নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের রাজারবাগান এলাকার বেষ্ট লুক প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আশরাফুল আলম সবুজ জানান, আমি ইছা আমিনের কাছে আনুমানিক ১২ লক্ষ টাকা পাবো। দিবো দিবো করে কয়েক মাস পার করে। এখন বলছে, আমি আর টাকা পাবোনা। এবিষয়ে আমি দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বরারব ও সাতক্ষীরা ডিবি অফিসে অভিযোগ দিয়েছি। কয়েক বছর আগে সাতক্ষীরার স্বনামধন্য দোস্তি টেইলার্স এর মালিক দুলু চাচার মাধ্যমে ইছা আমিনের সাথে আমার পরিচয় হয়। তখন ইতালি থেকে ইছা আমিন আমাকে ফোন দিয়ে সাতক্ষীরার পারুলিয়া বাজারে সেট মসজিদ মার্কেটে স্বপ্নবাজার শপিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ইনটোরিও ডিজাইনের কাজ করানোর কথা বলে। ইনটোরিও ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন করতে সাতজন সাপ্লায়ার প্রয়োজন হয়। সাতজন সাপ্লায়ার সাত ধরনের কাজ পরিচালনা করে। বোর্ড মিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, গ্লাস মিস্ত্রী, সাইনবোর্ড মিস্ত্রী, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী সেনেটারী। এসব শ্রমিকদের কাজ বুঝে নিতেন ইচ্ছা আমিনের ছেলে স্বপ্ন বাজার শপিং সেন্টারের প্রো: মোঃ হাসিব হোসেন। কাজের শুরুতে আমি মালামাল কিনতে ২ লক্ষ টাকা চাইলে আমাকে ১ লক্ষ টাকা পাঠালে আমি আরও ১ লক্ষ টাকার কথা বললে কয়েক দিন পর পাঠিয়ে দিবো বলেন। এভাবে কাজ চলাকালীন সময়ে ইছা আমিন ও তার ছেলে হাসিব আমার কাজের প্রশংসা করে ইতালি যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। কত টাকা খরচ হবে এবং কতদিন সময় লাগবে জানতে চাইলে হাসিব ও ইছা আমিন বলেন, আপনি এখন আমাদের নিজের লোক আপনার জন্য ১২ লক্ষ টাকা, সময় লাগবে ১বছর। তখন আমি বলি পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো। সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই ইছা আমিনের বাল্য বন্ধু ইমতিয়াজ আহমেদ পিয়াল ও বেষ্ট লুক প্রতিষ্ঠানের আরেক জন মালিক ইমাম গ্লাসের মালিকের ছোট ছেলে মোঃ আবু জরের মাধ্যমে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। তখন পিয়াল ও আবুজর আমাকে ইতালি যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তখন আমি ইছা আমিন ও তার ছেলে হাসিবের কাছে জানতে চাই টাকা কিভাবে পরিশোধ করতে হবে। তখন তারা আমাকে বলে প্রথমে (৪ লক্ষ) টাকা দিতে হবে। তখন আমি বলি এত টাকা আমার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব না। তখন হাসিব আমাকে বলে আপনি যা পারেন দেন। বাকি টাকা স্বপ্ন বাজার শপিং সেন্টারের কাজের বিল থেকে সমন্নয় করে নিবো। তখন আমি আমার ব্যবসায়িক পার্টনার আবুজর এবং ইচ্ছা আমিনের বন্ধু পিয়ালকে সাথে নিয়ে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ইছা আমিনের ছেলে হাসিবকে দেই। তখন সেখানে উপস্থিত ছিল রং মিস্ত্রী আলম ও ইসমাইল, বোর্ড মিস্ত্রী আরিফ, হাফিজ, নাসিরসহ আরো অনেকে। ইতালি যাওয়ার জন্য টাকা দেয়ার পর থেকে স্বপ্নবাজার শপিং সেন্টারের কাজের ডিজাইন পরিবর্তন হতে থাকে। কাজের পরিধিও বাড়াতে থাকে। একপর্যায়ে কাজের মালামাল ফুরিয়ে গেলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আমি ইছা আমিনের কাছ মালামাল ক্রয় করার জন্য টাকা চাই। তখন ইছা আমিন বলে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি ইতালি থেকে ১লক্ষ টাকার বেশি দেশে পাঠাতে পারছেন না। তখন আমি একাধিক সমিতির থেকে লোন নিয়ে (টিএম এস এস ও ব্যুরো বাংলাদেশ) কাজ চালিয়ে যায়। মাস দুয়েক পর মালামাল আবার ফুরিয়ে গেলে আবারও কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আবার ইছা আমিনের কাছে মালামাল ক্রয়ের জন্য টাকা চাই। তখন ইছা আমিন আমাকে ১লক্ষ টাকা পাঠায় ঐ টাকার সাথে আমার ব্যক্তিগত আরো টাকা যোগ করে কাজ চালায়। হঠাৎ মার্কেট মালিক মোঃ নূর হোসেন তার মার্কেটে এসে আমাকেসহ আমার শ্রমিকদের বাহিরে বের করে দিয়ে শপিং সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কেন তালা ঝুলিয়েছে জানতে চাইলে মার্কেট মালিক নূর হোসেন জানান, প্রতি মাসের ভাড়া প্রতি মাসে পরিশোধ করার কথা থাকলেও ইছা আমিন তা করেনি। