সচ্চিদানন্দদে সদয়, আশাশুনি থেকে: আশাশুনিতে অতি বৃষ্টি ও দানার দাপটে আমন ধানের ফলন্ত গাছ জমিতে শুয়ে পড়েছে। এতে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শাক সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের বেশিরভাগ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন আমন ধান ও সবজিচাষিরা। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল হিমেল হাওয়া। বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে ক্ষতি হয়েছে শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের। বাতাসে নষ্ট হয়েছে মাঠের পাকা রোপা আমন ধানের। ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। ফলে বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। আগামী দুদিন রোদ না হলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।আশাশুনিতে অতিবৃষ্টি ও পার্শবর্তী উপজেলা থেকে ধেয়ে আসা পানির চাপে উপজেলার আবাদী ফসলের ক্ষেত ছয়লাপ হয়ে গেছে। এপর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমপক্ষে ৪৭৫ হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষেত এবং ৮৫ হেক্টর সবজী ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ করেন কৃষকরা। এছাড়া ৫৩০ হেক্টর জমিতে সবজী চাষাবাদ করা হয়। ফসলের ক্ষেত বেশ সবুজে পরিপূর্ন ও অনুকুল পরিবেশে ভরে উঠছিল। অতি বৃষ্টিপাত ও শেষের দিকে এসে দানার বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ভিন্ন উপজেলা থেকে নদী ভাঙ্গন ও বৃষ্টির পানির চাপে আশাশুনির কিছু ইউনিয়নের ফসলের ক্ষেত নাজুক করে ফেলেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমন ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষককে ধান বেঁধে দেয়াসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দানার প্রভাবে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাহত হবে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অনেক ধানের গাছ উঠে দাঁড়াবে।শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে অনেক স্থানে পাকা ও আধাপাকা ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে পাকা আমন ধান নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ধানগুলো ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমনচাষিরা। আধাপাকা ধান নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। রোদ না হলে আমনের ব্পোক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার দরগাপুর ইউনিয়নের কৃষক রহমত আলী জানান, চলতি মৌসুমে জমিতে কয়েক জাতের রোপা আমন ধান রোপণ করেছেন। প্রথম দিকে পাকা ধানগাছের ক্ষতি করলেও পরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছিল। বাতাসে পাকা ও কাঁচা ধান জমিতে শুয়ে পড়ছে। কিছুদিন পর ধান কাটা শুরু হবে। মাটিতে শুয়ে থাকা ধান কাটা নিয়ে পড়তে হবে বিপাকে। শুয়ে থাকা ধান কাটা যেমন কষ্টের, তেমনি ধান কাটা শ্রমিকদের দিতে হবে দিগুণ মজুরি। প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ফসল নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা।বুধহাটা ইউনিয়নের বৈউলা গ্রামের সবজিচাষি দেবব্রত বসাক বলেন, দানার প্রভাবে বিভিন্ন প্রকার সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তিনি হাজার হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এবার দানার প্রভাবে ওই এলাকার সবজিচাষিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম এনামুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে আমন ধানের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। এখন মোটামুটি কিছু কিছু জমির ধানই পাকা রয়েছে। যেসব ধান জমিতে পড়ে গেছে, সে বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আবহাওয়া অনুকূল হলে জমির ধান কাটলে কোনো ক্ষতি হবে না।