মীর খায়রুল আলম: অবশেষে অর্থ আত্নসাত ও অনিয়মের অভিযোগে পারুলিয়া আহ্ছানিয়া দাখিল মাদ্রাসার আলোচিত গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক এনামুল কবির বাবুকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত এনামুল কবির বাবু সদর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। মাদ্রাসার অফিসিয়াল প্যাডে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এ আদেশ দেন। যার অনুলিপি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, পারুলিয়া আহছানিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সহ বিভিন্ন জনকে। উক্ত বরখাস্ত আদেশে বলা হয় এনামুল কবির (বাবু) এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তিগণের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৫ নভেম্বর প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত তদন্ত কমিটি তদন্তপূর্বক ১২ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
এছাড়া এনামুল কবির (বাবু) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকুরী বিধিমালা-২০১২ এর অধ্যায়-৩ এর ১২ ধারা অপরাধের দায়ে কেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। তার সন্তোষজনক জবাব ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হলে ২ ডিসেম্বর তারিখে কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করেন। তার জবাব দাখিলের প্রেক্ষিতে ৯ ডিসেম্বর তারিখ মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সভার আহবান করা হয়। উক্ত সভায় ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় সহকারী শিক্ষক এনামুল কবির (বাবু) এর দাখিলকৃত জবাবটি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তার দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা)-এর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকুরী বিধিমালা-২০১২ এর অধ্যায়-৩ এর 'ঘ' এর (১) ধারা মোতাবেক অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়।
এ অবস্থায়, ৯ ডিসেম্বর তারিখের সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) এর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকুরী বিধিমালা-২০১২ এর অধ্যায়-৩ এর ১২ ধারার অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় এনামুল কবির (বাবু) কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত (৫ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ মহাসড়কে মাদ্রাসার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এনামুল কবির বাবুর বহিস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেন। অভিযোগ আছে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সহকারী শিক্ষক এনামুল কবীর ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের ছেলে পরিচয়ে প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার প্রভাব দেখান। শিক্ষক নিয়োগের নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এনটিআরসি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করতেন। টাকা না দিতে পারলে প্রতিষ্ঠান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হত। খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন নিয়ে মাসের পর মাস তাদের হয়রানি করতেন বলে জানা যায়। এমনকি তিনি মাদ্রাসায় বসে মাদক সেবন করতেন বলেও অভিযোগ আছে। বিষয়টি নিয়ে একবার প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষককে ইয়াবা দিয়ে পুলিশি হয়রানি করান। মাদ্রাসা থেকে সরকারি বই বিক্রি, বিভিন্ন উৎস থেকে আসা অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ, চাঁদাবাজি, শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে অশালীন আচরণ কোন কিছুতে থেমে ছিলেন না। গত ৫ আগস্টের পর থেকে প্রতিষ্ঠানে আসছেন না এসে মিথ্যা মেডিকেল রিপোর্ট প্রদান করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে মাদ্রাসায় এসে স্বাক্ষর করেই চলে যেতেন এনামুল।
এমনকি ২০২৩ সালের ৭ মে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কন্ট্রোলরুমে ঢুকে দাখিল পরীক্ষার্থীদের খাতায় কারসাজি করার সময় দেবহাটায় এনামুল কবির বাবু আটক হয়। পরে মোবাইলকোর্টে জরিমানা দিয়ে রেহাই পান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ ছিল না।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান জানান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকুরী বিধিমালা-২০১২ এর অধ্যায়-৩ এর ১২ ধারার অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় এনামুল কবির (বাবু) কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।