
সচ্চিদানন্দদে সদয়,আশাশুনি থেকে: করোনা ভাইরাসের কারণে আশাশুনির কয়েক শত ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা হুমকির মুখে পড়েছে।প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এসব শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়েছেন।শ্রমিকরা নিজ নিজ বাড়ীতে অবস্থান করায় অনেক টা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আশাশুনির বিভিন্ন এলাকার হাটে-মাঠে-ঘাটে ও নদীর পাড়ে প্রতিবছর যে সমস্ত নির্ধারিত চৈত্র সংক্রান্তি মেলা, বৈশাখী ও নববর্ষের মেলা বসতো এবার কোরনা ভাইরাসের কারনে নিষেধাজ্ঞার ফলে কোথাও কোন মেলা বসেনি। ফলে মেলা উদযাপিত না হওয়ায় খেলনা তৈরী যাদের জীবন জীবিকা সেইসব মৃৎশিল্পী শিল্পী কুঠিরশিল্পের পরিবারগুলো এখন দুর্ভোগের কবলে পড়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত মাটি, শোলা, তালপাতাসহ বিভিন্ন উপকরণের যে সমস্ত খেলনা ইতোমধ্যে তৈরী করেছিল সেগুলো বিক্রি করতে না পারায় তারা এখন অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য একান্ত নিজস্ব কৃষ্টি এই গ্রামীণ মেলা। যেখানে চারু ও কারু শিল্প পণ্যের সমারোহু ঘটে, বেচা কেনা হয়। আশাশুনিতে এইসব মেলার পণ্য সম্ভারের আলাদা বৈশিষ্ট রয়েছে। গাঁয়ের নিয়মিত হাট-বাজারগুলোতে এসব পণ্য পাওয়া যায় না। শুধু চৈক্র সংক্রান্তি, বৈশাখী মেলাতেই মেলার বিশেষ চিহ্নিত কিছু পণ্যের আমদানী হয়। মেলার বিচিত্র বর্ণের এসব চারু কারু পণ্য কিনতেই নানা বয়সের মানুষের আগমনে মুখর হয় মেলাগুলো। চারু কারু পণ্যের পাশাপাশি মাটি, শোলা, বাঁশ ও তালপাতার তৈরী নানা খেলনা মেলাগুলোর অন্যতম আকর্ষণ। আশাশুনিতে এসব খেলনা তৈরী করে গাঁয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পেশাদার মৃৎশিল্পী ও খেলনা শিল্পীরা। আশাশুনির প্রায় কয়েকশত পেশাদার মৃৎশিল্পীরা ও কুঠিরশিল্পী নানা খেলনা তৈরীর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্বেও তারা এখনও এই পৈত্রিক পেশাকে আঁকড়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। শুধু মেলাতেই এসব পণ্যের বেচা কেনা বেশী হয় বলেই এদের প্রকৃত মৌসুম হচ্ছে ফাল্গুনÑজ্যৈষ্ঠ ৪ মাস এবং আশ্বিন, অগ্রহায়ণ ও পৌষ এই ৩ মাস। অন্য সময়ে এসব জিনিষের চাহিদা তেমন থাকে না। তেমনি বর্ষা মৌসুমে এসব জিনিষ তৈরী করাও সম্ভব হয় না বলে জানালেন মৃৎশিল্পী দয়ানন্দ পাল।
মেলার মৌসুমের এসব খেলনার চাহিদা পুরণে আগে থেকেই খেলনা বানিয়ে মজুত করে রাখতে হয়। কিন্তু এবার কোথাও নববর্ষ, বৈশাখী ও চৈত্রসংক্রান্তি মেলা না হওয়ায় ওই সমস্ত তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছে না। একারণে করোনা ভাইরাসের দূর্যোগের সময়টিতে আশাশুনির মৃৎ শিল্পী পরিবারগুলো অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করছে।অভিঞ্জ মহল মনে করেনতাদের বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে এ শিল্প কে টিকিয়ে না রাখলে আমাদের গ্রামীন ঐতিহ্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।