
অজয় কান্তি মন্ডল: উজ্জ্বল দাদা বারবার ফোন কলে দিবকর দাদাকে যত দ্রæত পারা যায় আমাদের প্রবেশের নির্দিষ্ট গেটের কাছে আসতে বলছিল। অবশেষে দিবাকর দাদা অন্তুর জন্য খেলনা এবং হীরার রাতের খাবার নিয়ে আসল কিন্তু আমরা তখন ভিতরে। আমি গার্ডদের বলে বাইরে আসলাম। দাদা অন্তুকে কোলে নিয়ে খেলনাটা দিল। অন্তু অনেক খুশি মামাবাবুর থেকে খেলনা পেয়ে। বেশি সময় ব্যয় না করে দাদাদের থেকে বিদায় নিয়ে আবার ভিতরে প্রবেশ করলাম। কারন ওদিকে‘নীলিমা’ভিতরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সেবার নীলিমা ও প্রথম দেশের বাইরে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি স্কলারশিপ হয়েছে ওর। তাই আমাদের সাথে ওর যাওয়া। ভিতরে আসতেই দেখি নীলিমার পরিবারের সবাই সাথে ওর সব বন্ধু-বান্ধব এসেছে ওকে বিদায় জানাতে। আঙ্কেল, অ্যান্ট, ওর সব বন্ধুসহ ওর নিজের চোখে জল। সেটাই স্বাভাবিক বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আজ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক বুঝিয়ে আঙ্কেল আন্টকে আশ্বস্ত করলাম ‘আমরা তো আছি নীলিমার কোন সমস্যা হবে না। আপনারা মন খারাপ কইরেন না’। আঙ্কেল আন্টকে বুঝাতে গিয়ে নিজের চোখের জলও বাঁধ মানল না। বারবার মনে পড়ছিল মা বাবা সহ পরিবারের সবার কথা। আমরা চলে আসার সময় অনেক কান্নাকাটি করেছিল তারা সবাই মিলে। মনের অজান্তেই কয়েকবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সবার থেকে বিদায় নিলাম। এরপর কাউন্টারে গিয়ে লাগেজ দিলাম সাথে আমাদের বোর্ডিং পাশ নিলাম। কাউন্টারে যিনি ছিলেনওনাকে বলায় উনি বিমানে আমাদের চারজনের পাশাপাশি আসনে বসার ব্যবস্থা করে সেভাবেই বোর্ডিং পাশ দিল।
আমরা বোর্ডিং পাশ নিয়ে এবার ইমিগ্রেশানের কাজ শেষ করব। ইমিগ্রেশান শেষ মানে একরকম দেশ থেকে অফিসিয়ালি বাইরে বের হয়ে যাওয়া। তাই এখানে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা তাদের সুনিপুন দক্ষতার সাথে সব কাগজ পত্র পরীক্ষা করে তবেই দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং দেশ ছেড়ে যাচ্ছি সেটার প্রমান স্বরূপ পাসপোর্টে একটা সিল মেরে দেয়। ইমিগ্রেশানে যাওয়ার আগে আবারো একবার পিছন ফিরে দেখলাম নীলিমার মা বাবা সহ সব বন্ধুরা এখনো কান্না করছে। আমি নীলিমা কে বললাম ‘তুমি দেখা করে আস ওনাদের সাথে এরপর কিন্তু আমরা ভিতরে ঢুকলে আর দেখা হবে না’। নীলিমা সহ আমরা সবাই ওনাদের যতটুকু পারা যায় আবার বুঝিয়ে ইমিগ্রেশানের জন্য নির্ধারিত গেটে হাজির হলাম।
