সচ্চিদানন্দদে সদয়, আশাশুনি: আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের সুমন ঘোষ এখন বিসিএস ক্যাডার। সুমনের বাবার নাম রতন ঘোষ এবং মায়ের নাম মালতী রানী ঘোষ। এবছর ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষার সকল ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় প্রকাশিত তালিকায় শিক্ষা ক্যাডারে সুমন ঘোষের নাম আসে।
সুমন ঘোষ ২০০৭ সালে আগদাড়ি রহিমিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে জিপিএ-৪.৬০ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন তিনি। সেখানে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ঢাকা কলেজ থেকে ২০১৯ সালে মাস্টার্স শেষ করেন সুমন ঘোষ।
জানাগেছে, সুমনের বাবা রতন ঘোষ একজন কৃষক। পরিবার নিয়ে কোনোরকম খেয়েপরে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। ছেলে সুমন বেশ মেধাবী। বোর্ড পরীক্ষাগুলোতে তার ফলাফলও প্রশংসনীয়। কিন্ত টানাটানির সংসারে সুমনের পড়াশুনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে কৃষক বাবা রতনকে। এরই মধ্যে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রতন ঘোষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় জমানো শেষ সম্বলটুকুও চলে যায় তার চিকিৎসার পেছনে। এরপর ছেলে সুমনের পড়াশুনা পড়ে যায় হুমকির মুখে। তবে হাল ছাড়েনি সুমন। অন্যের কাছ থেকে বই ধার করে টিউশনি করে কোনরকমে নিজের পড়ার খরচটা চালিয়ে নেন তিনি। এভাবেই জীবনসংগ্রামে লড়াকু সৈনিক এক পর্যায়ে জয় করেন স্বপ্নের বিসিএস।
নিজের অর্জনের বিষয়ে সুমন ঘোষ বলেন, মাস্টার্স শেষ করে একাধিক জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা করেছি। যোগাযোগের অভাবে আবার কোথাও বা টাকার অভাবে চাকরি হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে লক্ষ স্থির করলাম বিসিএস পরীক্ষা দেব। প্রস্তুতি নিয়ে ৩৮ তম বিসিএসে অংশগ্রহন করলাম। প্রিমিনিলারিতে টিকে গেলাম, টিকলাম ভাইভাতেও। এভাবে বিসিএস এর সকল বিভাগে উত্তীর্ণ হলাম। পরীক্ষা শেষে নিজের কাছে মনে হচ্ছিল হয়ে যেতে পারে। হলও তাই, মঙ্গলবার বিসিএস এর ফল প্রকাশের তালিকায় শিক্ষা ক্যাডারে নিজের নাম দেখতে পেলাম। সুমন আরো বলেন, পরিশ্রম করলে সবকিছুই সম্ভব। স্বপ্ন পূরণ করতে প্রতিবন্ধকতার সাথে আপস করিনি। চেষ্টা করেছি, সফল হয়েছি। এখন সততা ও নিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে চাই।
সুমনের মা মালতী ঘোষ আনন্দে কেঁদে ফেলেন। বিগত দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, সুমনের বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তখন ঠিকমত সংসার চলতো না। ওর ঠাকুরদা যতটুকু পেরেছেন আমাদের জন্য করেছেন।
সুমনের ঠাকুরদা গণেশ ঘোষ বলেন, সুমনের বাবা অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ভারতে চিকিৎসার জন্য পড়েছিল। তখন ওদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই ছিল। আমি যতটুকু পেরেছি করেছি। সুমনও চেষ্টা করেছে নিজের সাধ্যমত। নিজের চেষ্টায় আজ সে সফল হয়েছে। শুনেছি সুমন বিসিএস ক্যাডার হয়েছি। ক্যাডার কি সেটা বুঝিনা, তবে ওর সাফল্যে আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে।