সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি: মনের গাঁথুনি দিয়ে কাঠের উপর ফুল ফুটান নকশা শিল্পীরা। আর ফুল ফুটানোর মধ্য দিয়েই চলে তাদের সংসার। সঠিক বিনিয়োগ আর উদ্যোগ নেওয়া হলে এ শিল্প বিদেশেও রপ্তানী করা যেতে পারে। আর বিদেশে রপ্তানীর মধ্য দিয়ে পাল্টে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির চিত্র। নকশার কাজের চাহিদা বেড়েছে সাতক্ষীরার আশাশুনি সহ সারা দেশে। বর্তমানে অত্যাধুনিক বিভিন্ন কোম্পানীর ফার্নিচার বের হলেও একটুও চাহিদা কমেনি কাঠের ফার্নিচারের। অত্যাধুনিক ফার্নিচার দেখতে সুন্দর হলেও টেকসই না হওয়াতে মানুষের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে এখনো পৌঁছতে পারেনি। আর দিন দিন মানুষ যত আধুনিক হচ্ছে ততই কদর বাড়ছে নিত্যনতুন ডিজাইনের কাঠের ফার্নিচারের। তবে চাহিদা যেভাবে বাড়ছে সেভাবে বাড়ছেনা নকশার কারিগর। নকশার কাজ শিখতে সময় লাগা আর পারিশ্রমিক বেশী পাওয়া বিভিন্ন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়াতে মানুষ এখন আর এ কাজের দিকে বেশী ঝুঁকছেনা।জানা গেছে, নকশার কাজের ভালভাবে আয়ত্ব করতে একজন কারিগরের ৫-৬ বছর সময় লাগে। যদি ভালভাবে মনোযোগ দিয়ে কাজ করে। আর একজন কারিগর পরিপূর্ণ মিস্ত্রী হলে প্রতি মাসে ১৮-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। যারা হাফ মিস্ত্রী হন তারা ৮-৯ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। তবে এক্ষেত্রে নকশার দোকানের মালিক কাজের অর্ডার নেন। তিনি ফার্ণিচার দোকানের মালিকদের থেকে বিভিন্ন দামে ফুলের কাজের অর্ডার নিয়ে তার কারিগরদের দিয়ে করান। এক্ষেত্রে ফুলের উপর দাম নির্ধারণ হয়। যে ফার্ণিচারের উপর ফুল বেশী সে ফার্ণিচারের মজুরীও বেশী। ফুল বেশী হলে খাটের ক্ষেত্রে নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সোফা সেটের ক্ষেত্রে ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কাস্টমারের সাথে নকশা কারিগরদের সরাসরি লেনদেন না হওয়াতে লাভের অংশটা বেশী যায় ফার্ণিচার দোকানের মালিকদের কাছে। তারা সরাসরি কাস্টমার থেকে ফার্ণিচারের অর্ডার নিয়ে ফুলের নকশার জন্য সাব কন্টাকে নকশা কারিগরদের দেন। এক্ষেত্রে একজন ফার্ণিচার দোকানদার আধুনিক ফুলের খাটের জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন। নকশা কারিগররা দেশের বিভিন্ন শহর ও অন লাইন থেকে আধুনিক বিভিন্ন ডিজাইনের নকশার ফর্মা সংগ্রহ করেন। মাঝে মধ্যে হকাররাও ফর্মা খুচরা বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে যান। শুধু আশাশুনির বুধহাটা বাজার না নকশা কারিগরের দোকান এখন উপজেলার বড় বাজারগুলোতে বিশেষ করে আশাশুনি, বড়দল, গুনাকরকাটি সহ ছোট বাজারগুলোতেও এখন গড়ে উঠেছে নকশার দোকান। তবে বিভিন্ন ফার্নিচার দোকান মালিক অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এখন নিজেরাই গড়ে তুলেছেন নকশার দোকান।২০ বছর ধরে এ কাঠের উপর নকশা করার কাজ করছেন আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের মো. তরিকুল ইসলাম। ১২ বছর বয়সে কাঠের উপর বিভিন্ন ডিজাইনের ফুল ফুটানোর কাজে হাতে খড়ি হলেও তিনি এখন একজন পরিপূর্ণ মিস্ত্রী। তাঁর নিজেরও রয়েছে অসংখ্য শাগরিদ (ছাত্র)। অধিকাংশই এখন দিয়েছে নিজস্ব দোকান। ‘পড়ালেখা বেশী করিনি। ক্লাশ ফাইভ শেষ করতে পারিনি। ছোট বেলায় খুব দুষ্ট ছিলাম। তবে পড়ালেখা না করলেও কাজের উপর মনোযোগ থাকায় আমি আজ সফল হয়েছি।’ কথাগুলো এভাবে বলছিলেন সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার নকশা মিস্ত্রী তরিকুল ইসলাম। এখন তিনি দোকান দিয়েছেন উপজেলার বুধহাটা বাজারে। তিনি বলেন, ১৮ বৎসর যাবৎ দোকান করছি বুধহাটা বাজারে। আমি যখন দোকান দেই তেমন একটা নকশার দোকান পাট ছিল না। এখনতো অনেকগুলো নকশার দোকান হয়েছে।তিনি আরো জানান, কাঠের উপর নকশা করার জন্য যদি সঠিক বিনিয়োগ করা হয় তাহলে এ নকশা শিল্প দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব হবে।বুধহাটা বাজারের ফার্নিচার দোকানদার নারায়ন চন্দ্র জানান, আমাদের ফার্ণিচার দোকানের সাথে আগে নকশার দোকান ছিল। কিন্তু নকশার কারিগর আর কাজের সঠিক দাম না পাওয়ার কারণে আমরা এখন ফার্ণিচার তৈরী করলেও নকশার কাজ নিজেরা না করে বাহির থেকে করায়।