আমার অফিসিয়াল পাসপোর্ট থাকায় সবাই একটু বাড়তি সুবিধা পেলাম।অফিসিয়াল পাসপোর্টধারিদের জন্য নির্ধারিত বুথ সেখান দিয়ে প্রবেশ করলাম। এই বুথে থাকা দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা সবার সাথেই খুব ভালো ব্যবহার করে। কারণ, তারা জানে অফিসিয়াল পাসপোর্ট দেশের প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তারা পেয়ে থাকে। সেজন্য ইমিগ্রেশানে অফিসিয়াল পাসপোর্ট ধারীরা একটু কম ঝুক্কি ঝামেলায় পড়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদেরও দ্রæত ইমিগ্রেশানের কাজ শেষ হল। আমরা ভিতরে ঢুকে যাত্রীদের বসার জন্য নির্দিষ্ট লাউঞ্জে বসলাম। এখনো বোর্ডিং (বিমানে ওঠার জন্য নির্ধারিত গেটে প্রবেশ) শুরু হইনি। হীরা এবং অন্তু দিবাকর দাদার আনা খাবার অল্পকরে খেয়ে নিল।
বাড়ি থেকে পরিবারের সবাই সহ আত্মীয় স্বজনদের সাথেবারবার মোবাইলে কথা হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরেই আমরা দেশের বাইরে চলে যাব তাই পরবর্তীতে ইচ্ছা হলেও সবার সাথে কথা বলতে পারি কিনা সেই চিন্তা থেকে ওই সময়ে যতটুকু পারা যায় সাবাই মিলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। অল্প কিছুক্ষণ পরেই ঘোষণা আসল আমাদের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের বোর্ডিং শুরু হয়েছে এবং নির্দিষ্ট গেট দিয়ে প্রবেশ করে বোর্ডিং এর কাজ সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
স্বভাবতই চীনের সাথে দেশের বানিজ্যিক সম্পর্ক ভালো থাকায় এবং অনেকেই অন্য দেশে যাওয়ার ট্রানজিট হিসেবেও আমাদের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটটা বেছে নেন। এজন্য অনেক বেশি যাত্রী ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের বিশালাকৃতির একটা এয়ারবাস প্রতিদিন রাতে গুয়াংজু-ঢাকা-গুয়াংজু রুটে চলাচল করে। রাত ১১.২০ মিনিটে গুয়াংজু থেকে ঢাকা পৌছায় বিমানটি এবং আবার ফিরতি ফ্লাইটে যাত্রী ভরে ঢাকা থেকে রাত ১২.৫০ মিনিটে গুয়াংজুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। তখন রাত ৯ টার মত বাজে, আমরা ঘোষণা শুনে নির্ধারিত গেটে এসে দেখলাম এর মধ্যে ৭০-৮০ জন লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে। ওখানে ও অফিসিয়াল পাসপোর্ট আর পরিবার সাথে থাকায় একটু সুবিধা হল। বিমানের কর্তৃপক্ষ প্রথমেই ফ্যামিলিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঢুকানোর জন্য ঘোষণা দিলেন। আমরা সবাই বোর্ডিং সম্পন্ন করলাম। এরপরের ধাপে খুবই কড়া তল্লাশি করা হয় সব যাত্রীদের। এটাই বিমানে ওঠার শেষ তল্লাশি। প্রথমে আমাদের সাথে নেওয়া ব্যাগগুলো (ঈধৎৎুড়হ ষঁমমধমব) স্ক্যানারে দিয়ে একেএকে বেল্ট, হাত ঘড়ি, মানিব্যাগ, কলম সবই ওখানকার রাখা পাত্রে দিলাম স্ক্যান করতে। পরে স্বয়ংক্রিয় স্ক্যানারে আমাদেরকেও স্ক্যান করার পাশাপাশি দ্বায়িত্বরত গার্ড মেটাল ডিটেক্টর সহ ভালোভাবে তল্লাশির কাজ সম্পন্ন করল।