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলে এক মাসের ভাড়া পরিশোধ করতো। ফোনে যোগাযোগ করলে ইছা আমিন ফোন রিসিভ করে না। এভাবে ১ বছরের ভাড়ার টাকা বাকি তাই তিনি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তখন ইছা আমিন আমাকে ফোন করে বলে আপনি ইতালি যাওয়ার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে নিয়ে কাজ চালিয়ে নিন। ঘটনার এক থেকে দেড় মাস পর ইছা আমিন বাংলাদেশে আসে। দেশে আসার কয়েক দিন পর ইছা আমিনের হাতে ব্যান্ডেস দেখে কিভাবে হলো জানতে চাইলে ইছা আমিন জানান, প্রতিবেশীদের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত গোলোযোগে তার হাত ভেঙে গেছে। এখন সেই জমিতে প্রাচির দিতে না পারলে জামিটা হাত ছাড়া হয়ে যাবে তখন আমার কাছে আবার ইতালি যাওয়ার টাকা থেকে আরও ১ লক্ষ টাকা চান। আমি তখন ইছা আমিনের কাছে জানতে চায় ইতালি যাওয়ার কাজের অগ্রগতি কতদূর। তখন ইছা আমিন আমাকে তার ফোন থেকে বিভিন্ন ধরনের অফিসিয়াল কাগজপত্র দেখিয়ে বলে আপনার কাজ চলমান। তখন আমি আবার ১ লক্ষ ইছা আমিন কে প্রদান করি। তার বেশ কয়েক দিন পর ইছা আমিন আবার ইতালি চলে যায়। তার কয়েক দিন পর আমি জানতে পারি আমার কয়েক জন শ্রমিক রং মিস্ত্রী ইসমাইল ও আলম, বোর্ড মিস্ত্রী আরিফ ও হাফিজ কে ইতালি নিয়ে যাওয়ার চুক্তি করে তিনি দেশ ত্যাগ করে এবং এসব কথা গোপন রাখতে বলেন। ইতালি গিয়ে ইছা আমিন ইসমাইল, আলম, হাফিজ ও আরিফ কে ফোন করে তার ছেলে হাসিবের কাছে দিতে বলে। টাকা হাসিবের কাছে দেওয়ার আগে শ্রমিকরা আমাকে ঘটনা বর্ণনা করে তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি কারো কাছে ২ লক্ষ কারো কাছে ৩ লক্ষ করে টাকা চেয়েছে। তখন আমি শ্রমিকদের বলি আমি নিজে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছি আমার ইতালি যাওয়ার জন্য যে সময় তিনি নিয়েছে সে সময় এক বছর আগে পার হয়ে গেছে এখনো আমাকে নিয়ে যেতে পারেনি। এভাবে ইছা আমিন কে টাকা না দেয়াই ভালো তখন তারা ইতালি না যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। কিছু দিন পর হাসিব তাদেরকে বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে। ইছা আমিন ফোন করে শ্রমিকদের বলে এখন ২/৩ লক্ষ করে টাকা দিতে এবং ইতালি গিয়ে কাজ করে টাকা পরিশোধ করার সুযোগ করে দিবেন। আমাকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কোন আলামত তারা দেখতে না পেয়ে সাফ জানিয়ে দেয় তাদের পরিবারের সদস্যরা রাজি না। এদিকে আমাকে না নিয়ে গিয়ে আমার শ্রমিকদের নিকট টাকা চাই এবং ঘটনা গোপন রাখতে বললে আমার ইছা আমিন ও তার ছেলে হাসিবের প্রতি সন্দেহ হয়। তখন শপিং সেন্টারের কাজ ৭০% শেষ। মালামাল ফুরিয়ে গেলে আবার ইছা আমিন কে মালামাল ক্রয়ের টাকার কথা এবং ইতালি যাওয়ার কাগজপত্রের কাজ কতদূর পর্যন্ত হলো সে বিষয়ে জানতে চাইলে আপনার কাগজপত্রের জন্য আমার এখানে অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আপনি ইতালি যাওয়ার টাকা থেকে শপিং সেন্টারের কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। আমি শপিং সেন্টার উদ্বোধন করতে বাংলাদেশে আসবো তখন আমার সাথে আপনাকে ইতালি নিয়ে আসবো। আমি তখন সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত রাজার বাগান এলাকায় আমার শেষ সম্বল পৈতৃক বসবাসরত একশতক জমিসহ বাড়িটি আমার আরেক শরিকের কাছে বিক্রি করে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে মালামাল ক্রয় করে তার শপিং সেন্টারের