১২ই এপ্রিল । আজ তার জন্মদিন। একশো উনিশটি বসন্ত পার করে দিল সে। কিন্তু কই, কেউ তো আজ একটাও কেক কাটলো না। মোমবাতিতে ফুঁ দিয়ে গেয়ে উঠলো না - হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...
অথচ সে এখন সারা বিশ্বের সাহারা। অতিমারি করোনাকে শেষ করার অস্ত্র তার হাতেই। তার নাম বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যালস। তার উৎপাদিত হাইড্রোক্সিল ক্লোরোকুইন এই করোনা যুদ্ধে মানুষের মিসাইল কিংবা হাইড্রোজেন বোমা।
একশো উনিশ বছর আগে এক বাঙালি অবিভক্ত বাংলার মানুষকে বাঁচাতে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক ক্লোরোকুইন বানিয়েছিলেন। সেদিনের সেই ফুলু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় কল্পনা করেননি একশো বছর পরে তাঁর মস্তিস্কপ্রসূত, তাঁর সংস্থা বেঙ্গল কেমিক্যাল এর তার এই হাইড্রোক্সিল ক্লোরোকুইন মরণ রোগ করোনার সামনে দৈত্যের মতো দাঁড়াবে?
মানবিক কারণে ভারত সরকার ক্লোরোকুইন রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ক্লোরোকুইন এর প্রথম কনসাইনমেন্ট আমেরিকায় পৌঁছে গেছে শনিবার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টেলিফোন করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ভাবে ক্লোরোকুইন পৌঁছে যাবে বাংলাদেশে, ইতালিতে, ব্রিটেনে। কিন্তু কেউ কি একবার স্মরণ করবেন ফুলু কে !
তাঁর হাতে তৈরি বেঙ্গল কেমিক্যালস এন্ড ফার্মাসিউটিক্যালসের জন্মদিনটাই যে ভুলে গেল বাঙালি ! ফিনাইল, কারমজাইম, ন্যাপথলিন, একোয়া টাইকোটিস - সব এ তো ফুলু আর বেঙ্গল কেমিক্যাল এর সৃষ্টি। ১৮৯২ সালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র বাঙালি তরুণদের ব্যবসায় মন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কলকাতার আপার সার্কুলার রোডে খোলেন বেঙ্গল কেমিক্যাল। এরপর তা লিমিটেড কোম্পানি হয়ে বেঙ্গল কেমিক্যালস আন্ড ফার্মাসিউটিক্যালস হয়ে উঠে আসে ই এম বাইপাসের ধারে, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কাছে। বাসস্টপটি আজও বেঙ্গল কেমিক্যাল নামেই পরিচিত। একটা মেট্রো স্টেশন ও হচ্ছে এই নামে। আজও বেঙ্গল কেমিক্যাল এর মেরুন ফটকে ঈষৎ হলুদ অক্ষরে বাংলায় লেখা - বেঙ্গল কেমিক্যালস এন্ড ফার্মাসিউটিক্যালস। বাংলাদেশ তাদের প্রাণের প্রিয় বাংলা ভাষাকে যে ভাবে মনে রেখেছে, বেঙ্গল কেমিক্যালস বোধহয় তারই অনুসারি। কিন্তু ব্যাস, ওই পর্যন্তই। ১৯০১ সালের ১২ এপ্রিল বেঙ্গল কেমিক্যালস এন্ড ফার্মাসিউটিক্যালস এর নেবো কলেবরে যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরাই আমাদের হাতে নয়া বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। আর আমরা কিনা একবারও বলে উঠলাম না, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...
সুত্র: মানব জমিন