সাধারণত বিমানের ভিতর নেওয়া ব্যাগটিতে সবার নিরাপত্তার জন্য খুব কড়া করে চিরুনি তল্লাশি করা হয়। একটা ব্যাগ ছাড়া আমাদের সব ব্যাগ তল্লাশি শেষ করেছে। ওই ব্যাগে নাকি কাটা চামচ রাখা আছে তেমন টাই স্ক্যানারে দেখতে পেয়েছে তল্লাশিকারীরা। আমি খুব চেষ্টা করলাম সেটাকে খুঁজে বের করতে কিন্তু পেলাম না। পরে ওনারা আবার স্ক্যানারে দিলে ফলাফল একই। আমি বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ। পরে একজন গার্ড আমাকে সাহায্য করল। মনে পড়েছে অনেক আগে অফিসে লাঞ্চ নেওয়ার সময় রাখাছিল কাটা চামচটি। আমাদের কারও খেয়াল হইনি কিন্তু স্ক্যানার সেটাকে খুঁজে বের করায় তল্লাশির বিষয়ে আমরা একটু হলেও বিস্মিত হলাম। গার্ড দেখলাম আমার বোর্ডিং পাশ এবং পাসপোর্ট নিয়ে কি একটু নোট করল। এরপর আমরা ভিতরে গিয়ে বিশালাকৃতির একটা রুমে বসলাম।
অনেকেরই জানা এ ধরনের রুম গুলো কাঁচেরস্বচ্ছ দেয়াল থাকে। ওখানে বসে বিমান ওঠা নামা থেকে শুরু করে পুরো বিমান বন্দরের সবই কার্যকলাপ দেখা যায়। রাতের অন্ধকারে আলোর স্বল্পতার জন্য বিমান বন্দরের তেমন বিমান ওঠানামা আমরা দেখতে পেলাম না। তবে অন্তুর ভিতরে বিমান দেখার জন্য অনেক বেশি এক্সসাইটমেন্ট কাজ করছিল। সে বারবার কাঁচের দেয়ালের ধারে গিয়ে অল্পস্বল্প বিমানের নড়াচড়া দেখে ভীষন খুশি। উন্নত বিমান বন্দর গুলোর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সরাসরি বোর্ডিং শেষ করেই বিমানে ওঠার ব্যবস্থা থাকে। তল্লাশির কাজ তার আগেই ইমিগ্রেশন শেষ করার পরপরই শেষ হয়। তাই বোর্ডিং এর সময় ঝামেলা কম হয়। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র একটু ভিন্ন। হয়ত অনেক বেশি যাত্রী সামাল দেওয়া বা বিমান বন্দরে জায়গার স্বল্পতার কারণে তেমনটি নেই।
আমরা রুমের সামনের সারির দিকে বসলাম যাতে করে আগেভাগে বিমানে উঠতেও সুবিধা হয়। কারন প্রায় ৪০০ জন যাত্রীর চাপ নিয়ে বিমানে ওঠাও যথেষ্ট কষ্টের তাই এই চিন্তা। একটু পরে দেখলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত বিমান গুয়াংজু থেকে ঢাকা পৌঁছে টার্মিনালে ভিড়েছে। অন্তু বিমান দেখেমহা খুশি। সে অপেক্ষার প্রহর গুনছে বিমানে ওঠার। এখনো বেশ দেরি আছে তাই সামনে রাখা টেলিভিশন দেখে, নিজেরা গল্প গুজব করে এবং ফোনে কথা বলে সময় পার করতে লাগলাম। রাত ১২.৫০ এ ফ্লাইট সেই সুবাদে ১২ টার দিকে বিমানে ওঠার জন্য গেট খুলে আমাদের একে একে বিমানে উঠতে বলল। অন্তু এখন আর কারও কথা শুনবে না সে একাকিই সবকিছু করবে। কেননা ইতোমধ্যে মোবাইলে বিভিন্ন কার্টুনের ভিডিও দেখে এরকম অভিজ্ঞতা তার রপ্ত করা শেষ। আমরাও তাকে বাঁধা দিলাম না। বিমানের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা বিমান বালা সব যাত্রীকে তাদের বোর্ডিং পাশ দেখে কোন পাশ দিয়ে গেলে তার আসন খুঁজে পেতে সুবিধা হবে সে ব্যাপারে সাহায্য করছে। আমরাও ওনার কথামত গিয়েআমাদের জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসলাম। অন্তু আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় কিভাবে সিট বেল্ট পরতে হবে, কিভাবে সামনের আসনের সাথে সেট করা টিভি স্ক্রিনটা অন করতে হবে, কোথায় ব্যাগ রাখতে হবে নানান কিছু। আমি ওর এসব অভিজ্ঞতা দেখে অবাকই হলাম যেটা আমাকেও হার মানায়।