কাজ করতে থাকি। কয়েক দিন পর ইছা আমিন আমাকে বলে আপনার পাসপোর্ট রেডি করে তার (ছেলে) হাসিবের কাছে জমা দেন আপনার ইতালি আসার আগে ভারত, নেপাল ও থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করতে হবে। এত দেশে কেন আমাকে যেতে হবে। এসব দেশে ভ্রমনের খরচ কে বহন করবে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলে ঐ ১২লক্ষ টাকার মধ্যে এসব খরচ। ইতালি এখন সরকারি ভাবে শ্রমিক নেয়া বন্ধ তাই দ্রুত আপনাকে ইতালি আসতে হলে ট্্ুযরিষ্ট ভিসায় ইতালি আসতে হবে। সেই জন্য এসব দেশে ভ্রমণ করতে হবে। শপিং সেন্টারে কাজ শেষ করে ইছা আমিন কে জানায় এবং জানতে চাই তিনি কবে বাংলাদেশে আসবেন। তখন ইছা আমিন বলে আপনার ইতালি আসার কাগজপত্র রেডি হতে এখনো সময় লাগবে আমি দেশে আসার আগে আপনার কাগজপত্রের কাজ শেষ করতে হবে না হলে অনেক দেরি হবে। আপনি আমার ছেলে হাসিব কে দিয়ে শপিং সেন্টার উদ্বোধন করে তিনটি দেশে ভ্রমণ করেন। আমি আপনার কাগজপত্র রেডি করে দেশে আসবো, আমার সাথে ইতালি আপনাকে নিয়ে আসবো। তখন আমার সাপ্লায়ারদের নিয়ে আমি ইছা আমিনের ছেলে হাসিবকে সকল কাজ বুঝিয়ে দিয়ে শপিং সেন্টারের উদ্বোধনের কাজ শেষ করি। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর নেপাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা থেকে ইছা আমিনের ছেলে হাসিব ও স্বপ্নবাজার শপিং সেন্টারের একজন কর্মচারী মুন্না আমাকে সাথে নিয়ে ঢাকা যায়। মিরপুরে আমার আত্মীয়োর বাসায় দুই অবস্থান করি। পরদিন ইছা আমিনের ছেলে হাসিব আমাকে নিয়ে উত্তর বাড্ডা ট্রপিকাল মোল্লা টাওয়ার স্বপ্ন ট্রাভেলস লি: এ নিয়ে যায়। সেখান থেকে নেপাল যাওয়ার বিমান টিকেট সংগ্রহ করে দেয়। ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারী আমি ঢাকা থেকে নেপাল যায়। নেপালে অবস্থান কালে হঠাৎ এক রাতে দেখি ইছা আমিন হোয়াটএপস্ থেকে সমস্ত ডকুমেন্ট ডিলেট করে দিয়েছে। আমি ডকুমেন্ট ডিলেটের কারন জানতে চাইলে ইছা আমিন আমাকে বলে ইতালিয়ান প্রশাসন ধরতে পারলে আমার সমস্যা হবে তাই ডিলেট করেছি। ৭ দিন পর নেপাল থেকে দেশে ফিরে আসি। দেশে ফেরার বেশ কিছুদিন পর ইছা আমিনের ছেলেও ডকুমেন্ট ডিলেট করে দেয়। কুরবানীর ঈদের আগে বাংলাদেশে এসে ইছা আমিন ও তার ছেলে হাসিব মিষ্টি নিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের রাজারবাগ এলাকার আমার কারখানায় এসে বললেন ইতালি যাওয়ার জন্য মানুষিক ভাবে প্রস্তুত হন। ঈদের পর আপনাকে নিয়ে ইতালি চলে যাবো। তখন আমি শপিং সেন্টারের কাজের সমস্ত বিল ২২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা সাপ্লায়ারদের সামনে উপস্থাপন করি। তখন তিনি বলেন, সব ঠিক আছে আপনি তো আমার ছেলে হাসিবকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। হঠাৎ তার ছেলে হাসিবের মাধ্যমে জানতে পারি আমাকে না জানিয়ে ইছা আমিন ইতালি চলে গেছে। তখন আমি ইছা আমিন কে ফোন দিলে তিনি বলেন, আপনার থাইল্যান্ড ও ভারত ভ্রমনের পর আসতে হবে। কয়েক দিন পর থাইল্যান্ডে ভ্রমনে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করলে ইছা আমিন ও তার ছেলে হাসিব দিনের পর দিন আমাকে বিভিন্ন অজুহাত দিতে থাকে। এভাবে দীর্ঘদিন হয়রানির পর আমি আইনের আশ্রয় নেয়। এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর মোঃ হাসিব হোসেনের মামা হামিদুল ইসলাম দেবহাটা রিপোর্টার্স ক্লাবে মনগড়া ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি কাজের মান ও নিম্ন মানের মালামাল ব্যবহারের কথা উল্লেখ করছেন। প্রকৃতপক্ষে, কাজের সময় ব্যবহৃত সকল মালামাল ইসা আমিনের ছেলে মোঃ হাসিব হোসেন বুঝে নিয়েছেন এবং কাজ সম্পর্কে ইতোপূর্বে কোন প্রকার অভিযোগ করেননি। বর্তমানে আমার পাওনা ১২ লক্ষ টাকা না দিয়ে উল্টো আমাকে হয়রানী করে যাচ্ছেন। আমি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি।