আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ ১৬ এপ্রিল এক আদেশে “বাংলাদেশকে সংক্রমনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছেন। ঘোষণায় করোনা ভাইরাসের একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে পরষ্পর হতে পরষ্পরেকে নির্দিষ্ট দুরত্বে অবস্থান করাকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে তার কোন চিকিৎসা নেই। কিন্তু আমরা যদি ঘর থেকে বের না হই। কারো সাথে মেলামেশা না করি। ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকি তাহলেই কেবলমাত্র করোনা ভাইরাস দ্বারা আমরা সংক্রমিত হবোনা। সংক্রমিত এলাকার অর্থাৎ বাংলাদেশের জনগনকে ৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে তা মানতে বলা হয়েছে। এর ব্যতয় ঘটলে সংশ্লিষ্টরা অর্থাৎ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী দেশের বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করবেন।
দফা তিনটি হলো ১. করোনা ভাইরাসের সংক্রমন প্রশমনে জনগনকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতীব জরুরী প্রয়োজন ব্যাতীত ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। ২. এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হবে। ৩. সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবেনা।
এ তিনদফা অমান্যকারীগনের বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রন ও নির্মূল আইন) ২০১৮ প্রয়োগ করা হবে। এই আইনের প্রয়োগ করবেন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষে সহায়তা নিয়ে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো প্রয়োগ করার ক্ষমতা সংরক্ষন করবে।
অনেক দেরীতে হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এখন স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন চাইলেই জনগনকে ঘরে অবরুদ্ধ রাখতে সক্ষম হবেন। এ ক্ষেত্রে শুধু আইনের প্রয়োগ করলেই হবে। লাঠিপেটা করলে বিতর্ক তৈরী হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ হলে মানুষ বাহবা দিবে। জনগনকে ঘরের মধ্যে অন্তত এক থেকে দেড় মাস আটকাতে পারলেই বাংলাদেশ বড় ধরনের প্রানহানি থেকে রেহাই পেতে পারে। এই আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সকল জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি রুগী শনাক্ত হওযার সাথে সাথে মেলামেশাকারী সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করে তাদেরকে পৃথক করে ফেলতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন পরীক্ষাগার, কিট ও সংশ্লিষ্ট ইক্যুইপমেন্ট।
বেশ দেরী হয়ে গেছে। তারপরও যদি সরকার জরুরী ভিত্তিতে এসব ব্যবস্থা নিতে পারে তাহলে কিছুটা রেহাই পাওয়ার আশা করা যেতে পারে। অন্যথা দেশের অবস্থা ইটালী, আমেরিকা ও বৃটেনের চেয়েও খারাপ হয়ে যেতে পারে।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত ভারতের ২৪ পরগনা জেলার সীমান্ত জুড়ে। সংক্রমন ব্যাধি সীমান্ত মানে না। ওপার থেকে পাসপোর্টধারী, পাসপোর্ট ছাড়া অন্তত ২০হাজার মানুষ সাতক্ষীরা জেলাতে ঢুকে পড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক কিম্বা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেনা এসব মানুষ।
ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে ২৪ পরগোনা জেলাকে করেনাভাইরাসের হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করেছে। কোলকাতার নবান্ন কার্যালয় ঘিরে এখন মমতা ব্যানার্জীর নির্ঘুম কর্মযজ্ঞ চলছে।
তাদের আছে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ইকুইপমেন্টের দিক দিয়েও তারা অনেক এগিয়ে। আর তারা গত ৩ মাস বসেছিল না। স্বাস্থ্যকর্মীদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছে তারা। এরপরও তাদের অবস্থা নাস্তানাবুদ। তাহলে আমাদের অবস্থা কি হতে পারে তা আমাদেরকে ভাবতে হবে।
আমাদের একমাত্র উপায় হচ্ছে সরকারের নির্দেশনা মেনে গৃহবন্দি থাকা। আমাদের ডাক্তার নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। তাদের নেই প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট। নেই উন্নত মাস্ক, পিপিই, ল্যাব। আমাদের সাতক্ষীরার কথাই বলি। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে শুধু করোনা রোগীর জন্য খালী করে রাখা হয়েছে। এখানে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার নার্সদের ইকুইপমেন্ট এর বিষয়তো দেশজুড়ে প্রশ্নবিদ্ধ। তাহলে ২২লক্ষ জনসংখ্যার সাতক্ষীরা জেলায় যদি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে দাড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার আগে আমাদেরকে গৃহবন্দি হয়ে পড়া অন্তত দু’মাসের জন্য। তাহলেই কেবল আমরা ভাল কিছুর আশা করতে পারি। আমাদের সাতক্ষীরার হাটবাজার, দোকানপাট, রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় অবধারিত বিপদকে আমরা আলিঙ্গন করতে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচলকের জারীকৃত আদেশই আমাদেরকে বাচাতে পারে। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রন ও নির্মূল) আইন ২০১৮ প্রয়োগ করলে কেউ বিতর্ক তুলতে পারবেনা। এবং জনগনও আইন মানতে বাধ্য। এখন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং স্বাস্থ্য বিভাগ কতটুকু দায়িত্ব পালন করেন সেটাই দেখার বিষয়। ডাক্তার নার্সদের পূর্ণ সুরক্ষা দিতে হবে। জেনে শুনে তাদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া একটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হতে পারেনা। আমরা আমজনতা অপেক্ষায় রইলাম।