সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি: ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আশাশুনিতে যত্রতত্র ফার্মেসি খুলে চলছে ওষুধ কেনা-বেচার ব্যবসা। আশাশুনি উপজেলা ও আশপাশের এলাকা গুলোতে কয়েক শত ফার্মেসি গড়ে উঠেছে। এসব ফার্মেসির বেশির ভাগেরই নেই ফার্মাসিস্ট সনদ। অনেকের ড্রাগ লাইসেন্সটি পর্যন্ত নেই। ওষুধ প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এসব ফার্মেসিতে যেমন মিলছে অবৈধ ওষুধ, তেমনি সেলফ প্রেসক্রিপশনে নিম্নমানের ও ভুল ওষুধ বিক্রি করছে বিক্রেতারা। ফলে একদিকে যেমন ওষুধ ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা, সেই সঙ্গে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও। ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪০ অনুসারে ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই ওই ব্যক্তিকে কমপক্ষে ছয় মাসের ফার্মাসিস্ট কোর্স করে সনদ সংগ্রহ করতে হবে। পরে সংশ্লিষ্ট ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে ফার্মাসিস্ট সনদ জমা দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। ড্রাগ সুপার আবেদন যাচাইয়ের পর ড্রাগ লাইসেন্স দিলেই কেবল ওষুধের ব্যবসা বা ফার্মেসি দেয়া যাবে। সরেজমিনে বেশ কিছু ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাতে গোনা মাত্র ১০-১২ জন ওষুধ ব্যবসায়ীর কেবল ফার্মাসিস্ট সনদ রয়েছে। অন্যদের কারোরই মূলত ওই সনদ নেই। তবে প্রায় প্রত্যেকেরই ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে। আর এসব ড্রাগ লাইসেন্সে উল্লিখিত ফার্মাসিষ্টের নাম কেবল কাগজেই আছে, বাস্তবে অনেকেই ড্রাগ লাইসেন্সে উল্লিখিত ফার্মাসিষ্টকে দেখাতে পাওয়া যায় নি। অনেকে ড্রাগ লাইসেন্স কিনে আদালতের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে ব্যবসা করছে, এমন সংখ্যাও রয়েছে বেশ কিছু। কিছু ফার্মেসিতে ফার্মাসিষ্ট সনদ তো দূরের কথা, ড্রাগ লাইসেন্সটি পর্যন্ত নেই। এভােেব উপজেলার আনাচে-কানাচে অনেক ফার্মেসিতেই অবৈধ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করছে। উঠতি বয়সী কিশোররাই এসব নেশা জাতীয় দ্রব্যের বেশির ভাগ ক্রেতা। বেশ কয়েকটি ফার্মেসিতে ডায়াজিপাম, ক্লোবাজমসহ ড্রাগ নেয়ার জন্য বিক্রয় নিষিদ্ধ দেশি-বিদেশি নানা ওষুধ পাওয়া যায়। তবে একটু বেশি দামে এসব ওষুধ কিনতে হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশাশুনির অনেকেই সাত-আট বছর আগে খুলনা ড্রাগ সুপারের কার্যালয় থেকে অথবা সমিতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে ড্রাগ সুপারের কার্যালয় ফার্মাসিষ্ট সনদ ছাড়াই ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহ করা যায় বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।সচেতন অভিভাবকরা বলেন, একজন ফার্মাসিস্ট ছাড়া কোনো মতেই ওষুধের ব্যবসা চলা উচিত নয়। ড্রাগ সুপার ভুল করেও কোনোদিন ওষুধ ব্যবসার খোঁজ খবর রাখেন না। ফলে যা ঘটা উচিত, তা-ই ঘটছে।