সাধারণত বিমান আকাশে ওড়ার আগে প্রস্তুতি স্বরূপ বেশ কিছুক্ষণ ওয়ার্ম-আপ করে। সেই উদ্দেশ্যে আমাদের বিমানটা যখনই হালকা একটু দোল দিয়ে তার উড়ার জন্য নির্ধারিত রানওয়ের দিকে যেতে লাগল সাথে সাথে কিছু ঘটনাও আমাদের বেশ মজা দিল। যেমন একজন ফোনে পরিবারের সাথে কথা বলতে বলতে বলে উঠল ‘আমাদের বিমান ছেড়ে দিছে, এখন আকাশে উড়ছে’। একজন ইমোতে ভিডিও কল করে বিমানের ভিতরের সবকিছু দেখাচ্ছে আর বলছে ‘বিমান এখন বিশাল জোরে আকাশ দিয়ে চলছে’। অনেকের মত আমরাও ওদের কথা শুনে হেসে কুটি কুটি হচ্ছিলাম এবং বুঝলাম প্রথম বিমানে ওঠার অভিজ্ঞতা তাই নিজেদের আবেগকে থামিয়ে রাখতে পারছে না।
বিমান চালক সব যাত্রীর সামনের আসনের পিছনে সেট করে রাখা স্ক্রিনে বিমানের জরুরী অবতরন, কোন সমস্যা হলে কি করনীয় এসব সতর্কতাম‚লক একটা ভিডিও দেখালেন।বিমান ওয়ার্ম-আপ শুরুর আগে থেকে চালক সব যাত্রীদের নিরপত্তার জন্য সিট বেল্ট বাঁধা এবং মোবাইল ফোন সহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র বন্ধ/ফ্লাইট মুডে রাখার ঘোষণা দিলেন। কেননা ওড়ার আগ মুহ‚র্ত থেকে সর্বক্ষণ চালকের কন্ট্রোল রুমের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রক্ষা করা লাগে। আর এই যোগাযোগে যাহাতে কোন বিঘ্ন না হয় সেজন্যই যাত্রীদের মোবাইল, ল্যাপটপ সহ সব ধরনের নেটওয়ার্কিং যন্ত্র বন্ধ/ফ্লাইট মুডে রাখতে বলা হয়। অন্তুর এগুলোও আগে থেকে জানা তাই সে আমাকে বারবার বলছে মোবাইল বন্ধ রাখার জন্য। আমরা সহ অনেকেই প্রথম ঘোষণাতেই মোবাইল সুইচ অফ করে সিট বেল্ট আটকে বসে রইলাম। কিন্তু অনেকেই ছিল কে শোনে কার কথা। বিমান বালারা এসে বারবার নিষেধ করার সত্ত্বেও কিছু দেশী মানুষ মোবাইলে কথা বলেই চলছে। একজনকে কোনভাবেই মোবাইলে কথা বলা থামানো যাচ্ছেনা। সিনিয়র কেবিন ক্রুএসেও নিষেধ করায় কাজ হলনা। এরপর পাশের কয়েকজন যাত্রী খুবই উচ্চস্বরে তাকে বকা দেওয়ায় মোবাইল রাখতে বাধ্য হয়। আমরা বাঙালিরা কেউ কেউ একটু বেশিই এরকম সেটা যখন অন্য দেশের মানুষের সাথে তুলনা করা হয় তখন আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বিমান ফ্লাই করার আগে আমরা লক্ষ্য করেছিলাম সব বিমান বালারা স্ক্রিনে ভিডিও চলার সাথে তাল মিলিয়ে অভিনয়ের ভঙ্গিমায় কোথায় বিমানের জরুরী অবতরনের দরজা, জরুরী মুহ‚র্তে কিভাবে স্বয়ংক্রিয় ভাবে যাত্রীর মাথার উপর থেকে নেমে আসা অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করতে