সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি থেকে: আশাশুনি উপজেলায় এবছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। ফসলের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতি ভাল থাকলে রেকর্ড পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হবে।
আশাশুনি উপজেলায় আমন ধান চাষের পর বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থেকে যায়। যার মধ্যে কিছু জমিতে নির্দিষ্ট বিরতির পর বোরো ধান চাষ করা হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো ধান চাষের আগে এবং আমন ধান কাটার পর সময়টিতে অতিরিক্ত একটি ফসল নেওয়ার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে কাজ করে আসছে। তাদের পরিশ্রম দিনে দিনে ব্যাপক ভাবে কাজে আসতে দেখা গেছে। সীমিত এই সময়ে পড়ে থাকা জমিতে বিনা চাষে সরিষা চাষ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কৃষি বিভাগ পরিকল্পিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে উপজেলার মাঠে মাঠে হলুদ রঙা গালিচায় শোভা পাচ্ছে সরিষার ক্ষেত। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ ভরে গেছে সরিষা ফুলে। চির সবুজের বুকে এ যেনো কাঁচা হলুদের আল্পনা। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই যেনো ফুলের মেলা। ইতিপূর্বে বেড়ের মধ্যে জমিতে সরিষা চাষ হতো। বর্তমানে মাঠে বিলে বিলে সরিষার ক্ষেত সকলকে উদ্বেলিত করে তুলেছে। সরিষা চাষের পাশাপাশি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন অনেকেই। মধু আহরণের জন্য মৌচাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বিগত বছর (২০২১ খ্রিঃ) পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কৃষি বিভাগ কাজ করে অনেকটা সফল হয়েছিল। অর্থাৎ গত বছর কৃষি বিভাগ ২১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। পুরাপুরি ভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও কাছাকাছি অর্থাৎ ১৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিল। এবছর (২০২২ খ্রিঃ) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫০ হেক্টর জমিতে। সুখের খবর হলো এবার তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েগেছে। এবং ৩৫০ হেক্টরের স্থলে ৩৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ সম্ভব হয়েছে। প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ১.৩ মেঃ টন করে সরিষা উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি সেটি সম্ভব হয় তবে আশাশুনি উপজেলায় এবছর রেকর্ড পরিমাণ ৪৫৫ মেঃ টন সরিষা উৎপাদিত হবে। বর্তমান সময়ে সোয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সরিষার তেলের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি সরিষার তেলের চাহিদাও বেড়ে গেছে। সরিষা ঘরে উঠলে চাষীরা ব্যাপক লাভবান হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আমন ধান কাটার পূর্ব মুহুর্তে ক্ষেতে সরিষা ছড়িয়ে দিতে হয়। এর কয়েকদিন পর ধানা কাটা হয়ে হেলে জমিতে যতটুকু জো থাকে তাতেই সরিষা চাষ শেষ হয়ে যায়। বিনা চাষে ও কম খরচে সরিষা চাষের ফলে চাষিরা অতিরিক্ত ফসল হিসাবে সরিষা ঘরে তুলতে সক্ষম হওয়ায় আগামীতে আরও বেশী পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাজিবুল হাসান জানান, আশাশুনির মাটির গুণাগুণ অনুধাবন করে বারি সরিষা ১৪, ১৭, ৯ ও ১৮, টরি ৭, বিনা ৯, বিএডিসি ১ জাতের সরিষা বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনা, কীটনাশক ও সারের পাশপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রিলে বা বিনা চাষে সরিষা বপনের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। অর্থাৎ ধান কাটার পূর্বে ক্ষেতে সরিষা বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ধান কাটার পর সেখানে সরিষা অঙ্কুরুদ্গমন হয়ে গাছ গজিয়ে বড় হতে থাকে। আমরা চেষ্টা করেছি মৌসুমের শুরুতে বীজ সরবরাহ করতে। এবং অশানুরুপ সাড়া পেয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ইনশাল্লাহ ভালই ফসল ঘরে তুলতে পারবে। সরিষা ঘরে তোলার সাথে সাথে একই জমিতে বোরো আবাদ সম্ভব হবে।