সচ্চিদানন্দদেসদয়,আশাশুনি থেকে:
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও ঘেরের লোনা পানিতে আশাশুনির খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের নিন্মাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। বৃষ্টির পানি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার লবন পানির ঘের প্লাবিত হওয়ায় চারিদিকে লোনা পানির ঢেউ থৈ থৈ করছে। যে কারণে সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় এক ফসলি এসব চাষীদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। ঘের মালিকদের উদাসীনতায় আমন চাষাবাদের এসব এলাকার অনেকদিন আগে থেকেই লোনা পানি ঢুকেছে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিলো।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে চাষীরা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এলাকার একমাত্র পানি নিঃষ্কাশনের মাধ্যম কালকীর স্লুইজ গেটের নদী ও ভেতরের অংশে অতিরিক্ত পলি জমে এসব পানি সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের খাল গুলিতে অবৈধ নেটপাটা দিয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ করে কৃত্রিম সংকট তৈরী করা হয়েছে। দ্রুত কালকীর স্লুইজ গেটের পলি অপসারন বা বিকল্প যেকোন উপায়ে দ্রুত পানি নিঃষ্কাশনের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
শুক্রবার (৩০ জুন) সকালে সরজমিনে গজুয়াকাটি বিলে গিয়ে দেখা যায়, রাউতাড়ার মিনি কালভার্ট থেকে গজুয়াকাটিগামী বিলের ভিতরের রাস্তা গোয়ালডাঙ্গা, পিরোজপুর বিলের তীব্র লোনা পানি মিশ্রিত রাস্তা ছাপিয়ে দ্রুত গতি ছড়িয়ে পড়ছে গজুয়াকাটি বিলে। রাউতাড়া উত্তর বিলের মৎস্য ঘের মালিকদের ঘেরের লোনা পানি কালকীর খালে ফেলে দেওয়ায় গজুয়াকাটি বিলে লবন পানি ও বর্ষার পানিতে থৈ থৈ করছে। নিচু এলাকার বেশ কিছু মানুষের তরকারির ক্ষেত,পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। মৎস্য ঘেরের লবন পানি ধানের জমিতে প্রবেশ করায় এই অঞ্চলের একমাত্র ফসল আমন ধান চাষাবাদে প্রান্তিক কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে স্থানীয়রা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, রাউতাড়া উত্তর বিলের মৎস্য চাষিরা তাদের ব্যক্তিগত কলগই দিয়ে অবৈধভাবে জোয়ারের সময় মৎস্য ঘেরে পানি উত্তোলন করে। ভাটার সময় সেই পানি কালকীর খালে আরেকটি গই বসিয়ে পানি সরবরাহ করে। ঐ পানি কালকীর স্লুইজ গেট দিয়ে নদীতে না যেতে পারায় রাস্তা ছাপিয়ে এসব ধানের জমিতে অবাধে প্রবেশ করছে। গজুয়াকাটি ও ফটিকখালী গ্রামের কয়েকটি কাঁচা রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গ্রামের খেটে খাওয়া, চাকুরীজীবি,স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা চরম ভোগান্তির স্বীকার হতে দেখা গেছে।
লোনাপানিতে বড়দল ইউনিয়নের পাচপোতা ও দক্ষিণ বড়দল বিলে এবং খাজরা ইউনিয়নের ফটিকখালী, গজুয়াকাটি, রাউতাড়া বিলের প্রায় ১০ হাজার বিঘা পানিবিন্দ হয়ে আছে। যদি কালকির স্লুইস গেইটের পলি অপসারণ করা না হয় তবে খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া, পিরোজপুর, দুর্গাপুর, গোয়ালডাঙ্গা বিলে একই অবস্থার শিকার হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
এদিকে পানি নিষ্কাশনে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী স্থানীয় চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে শুক্রবার ফটিকখালী গ্রামে মতবিনিময় সভা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় রামপদ সানা, শিক্ষক কিংকর ম-ল, আব্দুল লতিফ সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, তীব্র লোনা পানি মিশ্রিত পানি খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের আমন চাষাবাদের কয়েকটি বিলে জমে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমিতে আমন ধানের ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা এলাকায় বসে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সাথে বলেছি। সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসক এর সাথে কথা বলব। আশা করি দ্রুতই পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান হবে।
কালকীর স্লুইজ গেটের পলি অপসারন, অবৈধভাবে লোনা পানি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খালে অবৈধ নেটাপাটা অপসারণ করে এলাকার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে আমন ধান চাষীদের পাশে দাঁড়াতে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।