানী মন্ডলের কাছ থেকে প্রেগনেন্সি ভাতার কার্ড বাবদ ৫ হাজার টাকা, মৃত বিপিন মন্ডলের ছেলে ভূসুন মন্ডলের প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়ে ৩ হাজার টাকা, গুরুদাসের স্ত্রী সুচিতা মন্ডলের প্রতিবন্ধীর কার্ড করে দিয়ে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে। গত বছর প্রশান্তর স্ত্রী সুক্কুলি মন্ডলের কাছ থেকে (ভিডব্লিউবি) এর কার্ড করে দিয়ে ৪ হাজার টাকা নিয়েছিল বলে জানিয়েছে এই প্রতিবেদককে।
ফকরাবাদ গ্রামের জহুর আলী গাজী (ঢালি-মিস্ত্রি) এর স্ত্রী অভিরন নেছার কাছ থেকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়ে ৪ হাজার নিয়েছে বলে সে জানিয়েছেন। মৃত আবুবাক্কার গাজীর স্ত্রী রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে বিধবা ভাতার কার্ড বাবদ ৪ হাজার টাকা, সোহরাব গাজীর ছেলে আনারুল গাজীর কাছ থেকে তার স্ত্রীর প্রেগনেন্সি ভাতার কার্ড বাবদ ৮ হাজার টাকা, আজারুল কাজী (আজু) এর ছেলে বিল্লাল গাজী ও তার মেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বাবদ দুই জনের কাছ থেকে ১১হাজার টাকা, মোক্তার গাজীর ছেলে ঈমান কাজীর কাছ থেকে রেশন কার্ড দিয়ে ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন, আবুল গাজীর ছেলে লাভলু গাজীর স্ত্রীর প্রেগনেন্সি ভাতার কার্ড বাবদ ৮ হাজার টাকা, ভদ্রকান্ত মন্ডল (কেটু) এর ছেলে দিলীপ মন্ডলের (বিডব্লিউবি) কার্ড করে ৬ হাজার টাকা, বাখের সানার মেয়ে রেনু খাতুন এর কাছ থেকে (বিডব্লিউবি) এর কার্ড দেবে বলে ৫ টাকা নিয়েছে জোসনার হাত দিয়ে সে এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। খোকা সানার ছেলে পলাশ সানা যার আনুমানিক ২৫ বিঘা জমি রয়েছে। তাকেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময় এই মহিলা মেম্বর শ্রাবন্তী বৈরাগী (বিডব্লিউবি) এর কার্ড করে দিয়েছে অভিযোগ এলাকাবাসীর। গোবিন্দ মন্ডলের ছেলে বিশ্ব-মিস্ত্রি সে গত বছর (বিডব্লিউবি) এর কার্ড পেয়েছিল এরপরেও সে চলতি বছর আবারও ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে কার্ড পেয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত বুধবার বেলা ১২টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে চাউল পাচারের সময় ছাত্র জনতার হাতে আটক হয়। তা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হয়। তা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেছে। সেই আটককৃত চাউল ইউনিয়ন পরিষদে রয়েছে বলে জানিয়েছে দফাদার মোস্তাজুল।
ইউপি সদস্য শ্রাবন্তী বৈরাগী বলেন, উল্লেখিত ওইসব লোকজন আমি ভালো চিনিনা। এবং তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। বর্তমান সময়ে বাতাদি নিতে গেলে অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হয়। অতএব তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমি টাকা নিয়েছি এরকম কোন প্রমাণ নেই।
১০ সেপ্টেম্বর চাউল বিতরণ অনুষ্ঠানে ভিডিও বক্তব্যে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, (বিডব্লিউবি) এর কার্ড সংক্রান্তে বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়ম হয়েছে মৌখিকভাবে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, এর আগে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিউজ হয়েছে দেখেছি। টাকা নিয়ে কার্ড করার বিষয়টা আমি জানতাম না। আপনি যখন বলেছেন বিষয়টা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।