মামুন বিল্লাহ (সাতক্ষীরা) কালিগঞ্জ: সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তাগাদা দিলেও তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জমা না দিয়ে সরকারি বিধি-বিধান না মেনে কালিগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন বলফিল্ড মোড়ে অবস্থিত ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল দীর্ঘদিন থেকে আইনের তোয়াক্কা না করে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে উন্নত মানের চিকিৎসা দেওয়া হয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে। এই হাসপাতালে রয়েছে সকল রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আধুনিক ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরকম মানুষ ভুলানো চটকদার প্রচারণা দিয়ে জনসাধারণকে প্রতারিত করছে কালিগঞ্জ বেসরকারি ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১০ শয্যার অনুমোদনপ্রাপ্ত এই হাসপাতালে সরকারি বিধি মোতাবেক দুইজন নিয়মিত চিকিৎসক, নিয়মিত সার্জন থাকার কথা থাকলেও ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালের তা নেই। যার কারণে ওন-কলে চিকিৎসক ডেকে নিয়ে এসে অপারেশন করা হচ্ছে। এর কারণে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে অপরদিকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় এবং অপারেশন পরবর্তী প্রতিরক্ষামূলক চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। কয়েকদিন আগে ভুক্তভোগী মোঃ ফজলুর রহমান উপজেলার গড়ুইমহল গ্রামের ক’জনের নিকট তিনটি সরকারি দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন—উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের কাছে। অভিযোগটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং প্রশাসন তৎপরতা শুরু করেছে। তাছাড়া গত বছর প্রসব বেদনায় ক্লিনিকে ভর্তির ৩ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসক তানিয়ার ভুল অপারেশনে সংগীতা মন্ডল নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। জনরোষ থেকে নিজেকে বাঁচতে চিকিৎসকসহ ক্লিনিক মালিক ও নার্সরা পাঁচিল টপকে পালিয়ে শেষরক্ষা হয়েছে। ঘটনাটি সোমবার ২৫ নভেম্বর ২৪ বেলা পৌনে ৩ টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ডাঃ হযরত আলী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘটেছে।
এইরকম মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে মাঝে মাঝেই। তারপরও ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চুটিয়ে চিকিৎসা বাণিজ্য করে যাচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার কর্তৃক ১০ শয্যার অনুমোদন পাওয়া ডাঃ হযরত আলীর ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। লাইসেন্স নবায়ন নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স নেই। হাসপাতালে ব্যবহার করা অধিকাংশ যন্ত্রপাতির অনুমোদন নেই। লাইসেন্স নবায়ন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই পরিচালনা করা হচ্ছে। হাসপাতাল স্থাপনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম নীতি কিছুই মানা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত তদারকি না করায় অনিয়ম করে অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল। এই হাসপাতালে এক্সরে করা হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু মানা হচ্ছে না সরকারি নিয়ম। এক্সরে রুম থেকে যে রেডিয়েশনটা আসে এটা নিয়ে আশপাশের বিপুক সংখ্যক মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে। যে কক্ষে এক্সরে ও সিটি স্ক্যান করা হবে তার দরজার কত ইঞ্চি পুরো দেওয়াল থাকতে হবে, শিশা বা লেদ দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে, সেটার ঘনত্ব কেমন হবে তা পরমাণু শক্তি কমিশন তা নির্ধারণ করে দেয়। কমিশনের মান ও সনদ ব্যতিরেকে রেডিয়েশন কার্যক্রম চালালে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। সরকারি নিয়ম না মেনে সাধারণ কক্ষেই অবাধে করা হচ্ছে এক্সরে। তাদের পরিবেশ সার্টিফিকেট নেই, নিয়ম অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সরকারি কোন বিধি-বিধান মানছে না ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল হাসপাতাল কতৃপক্ষ। সরকারি বিধি অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক থাকার কথা কিন্তু তা নেই। রোগী এলে ভর্তি করে অন কলে চিকিৎসকে ডেকে নিয়ে এসে করা হচ্ছে বিভিন্ন অপারেশন। যা একেবারেই অবৈধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। হাসপাতালে অনেক চিকিৎসকের নাম সম্বলিত চার্ট ঝুলানো হয়েছে। যার অধিকাংশ চিকিৎসক ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালে বসেন না বা সেবা দেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বনামধন্য চিকিৎসকদের নাম ব্যবহার করে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লাইসেন্স প্রবেশ পথে টানানো সহ ১০ দফা সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লাইসেন্স এর কপি প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশের পথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই প্রদর্শন করার নিয়ম রয়েছে। সকল বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী থাকতে হবে তবে অবশ্যই তার ছবি ও মোবাইল নাম্বার দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু এই নিয়মগুলো কিছুই মানা হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত সকল চিকিৎসক চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রীর সনদ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের ফটোকপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। হাসপাতাল ক্লিনিকে যে সকল ধরনের অপারেশন বা প্রসিডিউরের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে। ১০ শয্যার অনুমোদন পাওয়া ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালে নিয়মমাফিক দুইজন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা, সেটাও নেই। তবে এসবের কিছুই তোয়াক্কা না করে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম করে অবৈধভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করছেন ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল কতৃপক্ষ। ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালের পরিবেশ সার্টিফিকেট নেই, নিয়ম অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও নেই। একটি সূত্র জানিয়েছে, ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল কতৃপক্ষ দীর্ঘদিন আগে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে যে সকল চিকিৎসক, নার্স সহ কর্মকর্তা কর্মচারীদের নামের তালিকা জমা দিয়েছেন তা ভুয়া। স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দেওয়া অধিকাংশ চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারী এখানে কাজ করেন না। শুধু কাগজে-কলমে তাদের রাখা হয়েছে নিয়ম রক্ষার জন্য, কাগজপত্র ঠিক রাখার জন্য। চোখের সামনে সরকারি নিয়ম না মেনে কাগজপত্র ছাড়াই জমজমাট চিকিৎসা সেবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল কতৃপক্ষ। অদৃশ্য কারণে এই হাসপাতাল পরিদর্শন ও অডিট করা হয় না বলে জানা গেছে। সঠিকভাবে অডিট করলে এবং সকল বিষয়ে তদন্ত করলেই ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম বেরিয়ে আসবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল কতৃপক্ষ দাবি করেছেন, তাদের সকল কাগজপত্র রয়েছে এবং যেগুলো বাকি আছে তা দ্রুতই জমা দেওয়া হবে। ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দাবি করে বলেন, লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদনসহ আমাদের সকল কাগজপত্র রয়েছে এবং যেগুলো বাকি আছে তা দ্রুতই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দেওয়া হবে। তবে রোগী মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে অপরগত প্রকাশ করেন। কালিগঞ্জ উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবির বলেন, এর আগে ডাক্তার হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হসপিটাল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়। কিন্তু তাদের অনেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এখনো জমা দেননি। তিনি আরো বলেন, দৈনিক যশোর বার্তা পত্রিকায় ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালের বিষয়ে সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। দেখে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।রোগী মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম বলেন, ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হসপিটালের তদন্তের জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। আপনার কথা শুনলাম তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।