হয়, জরুরী ভিত্তিতে বিমান পানিতে অবতরনের সময় কোথায় লাইফ জ্যাকেট রাখা এবং সেগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সহ আরও অনেক বিষয়ে শিখিয়ে দিল। চ‚ড়ান্ত ওয়ার্ম-আপ শেষে যখন বিমান তীব্র গতিতে রানওয়ে ধরে ছোটার জন্য প্রস্তুত তখন আরেকবার নিশ্চিত ভাবে সিট বেল্ট এবং মোবাইল ফোন বন্ধ কিনা দেখে নেওয়ার জন্য ঘোষণা দিয়েই বিমান ফ্লাই করল। ঠিক ১২.৫০ মিনিটে আমাদের বিমান মাটি ছেড়ে ফ্লাই করল। বিমান ভ্রমন মজার হলেও অনেকের কাছে বেশ খারাপ লাগে। বিশেষ করে যখন ফ্লাই করে তখন অনেকের মাথা ঘোরায়, খারাপ অনুভব করে আবার শুনেছি কারও কারও বড় ধরনের ঝামেলা হয়। আমাদের সেসবের তেমন কিছুমনে হইনি। অন্তু বেশ দক্ষতার সাথে সিটে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে টিভি স্ক্রিনে কার্টুন দেখা শুরু করছে।
ফ্লাই করার প্রথম ২০ মিনিট ধরে বিমান টানা উপরের দিকে ওঠতে থাকে তাই ওই সময়ে বিমানের আলো প্রায় অফ করাই থাকে এবং যাত্রীদের নিজের আসন থেকে ওঠার জন্য না করা হয়। কেননা এসময়ে বিমানের ভিতরে কারও নড়াচড়া বিমানের ভারসাম্যের তারতম্য ঘটে যেটা কোন কোন সময় বিমানের দুর্ঘটনার কারন হয়ে দাঁড়ায়। বিমান যখন মোটামুটি ভুমির সমান্তরাল হয় তখন চালকের ঘোষণা মত সবাই নড়াচড়া করে। আমাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যাত্যয় হইনি। অল্প কিছুক্ষণের ভিতরেই সব আলো জ্বালিয়ে বিমান বালারা প্রথমে ছোট ছোট ট্রলি নিয়ে হাজির হল। সব যাত্রীদের কাছে শুনে শুনে বিভিন্ন ফলের জুস, দুধ, কফি, চা, কোমল পানীয় সহ যে যেটা পছন্দ করে সেটা দিতে লাগল। আমরা আপেল জুস এবং কমলার জুস খেলাম। অন্তু দুধ নিল। সে অপেক্ষা করছে কখন ভারী খাবার দেবে সেটার জন্য। কিছুক্ষণ পরই ভারী খাবারারে প্যাকেট সহ আবারো ট্রলি নিয়ে হাজির হল বিমান বালারা। একটা প্যাকেটে সবার জন্য কমন কিছু ফল, জেলি, বাটার, ব্রেড এবং দই ছিল। আর বাকি দুই রকমের প্যাকেট থেকে প্রত্যেকে একটা করে নিতে হবে। যেগুলোর একটিতে মুরগির মাংস দিয়ে রান্না নুডুলস এবং অন্যটিতে পুডিং এর মত ডিম দিয়ে বানানো একটা অন্যরকম খাবার (নাম বিমান বালা বলেছিল কিন্তু খেয়াল নেই) ছিল। আমরা চারজন ছিলাম তাই দুই রকমের দুইটা করে প্যাকেট নিলাম। খাবারে গন্ধ থাকায় ওরা কেউ খেতে পারবে না সেটা আমি নিশ্চিত ছিলাম। চীনে আসা যাওয়া মিলিয়ে বেশ কয়েকবার বিমান ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে আমার যার ১৫ টাই এই সাউদার্ন এয়ারলাইন্সে। তাই সাউদার্নের খাবার সম্পর্কে আমার ভালো অভিজ্ঞতা আছে। যেটা প্রথম প্রথম যেকোন বাঙালীর পক্ষে গলার নিচে নামানোটা একটু কঠিনই হয়। আমার ক্ষেত্রেও প্রথমে তেমনটা হলেও পরে মানিয়ে গেছে।(চলবে)
লেখকঃ গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।